Published : Saturday, 30 July, 2022 at 12:00 AM, Update: 30.07.2022 1:31:29 AM
জহির শান্ত:
কুমিল্লায়
দুইদিনে পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে ৫ শিশু। জেলার চৌদ্দগ্রাম ও
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ শুক্রবার ব্রাহ্মণপাড়া
উপজেলার চান্দলা ইউনিয়নে তাইয়েবা নামে এক শিশু পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে।
শিশু তাইয়েবা উপজেলার চান্দলা ইউনিয়নের হুরারপার শানু মাস্টার বাড়ির
আক্তার হোসেনের মেয়ে। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ও বিকালে চৌদ্দগ্রামে তিন
শিশু এবং একইদিন দুপুরে ব্রাহ্মণপাড়ায় পানিতে ডুবে আরো এক শিশু মারা যায়।
শিশুর
স্বজন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণপাড়ায় মারা যাওয়া তাইয়েবা
দুপুরে তার বাবার সাথে ভাত খাওয়ার কিছুসময় পর বাড়ির লোকজনের অগোচরে বাড়ির
পাশের পানিভর্তি ডোবায় ডুবে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে ডোবার জলে
ভাসতে দেখে স্বজনরা। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে
গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই শিশুটির
মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা
ইউনিয়নের সোনাপুর দক্ষিণ পাড়া গ্রামে পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে দুই শিশু।
তারা হচ্ছে সোনাপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে আবদুর রহমান ফাওয়ায়েজ (৮) ও
একই বাড়ির জালালের ছেলে ফাহমিদ (৮)। তারা দুজন সম্পর্কে চাচাতো-জেঠাতো
ভাই। পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা। তিনি বলেন, শিশু ফাহমিদ
ও ফাওয়াজ সম্পর্কে চাচাতো-জেঠাতো ভাই। বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে নেমে
তাদের মৃত্যু হয়েছে। তারা সাতার জানতো না। স্থানীয়রা জানান, দুপুরে গোসলের
কথা বলে ফাওয়ায়েজ ও ফাহমিদ ঘর থেকে বের হয়। কিন্তু অনেকক্ষণ পর্যন্ত তারা
ফিরে না আসায় খোঁজতে থাকে স্বজনরা। একপর্যায়ে বাড়ির পাশের মসজিদের পুকুরের
ঘাটে দুজনের গেঞ্জি এবং প্যান্ট দেখতে পেয়ে পুকুরে নেমে খোঁজ করা হয়।
খোঁজাখুঁজির পর ডুবন্ত অবস্থা দুজনকে উদ্ধার করা হয়। পরে দ্রুত তাদের
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত
ঘোষণা করেন। তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি
শুভরঞ্জন চাকমা।
একই দিন বিকেলে অপর আরেক ঘটনায় উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের মঞ্জুরি খালে ডুবে মারা যায় তানভীর নামে এক শিশু।
নিহত
তানভীরের পিতা বাতিসা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড মেম্বার হেলাল উদ্দিন। বাতিসা
ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি খোরশেদ আলম মানিক জানান, মঞ্জুরি খালের পাশে মাঠে
ফুটবল খেলা দেখতে যায় তানভীর। এসময় খালের পাড়ের মাটি ভেঙ্গে পানিতে পরে যায়
সে। তার উপরে আবার খালের মাটি ভেঙ্গে পড়ে। এসময় তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার
সকাল ১০ টায় দুতিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
অপরদিকে
বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় পানিতে ডুবে তাবাসসুম নামে
চার বছর বয়েসী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের
গোপালনগরে এ ঘটনা ঘটে। শিশু তাবাসসুম পার্শ্ববর্তী বুড়িচং উপজেলার
রামচন্দ্রপুর এলাকার জাকির হোসেনের মেয়ে। সে তার মায়ের সাথে নানার বাড়িতে
বেড়াতে এসেছিল। স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, বাড়ির লোকজনের অগোচরে বাড়ির
পাশের পুকুরের পানিতে ডুবে যায় তাবাসুম। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পুকুরে তাকে
ভাসতে দেখা যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে
গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
দুইদিনে
৫ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বজন ও অভিভাবকদের সতর্ক থাকার
পরামর্শ দিয়েছেন কুমিল্লার বিশিষ্টজন ও শিশুবিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন,
কুমিল্লায় প্রায়ই পানিতে ডুবে কোমলমতি শিশুদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে;
যা খুবই উদ্বেগজনক। এজন্য শিশুর অভিভাবক ও স্বজনদের সতর্ক থাকবে হবে এবং
তাদের দিকে নজর রাখতে হবে। শিশুদেরকে পুকুর ডোবা কিংবা জলাশয়ের পাশে
খেলাধূলা থেকে বিরত রাখতে হবে এবং পুকুরে গোসলে যাওয়ার সময় অভিভাবকদের পাশে
থাকতে হবে।