চট্টগ্রামের
মিরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত
হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও সাতজন। হতাহতরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে দিকে উপজেলার খৈয়াছড়া এলাকায় এ ঘটনা
ঘটে। হতাহতদের সবার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আমান বাজারে।
জানা
গেছে, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে খৈয়াছড়া ঝরনা দেখে মাইক্রোবাসে করে ফিরছিলেন
তাঁরা। মাইক্রোবাসটি উপজেলার বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের কাছে পৌঁছালে ট্রেনের
ধাক্কা লাগে। মাইক্রোবাসটিকে প্রায় এক কিলোমিটার ঠেলে নিয়ে যায় চলন্ত
ট্রেন। এ ঘটনায় মাইক্রোবাসে থাকা ১১ আরোহী নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরও
পাঁচজন। হতাহত ব্যক্তিরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী। তাঁরা ‘আরএনজে কোচিং
সেন্টার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও শিক্ষক। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে
মাইক্রোবাসের চালকও আছেন।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি
জানান, মাইক্রোবাসে ১৮ যাত্রী ছিল। তারা খৈয়াছড়া ঝরনা দেখে ফেরার সময় ঢাকা
থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতীর ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১
যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও ৭ জন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের
অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পূর্ব রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলী
জানান, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ওই লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার
মুখে খৈয়াছড়াগামী একটি পর্যটকবাহী মাইক্রোবাস লাইনে উঠে পড়ে। সংঘর্ষের পর
মাইক্রোবাসটি ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে আটকে যায়। ওই অবস্থায় মাইক্রোবাসটিকে
বেশ খানিকটা পথ ছেঁচড়ে নিয়ে থামে ট্রেন।
রেল কর্মকর্তা আনসার আলী বলেন, ট্রেন আসায় গেটম্যান সাদ্দাম বাঁশ ফেলেছিলেন। কিন্তু মাইক্রোবাসটি বাঁশ ঠেলে ক্রসিংয়ে উঠে পড়ে।
তবে প্রত্যক্ষদর্শী মফিজুল হক জানান, দুর্ঘটনার সময় গেইটম্যান ছিলেন না। তিনি জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে গেছিলেন।
মিরসরাইয়ের
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুর রহমান জানান, হাটহাজারী থেকে
আসা ওই মাইক্রোবাসে ১৮ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে ১১ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
বাকিদের চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
মাইক্রোবাসকে ১ কিলোমিটার ঠেলে নেয় ট্রেনটি:
চট্টগ্রামের
মিরসরাইয়ে লেভেল ক্রসিংয়ে উঠে পড়া পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসটিকে ঠেলে প্রায়
এক কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায় মহানগর ট্রেনটি। শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে বার
তাকিয়া স্টেশনে ঢোকার মুখে খৈয়াছড়া ঝর্ণা ক্রসিংয়ে একটি মাইক্রোবাসে
ট্রেনের ধাক্কায় অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়।
পূর্ব রেলের বিভাগীয় পরিবহন
কর্মকর্তা আনসার আলী বলেন, “ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী
ট্রেনটি লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার মুখে খৈয়াছড়াগামী একটি পর্যটকবাহী
মাইক্রোবাস লাইনে উঠে পড়ে।”
এরপর প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বার তাকিয়া স্টেশনের দিকে মাইক্রোবাসটিকে ঠেলে নিয়ে যায়।
রেল
পুলিশের এসপি মো: হাসান চৌধুরী জানান,মাইক্রোবাসে ১৪ জন ছিলেন। তাদের একজন
অক্ষত আছেন। আহত হয়েছেন দুইজন। চালকসহ বাকি যাত্রীরা মারা গেছেন।
তিনি
বলেন, “মাইক্রোবাসটি নিয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজার থেকে
খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখতে এসেছিলেন যাত্রীরা। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”
তবে
প্রত্যক্ষদর্শী ফরহাদ নামে এক ব্যক্তি আইডি কার্ড দেখে চালকের পরিচয়
জানিয়েছেন। তার নাম মোস্তফা কামাল। তিনি হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডী
এলাকার বাসিন্দা।
দুর্ঘটনার সময় লেভেল ক্রসিংয়ে গেট ফেলা ছিল কি না সে বিষয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
স্থানীয়দের কেউ বলছেন, ক্রসিং এ গেট ফেলা ছিল না। আবার কেউ বলছেন, গেট ফেলা ছিল তবে গেটম্যান ক্রসিংয়ে ছিলেন না।
এ বিষয়ে বার তাকিয়া স্টেশনের মাস্টার শামসুদ্দোহা সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেননি।
রেল
পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওসি মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, “স্থানীয় কয়েকজন
প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, গেটম্যান ঘটনার সময় ক্রসিংয়ে ছিলেন না।”
এর
আগে পূর্ব রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলী বলেছিলেন, “ওই গেইটে
দায়িত্বরত গেইটম্যান সাদ্দাম লোহার বার ফেলেছিল। কিন্তু মাইক্রোবাস চালক
জোর করে রেললাইনে উঠে যাওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।”
রেল টেলিকমিউনিকেশন
কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, বিকেল ৪টা ৪২ মিনিটে মাইক্রোবাসটি সরিয়ে
মহানগর প্রভাতী ট্রেনটি আবার চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।