মাশরাফি
বিন মুর্তজা তিন বছর আগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বসে
খুব আক্ষেপ নিয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশে দলের জন্য খেলা ক্রিকেটারের সংখ্যা
খুবই কম। বেশিরভাগই খেলেন নিজের জায়গা ধরে রাখতে। একান্ত আড্ডায় মাশরাফির
বলা সেই অপ্রিয় সত্য 'ওপেন সিক্রেট' হলেও কেউই সেভাবে প্রকাশ্যে মুখ
খোলেননি। দেরিতে হলেও জাতীয় দল নিয়ে মাশরাফির মতো করে উপলব্ধি করতে পারছেন
টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি২০
সিরিজের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিসিবির এ পরিচালকেরও মনে হয়েছে
ব্যাটারদের বেশিরভাগই 'স্বার্থপর'। তাঁরা নিজের জন্য খেলেন, দলের জন্য নয়।
এই পর্যবেক্ষণ তো ২০১৭ সালেই জাতীয় দলের সাবেক প্রধান কোচ চন্ডিকা
হাথুরুসিংহে দিয়ে গেছেন।
হাথুরুসিংহের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ লিখিত
পর্যবেক্ষণ পাওয়ার পরও খালেদ মাহমুদদের তা উপলব্ধি করতে পাঁচ বছর লাগল কেন?
টি২০-এর মাঠ থেকে 'আগাছা' বহু আগেই তো উপড়ে ফেলতে পারতেন তাঁরা। দেশের
ক্রিকেটের নীতিনির্ধারক হিসেবে সে সুযোগও তো ছিল তাঁদের হাতে।
জিম্বাবুয়ের
বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি২০ সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। শেষ
ম্যাচে স্বাগতিকদের ১৫৬ রানে বেঁধে ফেলার পরও ম্যাচ জিততে না পারা বিস্ময়কর
মনে হ”েছ টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে। বাংলাদেশ দলের একজন ব্যাটারকে দেখেও
কোচিং স্টাফের মনে হয়নি জয়ের জন্য ব্যাট করছেন তাঁরা।
ক্রিকেটারদের খুব
কাছ থেকে দেখা টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ তাই পরোক্ষে অপ্রিয় সত্য বলে
ফেলেছেন, 'এখানে আমাদের জেতাটাই স্বাভাবিক ছিল। হারটা ছিল অস্বাভাবিক। আমরা
জানি যে, ওভারে আমাদের ১০-১২ করে লাগবে। কেউ দেখলাম যে একটাও ছয় মারার
চেষ্টা করছে না। সবাই দুই-এক করে নি”েছ। আমি একটা স্কোর করে নিজের জায়গাটা
ঠিক রাখলাম, এটা কি ওই ধরনের কিছু কিনা, আমি ঠিক জানি না। আপনি যদি ১০০
স্ট্রাইক রেটে খেলেন, তাহলে এখানে রান তাড়া করে জিততে পারবেন না।
একজন-দু'জনকে তো শট খেলতে হবে। ওদের দু'জন ব্যাটারের স্ট্রাইক রেট দেখুন।
এখানে ভিন্ন কিছু করার প্রয়োজন ছিল না। শট বলকে যদি পুল করে ছক্কা মারার
আত্মবিশ্বাস না থাকে, তাহলে তো মুশকিল।'
টি২০ ক্রিকেটে স্ট্রাইক রেট যতই
গুরুত্বপূর্ণ হোক, বাংলাদেশি ব্যাটারদের কাছে তা বরাবরই উপেক্ষিত। রেকর্ড
ঘেঁটে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ম্যাচেই বল এবং রান সমান হলেই খুশি তাঁরা। তাহলে
কি দলের জয়ের চেয়েও এই ক্রিকেটারদের লক্ষ্য থাকে নিজের চাকরি ঠিক রেখে
মাসের বেতন এবং শোভন ম্যাচ ফি দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সমৃদ্ধ করাতে? যদি
তাই না হয়, তাহলে সিনিয়র ক্রিকেটাররা অন্যের দিকে আঙুল তুলবেন কেন?
অনেকবারই
তো কিছু সিনিয়র ক্রিকেটারকে বলতে শোনা গেছে, 'আমি না হয় ১০০ স্ট্রাইক রেটে
খেলি। অন্যরা কী করে। তারাও তো পারে না।' ১৫ বছর জাতীয় দলে খেলার পর যে
ক্রিকেটার এই কথা বলতে পারেন, তাঁর কাছ থেকে দলীয় পারফরম্যান্স আশা করা
দুরাশা। যেমন প্রত্যাশা ছিল মাহমুদউল্লাহর কাছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ
নির্ধারণী শেষ টি২০তে অভিজ্ঞ এ ব্যাটারকে নেওয়া হয়েছিল ম্যাচ জেতাতে।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়া এ
ব্যাটার দলকে উপহার দিয়েছেন ২৭ বলে ২৭ রান। স্ট্রাইক রেট ১০০।
অথচ
ওয়ানডে ক্রিকেটেও প্রতিভাবান ব্যাটাররা এখন আর ১০০ স্ট্রাইক রেটে খেলেন না।
নাজমুল হোসেন শান্তর ৮০ স্ট্রাইক রেট। টপঅর্ডার ব্যাটার এনামুল হক বিজয়
১০৭.৬৯ স্ট্রাইক রেটে থামেন। ৩৩.৩৩ স্ট্রাইক রেটে খেলা নবীন ওপেনার পারভেজ
হোসেন ইমনকে না হয় অভিষিক্ত হিসেবে ক্ষমা করে দিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট।
তাই বলে মাহমুদউল্লাহ, শান্ত, বিজয়দের পারফরম্যান্স তো মেনে নিতে পারে না
তারা।