Published : Saturday, 6 August, 2022 at 12:00 AM, Update: 06.08.2022 12:52:34 AM
নিজস্ব
প্রতিবেদক: ভাত খাবার সময় হাত থেকে ভাত পড়ে যাওয়ায় সিহাবকে বেধম মারধর করা
হয়। ছোটবেলায় গাছ থেকে পড়ে ভেঙ্গে যাওয়া হাতেও মারেন ওই শিক্ষক। হাত
ভাঙ্গার কথা জানালে ওই হাতে আবারো পেটানো হয়। পরে তার জ্বর উঠলে মাদ্রাসার
শিক্ষকরাই ঔষধ খাওয়ায়। টানা তিন দিন জ্বর না ছাড়লে বুধবার তার বাবা শুকুর
আলীকে মাদ্রাসায় ডেকে এনে সিহাবকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। বাড়ির লোকজন সাধারণ
জ্বর মনে করে ঔষধ দেয়। কিন্তু মাদ্রাসায় ফিরে গেলে পুনরায় মার খেতে হবেÑ
এমন ভয়ে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই মারধরের কথা কাউকে বলেনি সিহাব। ওই
দিন রাতে তার সৎ মা খালেদা বেগমের কাছে জানায়- মাদ্রাসার শিক্ষক তাকে
মারার পর জ্বর উঠেছে। শুক্রবার সকালে সিহাবের কাপুনি দিয়ে জ্বর উঠে, সাথে
বমি ও মলত্যাগ। বাড়ি থেকে নেয়া হয় বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
সেখানে কর্তব্যরতরা সিহাবের আশংকাজনক অবস্থা দেখে হাসপাতালেও প্রবেশ করতে
দেয়নি, ঢাকায় নিয়ে যাবার কথা বলে। পরে বরুড়া থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এভাবেই
সিহাবের মৃত্যুর ঘটনা বর্ননা করেন তার ভাবী সাবিকুন্নাহার। সিহাবের সৎভাই
সোহাগের স্ত্রী তিনি।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার মেড্ডা আল মাতিনিয়া
নুরানি মাদ্রাসায় ঘটে এমন মর্মান্তিক ঘটনা। নিহত সিহাব হোসেন (১১) নামে ওই
মাদ্রাসার নুরানী শাখার ছাত্র। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষক আবদুর রবকে (৩৫)
আটক করেছে পুলিশ। সিহাব উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের শশইয়া গ্রামের ডিলার বাড়ির
শুকুর আলী ডিলারের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার রাতে কোন
একসময় সিহাব মারধরের শিকার হয়। তাকে শতাধিক বেত্রাঘাত করে মাদ্রাসার
শিক্ষক। শুক্রবার (৫ আগস্ট) চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ
হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
সিহাবের ভাবী সাবিকুন্নাহার আরো বলেন,
সিহাবের পিঠে এবং হাতেও বেত্রাঘাত বা পেটানোর চিহ্ন রয়েছে। সে বলার পর আমরা
এগুলো দেখেছি। গত রমজান থেকে এই ওই মাদ্রায় আবাসিক ছাত্র হিসেবে পড়াশুনা
করে। কোরবানি ঈদের সময় সে বাড়ি এসেছিলো।
বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা (তদন্ত) মোঃ নাহিদ আহমদ জানান, এ ঘটনার পর মাদরাসার শিক্ষক সদর
দক্ষিণ উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মোঃ বাবুল মিয়ার ছেলে মোঃ আবদুল ওহাবকে আটক
করা হয়েছে।
মেড্ডা আল মাতিনিয়া নূরানী মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা
আহমেদ শফি বলেন, আমি সিহাবের পরিবারের সাথে কথা বলছি। আপনি পরে ফোন করলে
খুশি হব বলে তিনি ফোন রেখে দেন।
বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি
ইকবাল বাহার মজুমদার বলেন, সিহাবের মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে আটক
শিক্ষক আবদুর রবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। সিহাবের তার
বাবা-মায়ের সাথেও আরো কথা বলে বিষয়টি পরিষ্কার হবার চেষ্টা করছি। বিষয়টি
যেহেতু স্পর্শকাতর আমরা খুব সূক্ষèভাবেই আপাতত তদন্ত করছি।