বিডিনিউজ : আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে নেতাকর্মীদের ‘রাজপথ দখলের’ প্রস্তুতি নেওয়ার ডাক দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার বিকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি বলেন, “এই সংগ্রাম শুরু হয়েছে, লড়াই শুরু হয়েছে, যুদ্ধ শুরু হয়েছে; এই লড়াই আমাদের প্রাণের লড়াই, আমাদের বেঁচে থাকার লড়াই, এই লড়াই বাংলাদেশকে রক্ষা করবার লড়াই।
“এটা বিএনপির নয়, তারেক রহমানের নয়, আমাদের নয়, এই লড়াই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে বাঁচাবার লড়াই।”
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “এই লড়াইয়ে অবশ্যই আমাদের শরিক হতে হবে, আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, রাজপথ আমাদেরকে দখল করতে হবে।
“রাজপথের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা অবশ্যই এই ফ্যাসিস্ট দানবীয় হাসিনা সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই আমরা একটা জনগণের সরকার, জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের একটা সমাজ তৈরি করব।”
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, আর কাল বিলম্ব না করে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। কারণ আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। আপনারা মানুষের সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না। সুতরাং আপনাদেরকে এই মুহুর্তে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
“সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিয়ে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে, সরকার গঠন করতে হবে।”
আগামী ২২ অগাস্ট থেকে সারা দেশে উপজেলা-জেলা-মহানগর পর্যয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি অব্যাহতভাবে চলবে বলে ঘোষণা করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “আপনারা জানেন, আগামীকাল রোববার জেলা পর্যায়ে সমাবেশ আছে। সেই সমাবেশগুলো আমরা করব। এরপর আগামী ২২ তারিখ থেকে সকল উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে আমরা ছড়িয়ে পড়ব এবং সেই একই ভাবে প্রত্যেকটি উপজেলা, জেলায় ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করব।”
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে এই সমাবেশে হয়। সমাবেশের মঞ্চের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের নজিরবিহীন লোড শেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নিহত নুরে আলম ও আব্দুর রহিম হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ।’
নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পাঁচটি ট্রাককে একত্রিত করে উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। দুপুর ২টায় শুরু হয়ে সমাবেশ শেষ হয় বিকাল ৬টার পর। ফকিরাপুলের মোড় থেকে কাকরাইল পর্যন্ত পুরো সড়ক ও ফুটপাত হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সরব ছিল।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর নয়া পল্টনের সামনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিএনপি সমাবেশ করেছিল।
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে চাল, ডাল, তেল সব কিছুরই দাম বেড়ে যাচ্ছে। আরেকদিকে বিদ্যুতের যে সমস্যা, সেটা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সরকার আমদানি করার জন্য, দুর্নীতি ও চুরি করার জন্য আমার দেশে যে গ্যাস আছে, সেই গ্যাস উত্তোলনের জন্য তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। তাদের নিজস্ব লোকদের দিয়ে গ্যাস আমদানির ফলে আজকে বিদ্যুতের দামও অনেক বাড়ানো হয়েছে।
“বিদ্যুতের কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে, তাদেরকে ২৮ হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। গত ৭ বছরে প্রায় ২৭০ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে তার হিসাব আছে ২৪০ বিলিয়ন ডলার। প্রশ্ন আমাদের এই ৩০ বিলিয়ন ডলার কোথা গেল? কারা নিয়ে গেল? তা জনগণ জানতে চায়।”
সমাবেশে যোগদানের সময়ে বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও বাধা প্রদানের অভিযোগ করে তাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “এই স্বৈরাচারী, লুটেরা, ভোট ডাকাত, ফ্যাসিবাদ সরকারের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হলে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে কথা আপনাদেরকে (নেতাকর্মীদের) বলেছেন, ফয়সালা করতে হবে রাজপথে। এই ফয়সালা করতে প্রস্তুত বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো।
“এদেশে যখন গণতন্ত্র ছিল না, তখন সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছিলেন আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে। এরপর স্বৈরাচার ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এদেশে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। আর আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “আমি বলতে চাচ্ছি, গত তিন বছরে এদেশের ৫৪ হাজার কোটি টাকা কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের মাধ্যমে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। এখনও লোড শেডিং চলছে, আমরা বিদ্যুৎ পাই না। কিন্তু কুইক রেন্টালের টাকা বন্ধ নাই, ওদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। কার টাকা যাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে- কোনো খবর নাই। গত ১০ বছরে পাচার হয়েছে সাড়ে ৬ লক্ষ কোটি টাকা। এভাবে দেশটাকে আজকে আওয়ামী দেউলিয়ার পথে নিয়ে গেছে। এই দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “আমাদের কোনো কথা নেই আমাদের দাবি একটাই- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ বাতিল করতে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দিতে হবে, এই নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে হবেৃ। আমরা যখন রাস্তায় নেমেই গেছি। আমরা দাবি আদায় না করে যাব না।”
ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “বাংলাদেশ আজ লুণ্ঠিত। এই দুর্নীতিবাজ সরকারের লুণ্ঠন থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করা এখন সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ওপর একটা ঈমানি দায়িত্ব। আমি নেতৃবৃন্দকে বলব, আমরা সবাই মিলে এই লুণ্ঠনকারীদের হাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাই।”
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হকের সঞ্চালনায় এ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, জয়নাল আবেদীন, আমান উল্লাহ আমান, আফরোজা খান রিতা, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী, আবদুস সালাম আজাদ, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন।
দলের অঙ্গসংগঠনের মধ্যে বক্তৃতা করেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, উলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্রদলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন।
অনুষ্ঠানে নিতাই রায় চৌধুরী, ফজলুর রহমান, আতাউর রহমার ঢালী, আবদুল কুদ্দুস, মাহবুব উদ্দিন খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শ্যামা ওবায়েদ, শিরিন সুলতানা, নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী সুপ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, আজিজুল বারী হেলাল, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, রেহানা আখতার রানু, শাম্মী আখতার, নেওয়াজ হালিমা আরলি, হেলেন জেরিন খান, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মাশুকুর রহমান মাশুক, শামীমুর রহমান শামীম, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, সাইফুল আলম নিরব, মীর নেওয়াজ আলী, আমিরুজ্জামান শিমুল, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলসহ অঙ্গসংগঠন ও মহানগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।