তানভীর দিপু:
নানা
অজুহাতে বাড়তে থাকা ডিমের দাম নিয়ে ক্ষণে ক্ষণে কারসাজি হচ্ছে কুমিল্লায়।
ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারদের দাবি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এবং চাহিদা অনুযায়ী যোগান কম
থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম; কে কোনো মজুত করেনি বরং ক্রেতাদের ‘আতঙ্কের’
কারণেই হঠাৎ করে এ জেলায় বেড়ে গেছে ডিমের দাম। আর ডিম উৎপাদনকারী মূল
খামারীরা বলছেন, উৎপাদন খরচ অনুসারে প্রতি পিস ডিমের দাম ১০ টাকা ৩০ পয়সার
বেশি হওয়ার কথা নয়; যদিও গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতি পিস ডিম বিক্রি হয়েছে
১২টাকারও বেশি দরে। অপরদিকে জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর বলছে,ডিমের কোনো
সঙ্কট নেই কুমিল্লায়। বাজারে দাম উঠানামা করিয়ে ফায়দা লুটে নিচ্ছে
মধ্যসত্ত্বভোগীরা।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ
৬৬ টাকা হালি প্রতি ডিম বিক্রি হয়েছে কুমিল্লায়। তা কমতে কমতে সর্বশেষ
বৃহষ্পতিবার দুপুরেও কুমিল্লার নিউ মার্কেটে ফার্মের লাল ডিমের হালি বিক্রি
হচ্ছিলো ৫০ টাকা দরে। বিভিন্ন এলাকায় পাড়ার দোকানগুলাতে ডিমের দাম নেয়া
হচ্ছিলো ভিন্ন ভিন্ন দরে। ক্রেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে বৃষ্পতিবার কুমিল্লা
নগরীর বিভিন্ন বাজার ও দোকানে তদারকি করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এসময় দাম বেশি রাখা এবং ক্রয় মূল্য দেখাতে না পারায় ৫টি প্রতিষ্ঠানকে
জরিমানা করা হয়। অভিযানের ৮ ঘন্টা সময় না পেরুতেই কুমিল্লায় ফার্মের মুরগীর
লাল ডিমের দাম হালি প্রতি ৬ টাকা কমে যায়। ৪৪ টাকা হালি দরে লাল ডিম
বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানায় ব্যবসায়িরা। তবে ডিমের দাম বৃদ্ধিতে প্রকৃত
খামারিরা লাভবান হচ্ছে না বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদক কর্মকর্তা ডা. মোঃ
নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রতিদিন ডিমের মূল্য এরকম কমিয়ে বাড়িয়ে লাভবান
হচ্ছে একশ্রেণীর মধ্যসত্ত্বভোগীরা। যে কারণে বাজারে ডিমের নির্দিষ্ট দাম
থাকা উচিত।
কুমিল্লা জেলা ও মহানগর ডিম ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক
বাবুল মিয়া বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় জানান ডিমের দাম কমছে। ৪৪ টাকা হালি দরে
ফার্মের লাল ডিম, দেশি মুরগীর ডিম হালি ৭০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৭০ টাকা দরে
বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ডিমের দামের উপর নির্ভর করে কুমিল্লায়
নির্ধারিত হয় ডিমের দাম। বিকালে বাজারে ডিমের নতুন চালান আসায় নতুন দাম
নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাবুল মিয়ার দাবি, পরিবহন খরচ বেড়ে
যাওয়ায় বাজারে ডিমের যোগান কম ছিলো যে কারণে ডিমের দাম হঠাৎ করেই বেড়ে
যায়। এছাড়া দাম বাড়ছে আতংকে সাধারণ মানুষ অতিরিক্ত ডিম কিনতে শুরু করায়
বাজারে কৃত্রিম সংকট দেখা দেয়। যে কারণে দাম বৃদ্ধি পায়। কুমিল্লাতে এই
মুহুর্তে খামার থেকে ডিমের সরবরাহ কম থাকলেও আগামী দুই মাসের মধ্যে
কুমিল্লা থেকে অন্য জেলা ডিম সরবরাহ সম্ভব হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা
গেছে, কুমিল্লায় কোন বাজারে ডিম কত টাকা দরে বিক্রি হবে তার কোন নির্দিষ্ট
বাজার মূল্য নেই। আড়তদার বা পাইকারি বিক্রেতারা যে দাম নির্ধারণ করেন সে
দামে বিক্রি হয ডিম। যে কারণে গত কয়েকদিনে পাইকার বা আড়তদারদের প্রতিদিনের
নির্ধারিত মূল্যেই বাজারে চলেছে ডিমের বেচাকেনা।
পোল্ট্রি ফার্মার্স
এসোসিয়েশন কুমিল্লার সভাপতি মোঃ আবদুল মালেক জানান, খুবই দুঃখের বিষয় এই
যে, আমাদের উৎপাদিত ডিমের দাম আমরা নির্ধারণ করি না। দাম নির্ধারণ করেন
আড়ৎদাররা। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৯৫৫ টাকা শ’ হিসেবে ডিম বিক্রি করেছি। সেই
হিসেবে কুমিল্লায় প্রতি পিস ডিমের খুচরা মূল্য ১০ টাকা ৩০ পয়সার বেশি হওয়ার
কথা নয়।
এদিকে কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ নজরুল
ইসলাম জানান, কুমিল্লায় যে পরিমান ডিম উৎপাদিত হচ্ছে তাতে সংকট তৈরী হবার
কথা নয়। আর ডিমের উৎপাদন খরচ কিছুটা বাড়তি থাকলেও খরচ অনুসারে সর্বনিম্ন ৯
টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ টাকা প্রতি পিস হিসেবে বিক্রি করা উচিত। এজন্য
বাজারে একটি নির্দিষ্ট দাম থাকাও উচিত বলে জানান তিনি।
এদিকে
বৃহষ্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার কয়েকটি বাজারে ডিম ও মুরগির দোকানে অভিযান
পরিচালনা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কুমিল্লা। এসময় অতিরিক্ত দামে
ডিম বিক্রির অভিযোগে ৫ টি প্রতিষ্ঠানকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা করে। অভিযান
পরিচালনার ৮ ঘন্টার মধ্যে কুমিল্লায় হালিতে ৬ টাকা কম দরে ডিম বিক্রি শুরু
হয়। বৃহষ্পতিবার দুপুরেও ৫০ টাকা হালি দরে ডিম বিক্রি হচ্ছিলো কুমিল্লার
দোকান ও বাজারগুলোতে।
কুমিল্লা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের
সহকারি পরিচালক মোঃ আছাদুল ইসলাম জানান, কুমিল্লা কোথাও ডিমের অতিরিক্ত দাম
রাখলে ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ জানানো প্রয়োজন। বৃহষ্পতিবার যে অভিযান
পরিচালনা করা হয়েছে, এধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আর যারাই খরচের তুলনায়
বেশি দামে ডিম বিক্রি করবেন তারা কৃষি বিপনন আইন লংঘন করবেন। তাদের
বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।