ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সাইমন্ডসকে স্মরণ
Published : Monday, 29 August, 2022 at 12:00 AM
মাঠের চারদিকে লেখা—রয়, ৩৮৮। অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের ডাক নাম রয়, ৩৮৮ তার টেস্ট ক্যাপ নম্বর। ম্যাচের আগে জাতীয় সংগীতের সময় পালন করা হয় এক মিনিট নিরবতা। প্রয়াত অস্ট্রেলিয়ান সাবেক অলরাউন্ডারের স্মরণে আরও আয়োজন ছিল টাউন্সভিলে অস্ট্রেলিয়া-জিম্বাবুয়ে ম্যাচে।
মাস তিনেক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় উত্তর কুইন্সল্যান্ডের টাউন্সভিলে মারা যান সাইমন্ডস। অবসরের পর ওই এলাকাতেই থাকছিলেন সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার।
সেসময় টাউন্সভিলের রিভারওয়ে স্টেডিয়ামে আবেগঘন অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় শেষ বিদায় জানানো হয় সাইমন্ডসকে। এবার অস্ট্রেলিয়ান এই সাবেক তারকা ক্রিকেটারকে সম্মান জানানো হলো টনি আয়ারল্যান্ড স্টেডিয়ামে। রোববার এই মাঠে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া-জিম্বাবুয়ে।
সাইমন্ডসের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল তার দুই সন্তান বিলি ও ক্লোয়ে। জাতীয় সংগীতের সময় অ্যারন ফিঞ্চ ও স্টিভেন স্মিথের পাশে দাঁড়ায় তারা।
অস্ট্রেলিয়া দলের ফিল্ডিংয়ের সময় ক্রিকেটারদের জন্যও পানি টেনে নেয় সাইমন্ডসের সন্তানরা। পুরো সময় কাটায় তারা দলের ডাগ আউটে।
ইনিংসের মাঝে বিরতিতে মাঠে যান সাইমন্ডসের মা, বোন, পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাবেক ক্রিকেটার জিমি মা’র। বর্ণময় চরিত্রের এই ক্রিকেটারের ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ, একটি ক্রিকেট ব্যাট, হ্যাট, মাছ ধরার ছিপ, কাঁকড়ার পাত্র উইকেটের এক পাশে রাখা হয়। সাইমন্ডসের দুই কুকুর বাজ ও উডি উপস্থিত ছিল সেখানে।
ম্যাচ শুরুর আগে সাইমন্ডসকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ফিঞ্চ বলেন, “খেলোয়াড় হিসেবে তিনি যা করেছেন, তা অসাধারণ। সে ছিল এমন একজন, যাকে দেখার জন্য লোকে ভীড় করত, মাঠে ও ২২ গজে ব্যাট হাতে তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়।”
“গত কিছুদিন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের জন্য ছিল সত্যিই দুঃখের সময়। তার পরিবারকে এখানে পাওয়া এবং তার প্রতি সম্মান জানানো দারুণ ব্যাপার।”
সাইমন্ডসকে স্মরণ করে শুরু হওয়া ম্যাচটি ক্যামেরন গ্রিন ও অ্যাডাম জ্যাম্পার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৫ উইকেটে জিতে সিরিজে এগিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
ভবিষ্যতে রিভারওয়ে স্টেডিয়ামের গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের নামকরণ সাইমন্ডসের নামে করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কুইন্সল্যান্ড তো বটেই, অস্ট্রেলিয়া ও বিশ্ব ক্রিকেটে সাইমন্ডস উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন নিজের ঘরানা দিয়ে। আগ্রাসী ও ভয়ডরহীন ব্যাটসম্যান ছিলেন যিনি, চাপের মধ্যে পাল্টা আক্রমণের প্রতিপক্ষকে মিইয়ে দিতে জুড়ি ছিল না তার। বল হাতে মিডিয়াম পেস ও অফ স্পিন, দুটিতেই ছিলেন কার্যকর। ফিল্ডিংয়ে তো সর্বকালের সেরাদের একজন।
২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা জয়ে বড় অবদান ছিল তার। ওই দশকে টেস্ট দলেও বছর দুয়েক তিনি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
প্রায় ১১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১৯৮ ওয়ানডে খেলে তার রান ৫ হাজার ৮৮। সেঞ্চুরি ৬টি, ফিফটি ৩০টি। ব্যাটিং গড় ৩৯.৭৫। তবে তিনি ‘স্পেশাল’ ছিলেন যে কারণে, তা খানিকটা ফুটে ওঠে তার স্ট্রাইক রেটে, ৯২.৪৪। বল হাতে উইকেট ১৩৩টি।
টেস্ট খেলেছেন ২৬টি। ২ সেঞ্চুরি ও ১০ ফিফটিতে ১ হাজার ৪৬২ রান করেছেন ৪০.৬১ গড়ে। উইকেট নিয়েছেন ২৪টি। টি-টোয়েন্টির তখনও কেবল শুরুর সময়। ম্যাচ খেলতে পেরেছেন ১৪টি। ৪৮.১৪ গড় ও ১৬৯.১৪ স্ট্রাইক রেটে রান তার ৩৩৭, উইকেট ৮টি।
তবে এসব রেকর্ড-পরিসংখ্যান সাইমন্ডসকে বোঝাতে পারবে সামান্যই। ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে কার্যকর ক্রিকেটারদের একজন মনে করা হয় তাকে। ক্রিকেট ইতিহাসে তিনি আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবেন তার ফিল্ডিংয়ের জন্যও।