নেত্রকোনা জেলায় প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি সেতু
তৈরি করা হয়েছে। এক বছর বা তারও বেশি সময় ধরে সেগুলো পড়ে আছে। মানুষ
সেতুগুলো ব্যবহার করতে পারছে না। কারণ কোনোটিরই কোনো সংযোগ সড়ক নেই।
সংযোগ
সড়ক নির্মাণও করা যাচ্ছে না। কারণ সড়ক নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমিই
অধিগ্রহণ করা হয়নি। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোনো কোনো
সেতুর সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাক্কলনই জমা দেওয়া
হয়নি। তাহলে সরকারের ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ের তাৎপর্য কোথায়?
সরকারি
কাজকর্মে ‘ঘোড়ার আগে গাড়ি’ জুড়ে দেওয়ার মতো দৃষ্টান্তের অভাব নেই। অতীতেও
এমন বহু সেতু নির্মিত হয়েছে, যেখানে কোনো সড়কই নেই। এমনও দেখা গেছে, মাঠের
মধ্যে একটি সেতু বানিয়ে রাখা হয়েছে। এভাবে সেতু নির্মাণের উদ্দেশ্য নিয়ে
অতীতে অনেক আলোচনা হয়েছে। কোনো না কোনো উপায়ে সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ
উঠেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহি না থাকার বিষয়টিও আলোচিত হয়েছে।
কিন্তু ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার উল্টো প্রবণতাটি বন্ধ হয়নি। জানা যায়,
নেত্রকোনা-ঈশ্বরগঞ্জ সড়কের বিশিউড়া এলাকায় মগড়া নদীর ওপর প্রায় সাড়ে চার
কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। উভয়
প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা প্রয়োজন। কিন্তু এখন
পর্যন্ত সেসব জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণ বাবদ কোনো অর্থই বুঝে পাননি। জমির
মালিকরা দখল না ছাড়ায় সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজও শুরু করা যাচ্ছে না। প্রায়
দুই বছর ধরে নির্মিত সেতুটি পড়ে আছে, মানুষ তা ব্যবহার করতে পারছে না।
তাহলে এই সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ের যৌক্তিকতা কোথায়? সেতুর অনুমোদন দেওয়ার
সময় সংযোগ সড়কের বিষয়টি নিশ্চিত করা কি জরুরি ছিল না? জানা যায়, নেত্রকোনা
সদরের ভাউসী এলাকায় নবনির্মিত সেতুর পাশেই একটি বেইলি সেতু রয়েছে। তার
পাশে সড়ক বিভাগের একটি সাইনবোর্ড রয়েছে। তাতে লেখা, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি
সেতু’। সেই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ সেতু দিয়েই প্রতিদিন অনেক যানবাহন চলাচল করতে
বাধ্য হচ্ছে। কোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে? এই বেইলি সেতুটিও
বসানো হয়েছে আরেকজনের ব্যক্তিগত জমি দখল করে। জমির মালিক অভিযোগ করেছেন, এ
জন্য তাঁকে একটি টাকাও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি সেই বেইলি সেতুটিও
চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। মানুষকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে চলাচল
করতে হচ্ছে।
সরকারের কাজে সমন্বয়হীনতা ও জবাবদিহির অভাব যে কত প্রকট, তা
নেত্রকোনার সেতুগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সেতু নির্মাণ করেছে সড়ক
বিভাগ, আর জমি অধিগ্রহণ করবে জেলা প্রশাসন। সমন্বয় না থাকায় সরকারের
উন্নয়নকাজের সুফল থেকে মানুষ এভাবেই বঞ্চিত হয়। আমরা আশা করব, ১৭ কোটি টাকা
ব্যয়ে নির্মিত সেতুগুলোর সুফল মানুষ যাতে ভোগ করতে পারে সে জন্য দ্রুত
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।