আওয়ামী
লীগের কোনো আমলেই দেশের কোথাও ‘মঙ্গা দেখা দেয়নি’ মন্তব্য করে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার দেশকে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে
‘মুক্ত করতে পেরেছে’।
রোববার বিকালে জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি
বলেন, “বাংলাদেশের যে অঞ্চলগুলো মঙ্গাপীড়িত ছিল, গাইবান্ধা তার মধ্যে
একটি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে-
আমরা যখন ১৯৯৬ থেকে ২০০১ ক্ষমতায় ছিলাম, তখনও সেখানে মঙ্গা হয়নি। আমরা
মঙ্গা দূর করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
“এরপর ২০০৯ থেকে এই পর্যন্ত কখনও মঙ্গা
দেখা দেয়নি। দুর্ভিক্ষের হাত থেকে আমরা মানুষকে মুক্ত করতে পেরেছি। ওই
এলাকার উন্নয়নে যথেষ্ট কাজ আমরা করেছি। নদী ভাঙন রোধে ব্যাপক পদক্ষেপও আমরা
নিচ্ছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। তবে সেখানে আরও উন্নয়ন দরকার।”
গত
২২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা
যান গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি ১৯৮৬ সালের
তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ
নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য
নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।
মানুষের
আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করা যেকোনো রাজনৈতিক নেতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ
মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে
রাব্বী মিয়া তা অর্জন করতে পেরেছিলেন।
“এই শোকের মাসে আমাদের জন্য
আরেকটি শোক আমাদের মাননীয় ডেপুটি স্পিকারৃ যিনি সাত সাতবার এই পার্লামেন্টে
নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদেও তিনি ছিলেন।”
ফজলে
রাব্বী মিয়া ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদে যান। পঞ্চম ও সপ্তম
সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় হুইপ ছিলেন।
দশম সংসদে ডেপুটি স্পিকারের চেয়ারে
বসেন ফজলে রাব্বী মিয়া। একাদশ সংসদেও টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ডেপুটি স্পিকারের
দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের কথা তুলে ধরে
সরকার প্রধান বলেন, “তিনি একজন দক্ষ আইনজীবী ছিলেন। যার ফলে তিনি আইন
সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখতেন। আমি তো মনে করি যে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে
অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি পালন করেছিলেন।”
ফজলে
রাব্বী মিয়া তার এলাকার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা
বলেন, “তার মতো একজন নিবেদিত প্রাণ, একজন সামাজিক মানুষ- যিনি সমাজের নানা
ক্ষেত্রে মানুষের উন্নয়নে অনেক অবদান রেখে গেছেন। তার এই মৃত্যু এটা আমাদের
জন্য অত্যন্ত ক্ষতির।”
ফজলে রাব্বী মিয়ার অসুস্থতার সময় তার নিয়মিত
খোঁজ রাখতেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি
সমবেদনা জানান।
আলোচনায় আরও অংশ নেন আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম
সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মাহাবুব আরা বেগম
গিনি, আ স ম ফিরোজ, কামরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের,
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ।
আলোচনা শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। পরে স্পিকার রেওয়াজ অনুযায়ী সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সংসদের বৈঠক মুলতবি করেন।