সাঈদ হাসান, কুবি প্রতিনিধি:
প্রতিষ্ঠার ১৬ বছরও বিদেশী শিক্ষার্থীদের পড়ানোর মতো অবকাঠামো ও যথাযথ পরিবেশ গড়ে তুলতে পারেনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রশাসন এই পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগও গ্রহণ করেনি। বিদেশী শিক্ষার্থী না থাকার কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক ধারণায় প্রবেশ করতে এখনো পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়ার ইসলামী ও হাজী মোহাম্মদ দানেশসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর বিদেশী শিক্ষার্থী চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়। সে অনুসারে বিদেশী শিক্ষার্থীও ভর্তি নেন। এ ধরনের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার দপ্তর বলছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করে দেয়। ভর্তি পরীক্ষায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের আবেদনের জন্য কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।
সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৪৬তম বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে দেশে বিদেশী শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩টিতে পড়াশোনা করছে ৭৬৭ জন বিদেশী শিক্ষার্থী। ২০১৯ সালেও এ সংখ্যা ছিল ৪৮২। তবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও বিপরীত চিত্র কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেছেন মাত্র চার জন। এর মধ্যে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয় তিনজন। সর্বশেষ বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি সংক্রান্ত কোন নীতিমালাও তৈরি করা হয়নি। ফলে ঐ সময়ে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা চেয়ে চিঠি দিয়েছিল প্রশাসন। এরপর আর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এছাড়াও বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য কোনো প্রচার-প্রচারণাও করেনি।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি সহায়তা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার জন্য দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স সেল’ থাকলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই সেটিও। তাছাড়া আন্তর্জাতিক সিলেবাস এড়িয়ে গতানুগতিক সিলেবাসেই পাঠদান চলছে। আবার সিলেবাসের কোনো তথ্যও হালনাগাদ করা নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে।
শাখাওয়াত শাওন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে না পারলে এখানে বিদেশী শিক্ষার্থী আসবে না। তার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাড়াতে হবে। বিদেশীদের জন্য নেই কোনো বৃত্তি ও স্বতন্ত্র আবাসন ব্যবস্থাও। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচার-প্রচারণা ছাড়া এটি সম্ভব নয়।
আল আমিন নামের অন্য শিক্ষার্থী বলেন, বিদেশী শিক্ষার্থী না থাকায় আমাদের অনেক কিছু থেকে পিছিয়ে রাখছে। বিদেশী শিক্ষার্থী থাকলে সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের সাথে পরিচিত হতে পারতাম আমরা। সাংস্কৃতিক অভিযোজন ক্ষমতা, খাদ্যাভাস, ঐতিহ্য, নতুন ভাষা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক পরিচিতি ও নতুন চিন্তার সাথে পরিচিতি হতে পারতাম।
এসব বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন জানান, বিদেশী শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ই আনার পরিকল্পনা আছে। বিদেশী শিক্ষার্থী চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার চাইতে এখানকার অবকাঠামো আগে উন্নয়ন করতে হবে। যদি র্যাংকিং না থাকে তাহলেও বিদেশী শিক্ষার্থী আসবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং বৃদ্ধির জন্য গবেষণার দিকে মনোযোগ দিয়েছি।