কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পরেছে তিস্তা পাড়ের মানুষজন। ৩ দিনে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনের তোড়ে বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম কালপানি বজরা, কালপানি বজরা ও সাতালস্কর গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
ইতোমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ১ কিলোমিটার পাকা সড়ক, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির, ঈদগাহ মাঠ, বজরা পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, পুরাতন বজরা বাজার ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়িঘর।
ভাঙন কবলিতরা আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন কবলিতদের পাশে দাঁড়ায়নি বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিন উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর ভাঙন কবলিত সাতালস্কর, কালপানি বজরা ও পশ্চিম বজরা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষজন তাদের শেষ সম্বল ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
এলাকাবাসী আব্দুর রশিদ (৫০), রাশেদুল হক (৪০), আব্দুর রহমান (৬৫), নুরুল ইসলাম পাকোয়ানী (৭০), রেজিয়া বেগমসহ (৬৫) অনেকে জানান, গত এক মাস যাবত ভাঙন শুরু হয়েছিল বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম কালপানি বজরা, কালপানি বজরা ও সাতালস্কর গ্রামে। উত্তরে জজমিয়ার বাড়ি থেকে দক্ষিণে রোস্তম মৌলভীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাব্যাপী ভাঙন শুরু হয়েছে। এর মধ্যে গত তিনদিনে হঠাৎ করে ভাঙনের তীব্রতার ফলে বজরা পশ্চিম পাড়া দাখিল মাদরাসা, পুরান বজরা বাজার, ২টি মসজিদ, ১টি মন্দির, ২টি ঈদগাহ মাঠ, প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়িঘর, গাছপালা ও ২ শতাধিক একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
তারা আরও বলেন, ভাঙনের তীব্রতা এমনি ভয়াবহ ছিল যে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৩০-৪০টি বাড়ি মুহূর্তের মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কোনো রকমে প্রাণ বাঁচিয়েছেন অনেকেই। ভাঙন কবলিত এলাকায় দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী।
ওই এলাকার ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, গত তিনদিনে তিস্তা নদীর ভাঙনে সাতালস্কর, কালপানি বজরা ও পশ্চিম বজরা মৌজা নদী গর্ভে চলে গেছে। এছাড়া প্রায় ১ কিলোমিটার পাকা সড়কও নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সরকারি কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তা ২-৪ দিনের মধ্যে এখানে আসেনি।
বজরা পশ্চিম পাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার রেফাকাত হোসেন জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে এখানে সুন্দরভাবে মাদ্রাসাটি পরিচালনা করে আসছি। গত পরশুদিন থেকে হঠাৎ করে তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে মাদ্রাসার অর্ধেক চলে গেছে। বাকিটা ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
চোখের পানি মুছতে মুছতে কালপানি বজরার মৃত জহুর ব্যাপারীর ছেলে মোজাম্মেল হক (৬৫) জানান, তিনদিন থাকি এটে (খোলা মাঠে) পরি আছি। গরিব মানুষ জায়গা নাই কোটে যাই। আজকে বজরা বাজারের বাসিন্দা দুর সম্পর্কের জ্যাঠাতো ভাই টিটু মিয়া তার খুলিত (আঙিনায়) ঘর তোলার অনুমতি দিছে। দেখি ওটে যায়া আপাতত উঠি, তারপর মাবুদ দেখপে।
এমন পরিস্থিতিতে অভিযোগ সরকারিভাবে সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি কেউই। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা শুধু দেখে গেছেন। তাদের নাকি কিছুই করার নেই। অপরদিকে ভয়াবহ এই ভাঙনের খবর পেয়েও উপজেলা প্রশাসন থেকে কোন খোঁজখবর নেয়া হয়নি। দুর্দশাগ্রস্তরা বৃষ্টির মধ্যেই খোলা প্রান্তরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে অনেকেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার জানান, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ভাঙন কবলিতদের দ্রুততম সময়ে তালিকা করতে বলা হয়েছে। তালিকা পেলেই সহযোগিতা শুরু করা হবে। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আমরা ভাঙনের বিষয়গুলো আপডেট করেছি। বাজেট না থাকায় তারা মুভমেন্ট করতে পারছে না বলে জানিয়েছে। আর খোলা আকাশের নিচে কেউ থাকলে সেটা আমার নজরে আসেনি। আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গত ২০-২৫ বছর পূর্বে মুল নদীর স্রোত ছিল এই এলাকায়। গ্রামগুলোর উজানে নদী শাসনের ব্যবস্থা নেওয়ায় এখানে হঠাৎ করে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।