প্রতি বছর একটি করে বিসিএস পরীক্ষা সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি)। বর্তমানে চলমান সব পরীক্ষাও আগামী ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা কেরছে সংস্থাটি। উত্তরপত্র মূল্যায়নে দীর্ঘসূত্রতা কমাতে পরীক্ষকদের জন্যও আসছে নতুন নির্দেশনা। মৌখিক পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন রূপরেখা। সিলেবাসেও আসছে পরিবর্তন। জানা যায়, বিগত দিনে একেকটি বিসিএস পরীক্ষা শুরু থেকে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত সময় নেওয়া হতো দুই থেকে তিন বছর। এমন দীর্ঘসূত্রতার কারণে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে চলে যেত মূল্যবান সময়। বিসিএসের অপেক্ষায় থেকে অনেকের সরকারি চাকরির বয়সও চলে যেত। অনেকে নতুন করে আর আবেদনের সুযোগ পেত না।
পিএসসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২ হাজার ৫৪৫টি ক্যাডার পদের জন্য ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন আবেদন করেন। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয় ২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি। ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি ২০১৫ সালের ৩১ মে জারি করা হয়। ২ হাজার ৭৫০টি পদের বিপরীতে ২ লাখ ১১ হাজার ৩২৬ জন প্রার্থী আবেদন করেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। ৩৭তম বিসিএসে ১ হাজার ৩৪২টি পদে নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশ করে পিএসসি। ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশ হয়।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ১ হাজার ৯০৩টি ক্যাডার পদে নিয়োগে ফলাফল প্রকাশ করা হয় ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি। ২০১৯ সালে ৪১তম বিসিএসসে ২ হাজার ১৬৬টি ক্যাডার পদে নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা হলেও এখানো তার ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষা চলমান।
এসব বিষয়কে সামনে রেখে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, বিসিএসের ক্ষেত্রে নানা সমস্যা বিরাজমান ছিল। এ পরীক্ষায় প্রশ্ন, সিলেবাসে পরিবর্তন আনার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতি বছর নভেম্বর মাসে বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক পরীক্ষা ও ফলাফল কোন মাসে প্রকাশ করা হবে তার সম্ভাব্য মাস উল্লেখ থাকবে। পরীক্ষকদের মাধ্যমে খাতা মূল্যায়ন করা হবে দ্রুততম সময়ে। কোনো ধাপে বিলম্ব করা হবে না। মৌখিক পরীক্ষা আরো মানসম্মত করা হবে। তৈরি করা হবে মৌখিক পরীক্ষার একটি মডেল রূপরেখা।
পিএসসির পরীক্ষা শাখা থেকে জানা যায়, নির্ভুল খাতা মূল্যায়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২১ দিনের মধ্যে ২০০ খাতা মূল্যায়নের সময় দেওয়া হলেও কেউ কেউ অনেক বিলম্বে জমা দেন। অনেক খাতায় বৃত্ত ভরাটসহ নানা ধরনের ভুলভ্রান্তি ধরা পড়ছে। সেগুলো পরীক্ষকের কাছে পুনরায় পাঠিয়ে সংশোধন করা হয়।
এসব ত্রুটি দূর করতে পরীক্ষকদের জন্য গত ২৮ আগস্ট থেকে নিয়মিত ব্রিফিংমূলক সেমিনারের আয়োজন করছে পিএসসি। সেখানে ধাপে ধাপে পরীক্ষকদের ডেকে খাতা মূল্যায়নে যেসব ভুল চিহ্নিত হয়েছে তা প্রজেক্টরে দেখানো হচ্ছে। যারা সেমিনারে আসছেন শুধু তাদের ৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ১০০টি করে খাতা মূল্যায়ন করতে দেওয়া হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, আগে পরীক্ষকদের ২০০ খাতা ২১ দিনের মধ্যে মূল্যায়ন করতে দেওয়া হলেও অনেকে সেটি ছয় মাস পার করে দিতেন। তার মধ্যেও ভুল পাওয়া যেত। বর্তমানে সেটি পরিবর্তন করে ১০০টি খাতার জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, নির্ভুল খাতা মূল্যায়ন ও নির্ধারিত সময়ে বুঝিয়ে দিতে নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেজন্য আমাদের প্ল্যানিং, ইচ্ছা ও লক্ষ্যমাত্রা পরীক্ষকদের জানা প্রয়োজন। সে কারণে পিএসসিতে নিয়মিত ব্রিফিং সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে। এতে যারা অংশ নিচ্ছে তাদের ৪৩তম বিসিএসের খাতা মূল্যায়ন করতে দেওয়া হচ্ছে। যারা আমাদের মিশন-ভিশন জানবে না তারা কীভাবে তা মূল্যায়ন করবেন।