ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
এতো দিন চোখের সামনে চলেছে এতো অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক!
Published : Monday, 5 September, 2022 at 12:00 AM, Update: 05.09.2022 1:05:36 AM
এতো দিন চোখের সামনে চলেছে এতো অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক!জহির শান্ত:
কুমিল্লা নগরীর অলি-গলি ও বাসাবাড়িতে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য অবৈধ ও অনিবন্ধিত হাসপাতাল-ক্লিনিক। এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যসেবার মান একেবারেই নগণ্য; অপরদিকে এর কোনো কোনোটিতে থাকেন না চিকিৎসকও। ফলে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে, গচ্চা যায় পকেটের টাকা। পাশাপাশি অপচিকিৎসার শিকার হয়ে কখনো কখনো প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।  কিন্তু এতোকিছুর পরও দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ বিভাগের চোখের সামনেই চলে আসছে এসব অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক।
আর পুরো জেলাজুড়ে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যাটাও চোখ কপালে উঠার মতো। একটি সূত্র বলছে কুমিল্লা নগরী ও জেলার ১৭টি উপজেলা মিলে মোট বৈধ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে ৪০৪টি। আর জেলাজুড়ে অবৈধ ও অনিবন্ধিত হাসপাতাল-ক্লিনিকও রয়েছে প্রায় একই সমান। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই চিকিৎসা-অপচিকিৎসা চলছে এসব ‘স্বাস্থ্যসেবা’ প্রতিষ্ঠানে।
কিন্তু কিভাবে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান? স্বাস্থ্য বিভাগই বা করছেটা কিÑ এ নিয়ে দেখা গিয়েছে নানা প্রশ্ন। আর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, কুমিল্লাজুড়ে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়গনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। এসব অভিযানে গত এক সপ্তাহে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ৪৮টি হাসপাতাল ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে। অভিযান চলমান আছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্র মতে, গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে কুমিল্লার লাকসামে ৯টি, চান্দিনায় ৪ টি, নাঙ্গলকোটে ৩টি, বুড়িচংয়ে ২টি, হোমনায় ২টি, মনোহরগঞ্জে ২টি, দাউদকান্দিতে ৮টি,  সদর উপজেলায় ১টি, বরুড়ায় ৩টি, মেঘনায় ২টি, দেবিদ্বারে ২টি, লালমাইয়ে ২টি ও চৌদ্দগ্রামে ৫টি হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া নানা অনিয়মে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মালিককে জরিমানাও করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানিক দল বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ লাইসেন্স পাননি। অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য লাইসেন্সের আবেদনই করা হয়নি। কেউ আবার অনলাইনে আবেদন করেই তাদের কাজ শেষ বলে মনে করছেন; জানতেও চাইছেন না কেন তাদের অনুমোদন দিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। আবার হাসপাতাল ক্লিনিক গুলো পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্সের শর্ত মানছেন না। সেবা দিচ্ছেন অপর্যাপ্ত এবং অদক্ষ জনবল দিয়ে। কোথাও কোথাও অপরিচ্ছন্নতা এবং রোগীর প্রতি অবহেলার চিত্র ধরা পড়েছে। এছাড়া ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোতে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বিল আদায় এবং অদক্ষদের দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর প্রমাণও মিলেছে। সম্প্রতি গত শনিবার কুমিল্লা নগরীর তেলিকোনা এলাকায় নিবেদিতা নামক একটি হাসপাাতালে স্বাস্থ্য বিভাগের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- অপারেশন থিয়েটারের ফ্রিজে গরুর মাংস রাখা এবং একই হাসপাতালে সদ্য সার্জারি করা এক রোগীতে এক ঘন্টা সময়ের মধ্যেও পর্যবেক্ষণে আসে নি কোন চিকিৎসক এবং নার্স। সেখানে গিয়ে একজনকেই পায় পর্যবেক্ষক দল, যিনি একাধারে ম্যানেজার, চিকিৎসক এবং নার্সের দায়িত্ব পালন করেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার অনুনমোদিত বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মালিকানার সাথে জড়িত রয়েছেন চিকিৎসক, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন সচেতন মহলের প্রতিনিধিরা। যারা বিভিন্ন সময়ে হাসপাতাল বা ক্লিনিক স্থাপনের জন্য প্রস্তুতি নেন সংশ্লিষ্ট কার্যালয়গুলোকে না জানিয়েই। পরবর্তীতে অনুমোদনের জন্য আবেদন করে বা না করে তদবির-সুপারিশ করে চলতে থাকে কার্যক্রম। এছাড়া বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতাল বা ক্লিনিকের চাকুরীজীবি ওয়ার্ড বয়, নার্সরা মিলেও ক্লিনিক গড়ে তোলার খবর পাওয়া যায়। সাধারণত দালালের মাধ্যমে রোগীদের পাকড়াও করে নিয়ে আসা হয় এসব কিøনিক কিংবা হাসপাতালে। চড়া মূল্যে সেবার নামে ঠকানো হয় রোগীদের। এছাড়া হাসপাতালের নামে দু’একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে শুরু করা প্রতিষ্ঠানে সার্জারি থেকে শুরু করে- দেওয়া হয় অনেক স্পর্শকাতর সেবা, যার ন্যূনতম পরিবেশই বজায় থাকে না এসব প্রতিষ্ঠানে। শয্যা অনুযায়ী হাসপাতাল গুলোতে যে পরিমানে ডাক্তার এবং নার্স থাকার কথা-  তাও থাকে না এসব প্রতিষ্ঠানে।  
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক কুমিল্লার স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
তিনি বলেন, আমরা লাইসেন্স নিয়ে যেমন কাজ করছি, তেমনি প্রতিটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ডাক্তার এবং নার্সসহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও শর্ত মানা হচ্ছে কিনা- সে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা হবে।
কুমিল্লাজুড়ে গড়ে উঠা অসংখ্য অবৈধ-অনিবন্ধিত হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং এস প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে সম্প্রতি যোগাযোগ করা হলে কুমিল্লার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোতেই সাধারণত অপচিকিৎসা হয়। এছাড়া ভুল চিকিৎসায় বিভিন্ন সময় যে মৃত্যু বা অন্যান্য অঙ্গহানির খবর পাওয়া যায় - এসবের অধিকাংশই হচ্ছে এসব অনুমোদনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিকে। কুমিল্লা শহরেও অনেক অবৈধ প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোর বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অভিযান আরো জোরদার করা উচিত।