তানভীর দিপু:
স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের পরিচালিত কেন্দ্রিয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নানান অনিয়ম এবং
অভিযোগে গত ১ সপ্তাহে কুমিল্লা জেলায় ৪৮ টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বন্ধ
করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই লাইসেন্স নাই বলে জানিয়েছেন
কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী। তিনি আরো জানান, বেশ
কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সংশোধনের সময় দেয়া হলেও তারা সময় মত তাদের অনিয়ম
সংশোধন করতে পারে নি বলেও বন্ধ করে দেয়া হয়। এর মধ্যে ৮টি হাসপাতাল এবং
অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার হিসেবে পরিচালিত হয়ে
আসছিলো।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য
অধিদপ্তরের নির্দেশনায় কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় যে অভিযান পরিচালনা করা
হয়েছে এর মধ্যে লাকসামে ৯ টি, চান্দিনাতে ৪ টি, নাঙ্গলকোটে ৩টি, বুড়িচং
২টি, হোমনাতে ২টি, মনোহরগঞ্জে ২টি, দাউদকান্দি ৯ টি, সদর ২টি, বরুড়াতে
৩টি, মেঘনাতে ২টি, দেবিদ্বারে ৪ টি, লালমাইতে ২টি ও চৌদ্দগ্রামে ৫টি
প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা
হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে যে সব প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করতে বলা হয়েছে-
তাদের প্রতি নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে যেন সম্পূর্ণ লাইসেন্স সংগ্রহ করা
ব্যতীত আবারো যেন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা না হয়।
গত এক সপ্তাহের
অভিযানে কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় যে ৪৮টি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়
সেগুলো হলো- লাকসামে বন্ধ করে দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ইজি হেলথ কেয়ার,
মা মনি লাইফ কেয়ার হাসপাতাল, লাকসাম সেন্ট্রাল ল্যাব, আল কারীম
ডায়াগনস্টিক, আল খিদমাহ হসপিটাল, আপস জেনারেল হাসপাতাল, হাজারী মেডিকেল
সার্ভিসেস, লিট হেলথ কেয়ার এবং সিগমা হেলথ কেয়ার। দাউদকান্দিতে বন্ধ করা
প্রতিষ্ঠান- আল মদিনা ডায়গনস্টিক, সাণল্যাব ডায়গনস্টিক, রেনেসা ডায়গনস্টিক ও
হাসপাতাল, স্বপ্ন ডায়গনস্টিক, আমিরাবাদ ডায়গনস্টিক, জনসেবা ডায়গনস্টিক ও
ফ্যামিলি-২। সদর উপজেলায়- নিবেদিতা হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং ফেয়ার
কনসাল্টেশন ডায়গনস্টিক। বরুড়ায়- নিরাময় ডায়গনস্টিক, সোনাইমুড়ী ডায়গনস্টিক
এবং আড্ডা টাওয়ার হাসপাতাল। নাঙ্গলকোটের ডক্টরস ল্যাব, আল নূর ডায়গস্টিক,
বাঙ্গড্ডা জেনারেল হাসপাতাল। মনোহরগঞ্জে- মনোহরগঞ্জ ডায়গনস্টিক সেন্টার ও
হাজী আলী আরশাদ মুন্সী ডায়গনস্টিক সেন্টার। বুড়িচংয়ে- শেফা ডায়গনস্টিক এবং
কংশনগর ইউনাইটেড হাসপাতাল। মেঘনা উপজেলায়- জননী ডক্টরস চেম্বার ও মহসিন
ডেন্টাল ক্লিনিক। হোমনায়- মমতাময়ী ডায়গনস্টিক এবং আল হেরা ডায়গনস্টিক
সেন্টার । চৌদ্দগ্রামের হেলথ কেয়ার ডায়গনস্টিক, দি পপুলার ডায়গনস্টিক, অলী
আহমেদ ডায়গনস্টিক, ন্যাশনাল ডায়গনস্টিক ও মডার্ণ ডায়গনস্টিক সেন্টার।
দেবিদ্বারের আল আরাফা ডায়গনস্টিক সেন্টার, নিরাপদ ডায়গনস্টিক, আগমন
ডায়গনস্টিক, ডক্টরস ল্যাব। লালমাইতে নিলয় মেডিকেল হল ও বাগামারা ডিজিটাল
সেন্টার (আবু তাহের মার্কেট) এবং চান্দিনায় একতা ডায়গনস্টিক, জয় ডায়গনস্টিক
, সমাধান ডায়গনস্টিক ও নাহার ডায়গনস্টিক সেন্টার।
কুমিল্লা সিভিল
সার্জন মীর মোবারক হোসাইন বলেছেন, এই ধরনের অভিযান চলমান থাকবে। আমরা
লাইসেন্স নিয়ে যেমন কাজ করছি, তেমনি প্রতিটি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান
ডাক্তার এবং নার্সসহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও শর্ত মানা হচ্ছে কিনা সে
বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় বলেছেন,
স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত যে অভিযান পরিচালনা হবে – আমরা
সেই মতই কার্যক্রম চালু রাখবো।
বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত অভিযানে
নেতৃত্ব দেয়া কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সূত্রে
জানা গেছে, বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেছে তাদের
লাইসেন্স স্বয়ংসম্পূর্ণ না। কেউ কেউ লাইসেন্সের আবেদনই করেন নি। কেউ আবার
অনলাইনে আবেদন করেই তাদের কাজ শেষ বলে মনে করছেন। অবহেলা করে জানতেও চাইছেন
না কেন তাদের অনুমোদন দিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। অপর দিকে বেসরকারি
হাসপাতাল ক্লিনিক গুলো পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্সের শর্ত মানছেন না। সেবা
দিচ্ছেন অপর্যাপ্ত এবং অদক্ষ জনবল দিয়ে। কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি
হাসপাতালে গিয়ে অপরিচ্ছন্নতা এবং রোগীর প্রতি অবহেলার চিত্র প্রমানিত
হয়েছে। এছাড়া ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোতে গ্রাহকদের কাছ থেকে
অতিরিক্ত বিল আদায় এবং অদক্ষদের দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর প্রমানও
মিলেছে। সম্প্রতি গত শনিবার কুমিল্লা নগরীর তেলিকোনা এলাকায় নিবেদিতা নামক
একটি হাসপাাতালে স্বাস্থ্য বিভাগের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- অপারেশন
থিয়েটারের ফ্রিজে গরুর মাংস রাখা এবং একই হাসপাতালে সদ্য সার্জারি করা এক
রোগীতে এক ঘন্টা সময়ের মধ্যেও পর্যবেক্ষণে আসে নি কোন চিকিৎসক এবং নার্স।
সেখানে গিয়ে একজনকেই পায় পর্যবেক্ষক দল, যিনি একাধারে ম্যানেজার, চিকিৎসক
এবং নার্সের দায়িত্ব পালন করেন।