জহির শান্ত:
গত
আগস্ট মাসের ২৩ তারিখ বিকেলে তাবলীগ জামাতের বয়ানে যাওয়ার কথা বলে
কুমিল্লা নগরীর রেইসকোর্স এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে যান ইমরান বিন রহমান
(১৭)। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজ থেকে এবছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী
ইমরান এরপর থেকে আর বাসায় ফিরেননি। পরদিন ২৪ আগস্ট কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল
থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরি করেন ইমরানের বাবা মোঃ মুজিবুর রহমান। শুধু
ইমরানই নন, কাছাকাছি সময়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া ও সরকারি কলেজের আরো ৫
শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের পরিবারই তাদের সন্ধান চেয়ে
থানায় জিডি করেছেন। এরপর প্রায় ২ সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও তারা আর বাসায়
ফিরেননি, মেলেনি তাদের কোনো হদিস। নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চারজন এ
বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং বাকি দু’জন অনার্স প্রথম ও তৃতীয় বর্ষের
ছাত্র।
নিখোঁজ শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন- কুমিল্লা সরকারি কলেজ থেকে
এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও নগরীর রাণীর বাজার এলাকার মোঃ সাইফুল ইসলামের পুত্র
নিহাল (১৭), একই এলাকার শাহাব উদ্দিনের ছেলে হাসিবুল ইসলাম (১৮), কুমিল্লা
ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী কান্দিরপাড় এলাকার মাহবুবুর
রহমানের পুত্র সামি (১৭), নগরীর রেইসকোর্স এলাকার মুজিবুর রহমানের (মুকুল)
পুত্র ইমরান বিন রহমান, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের
শিক্ষার্থী ও নগরীর রেইসকোর্স এলাকার মো. ফয়েজ আহমেদের ছেলে ইমতিয়াজ আহমেদ
রিফাত (১৯) এবং অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও নগরীর ঝাউতলা এলাকার নুরুল
ইসলামের পুত্র মো. আমিনুল ইসলাম (২৩)।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আফজল হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি
জানার পর প্রথমেই যেটি বের করার চেস্টা করছিÑ তারা কাছাকাছি সময়ে নিখোঁজ
হয়েছে কি না? এছাড়া তাদের নিখোঁজ হওয়ার কারণ একই কি না। আমাদের
কর্মকর্তারা কাজ করছেন। খুব দ্রুত বিষয়ে ফলাফল দিতে পারবো।
নিখোঁজ
শিক্ষার্থীদের একজনের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেশ ক’ বছর ধরেই সে
ধর্মীয় অনুরাগী হয়ে উঠেছিলো। মোবাইল ফোনে ওয়াজ মাহফিল শোনার পাশাপাশি
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকার মসজিদে গিয়ে ধর্মীয় বয়ান শুনতো এবং ধর্মীয়
বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে অংশ নিতো।
প্রায় কাছাকাছি সময়ে হঠাৎ করে ৬
শিক্ষার্থীর এভাবে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি শঙ্কায় ফেলেছে তাদের অভিভাবকদের।
অভিভাবকরা আশঙ্কা করছেন- উঠতি বয়সী এসব তরুণ শিক্ষার্থীদের হয়তো নানা
প্রলোভন ও ধর্মীয় ভিরুতা দেখিয়ে উগ্র ধর্মীয় গোষ্টির সাথে জড়িয়ে ফেলা
হয়েছে। নিখোঁজদের ফিরে পেতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বিক
সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিখোঁজ ইমরান বিন
রহমানের পিতা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ইমরান খুবই মেধাবী ছাত্র। সে
কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
এসএসসি’র আগ থেকেই সে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতো। কখনোই মিথ্যা বলে না,
কাউকে অসম্মান করে না। বিভিন্ন সময়ে তাবলীগ জামাতের বয়ানে অংশ নিতো,
মোবাইলে ওয়াজ মাহফিল শুনতো। ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় স্টেশন রোড মসজিদে বয়ানে
যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। বাসায় ফিরে এশার নামাজ পড়ার কথা
ছিলো। কিন্তু সে আর বাসায় ফিরেনি। রাত ১১টা পর্যন্ত খোঁজাখোঁজি করে না
পেয়ে আমি বাসায় ফিরে আসি। এসে দেখি, সে অনলাইন ক্লাসের জন্য যে আমার এবং
তার মায়ের মোবাইলগুলো ব্যবহার করতো- সেগুলো রিসেট দেওয়া এবং তার ব্যবহৃত
মোবাইল ফোনটিও ব্যবহার অনুপযোগী করে গেছে। পরদিন আমি থানায় গিয়ে নিখোঁজের
ডায়েরি করি। বিষয়টি র্যাবকেও অবহিত করা হয়েছে। আমি আমার ছেলেটাকে ফেরত
চাই।
তবে নিখোঁজের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে অপর শিক্ষার্থী নিহালের
পিতা মোঃ সাইফুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ নিয়ে গণমাধ্যমের
সাথে কথা বলতে রাজি হননি নিখোঁজ সামির পিতা মাহবুবুর রহমানও।
নিখোঁজ ৬
শিক্ষার্থীর ধর্মীয় উগ্রবাদের জড়িয়ে পড়ার শঙ্কার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আফজল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে নিশ্চিত করে
জোড়ালোভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। আগে তাদের সন্ধান পেতে হবে। বিষয়টি আমরা
ছাড়াও বিভিন্ন বাহিনীও গুরুত্বসহকারে দেখছে বলে জানতে পেরেছি।
এ বিষয়ে
যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার একজন
উপ পরিদর্শক বলেন, শিক্ষার্থী নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে সারা দেশেই বার্তা
পাঠানো হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো ফিরতি বার্তা আমরা পাইনি। পাশাপাশি
স্থানীয়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ, কল রেকর্ডও সংগ্রহ
করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তদন্তে আমরা তাদের ধর্মীয় উগ্র গোষ্ঠির সাথে জড়িত
থাকা না থাকা নিয়ে কোনো তথ্য পাইনি। এ বিষয়টি নিয়ে খুব গুরুত্ব সহকারে কাজ
করা হচ্ছে। বিস্তারিত আপনারা ওসি স্যার ভালো বলতে পারবেন।
জানতে চাইলে
কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার ওসি সহিদুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের নিখোঁজ
হওয়ার বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি। তদন্তাধীন বিষয়ে আর কোনো
মন্তব্য করতে চাই না।
যোগাযোগ করা হলে র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর উপ
পরিচালক ও কোম্পানী অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি
জেনেছি এবং অভিযোগও পেয়েছি। এ বিষয়ে কাজ চলছে।