ঢাকায়
বসে সরকারের মন্ত্রী ও সচিবেরা যখন দেশে সারের সংকট নেই বলে অবিরাম প্রচার
চালাচ্ছেন, তখন মাঠপর্যায়ে কৃষক ডিলারদের কাছে ধরনা দিয়েও সার পাচ্ছেন না।
জামালপুর,
ঠাকুরগাঁও, শেরপুর, পঞ্চগড়সহ অনেক জেলায় কৃষকদের সার না পেয়ে শূন্য হাতে
ফিরে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। জামালপুরে কৃষকেরা সারের দাবিতে ডিলারের
দোকানের সামনে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন।
এখন আমন ধান ছাড়াও রবিশস্য
চাষের প্রস্তুতি চলছে। এ সময় কৃষকের সার ও সেচসুবিধা পাওয়া জরুরি। এর
কোনোটিতে ঘাটতি হলে কৃষিপণ্য উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
৭
সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর জামালপুর প্রতিনিধির পাঠানো খবরে বলা হয়, জামালপুর
সদরের অনেক কৃষক ডিলারের কাছে সার নিতে এসে খালি হাতে ফিরে গেছেন। অনেককে
সার পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। চাহিদামতো সার না
পেয়ে কৃষকেরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন। জেলার সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা
জানিয়েছেন, উপজেলায় চাষের জন্য প্রয়োজন ২ হাজার ৩২৫ মেট্রিক টন সার। পাওয়া
গেছে ৯২৮ টন।
এ চিত্র একটি বা দুটি উপজেলার নয়। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা
থেকে যেসব খবর আসছে, তা উদ্বেগজনক। মাসখানেক আগে সরকার সারের দাম প্রতি
কেজি ছয় টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতেও কৃষকের আপত্তি নেই। তাঁদের উদ্বেগ হলো,
সময় ও প্রয়োজনমতো সার না পেলে চাষাবাদ বন্ধ থাকবে, কৃষিপণ্যের উৎপাদন কমবে।
ঢাকায়
বৈঠক করে ‘সারের অভাব নেই’ বলে মৌখিক আশ্বাস দিলেই এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ
পাওয়া যাবে না। যেসব ডিলার সার সরবরাহে কারচুপি করছেন, বেশি দাম নিচ্ছেন
বা মাপে কম দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ঠাকুরগাঁওসহ
কোথাও কোথাও সেই ব্যবস্থা নেওয়াও হচ্ছে। কিন্তু যেখানে সারের সরবরাহই নেই,
সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত করে কী হবে?
মন্ত্রী-সচিবের বক্তব্য অনুযায়ী
যদি সারের ঘাটতিই না থাকে, তাহলে কৃষকেরা বিক্ষোভ করবেন কেন? অতএব, সরকারকে
সমস্যা অস্বীকার না করে এর গভীরতা বুঝতে হবে। সময়মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ
নিতে হবে।
সার এমন একটি উৎপাদন উপকরণ, যা চাষের সময় চলে যাওয়ার পর পাওয়া
গেলে তা কৃষকের কোনো কাজে লাগবে না। সরবরাহ কেন কম হচ্ছে, সে প্রশ্নের
জবাবও সংশ্লিষ্টদের দিতে হবে।
সরকার নিয়োজিত ডিলার নিয়েও অনেক প্রশ্ন
আছে। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও দলীয় লোকদেরই ডিলারশিপ দেওয়া হয়;
অনিয়ম–দুর্নীতির দায়ে ডিলারশিপ বাতিল হওয়ার পরও তাঁরা বহাল তবিয়তে আছেন।
সার
নিয়ে কারসাজি কিংবা বেশি দাম নেওয়ার বিরুদ্ধে সরকার ভ্রাম্যমাণ আদালত
বসিয়েছে। কয়েকজনকে শাস্তিও দিয়েছেন সেই আদালত। কিন্তু সারের সরবরাহ না
বাড়ালে এসব ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে খুব সুবিধা পাওয়া যাবে না।
ঢাকায় বসে
বক্তব্য না দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের উচিত সরেজমিন মাঠ
পরিদর্শন করা। এতে কৃষকেরা যেমন আশ্বস্ত হবেন, তেমনি অসাধু ডিলাররাও সতর্ক
হবেন।
নিয়মিত সারের বাজার তদারকির পাশাপাশি এর সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিন। এটাই সময়ের দাবি।