আবারও খোলাবাজারে নগদ ডলারের চরম সংকট তৈরি হয়েছে। জোগান না পাওয়ায় খুচরায় নগদ ডলার বিক্রি নেই বললেই চলে। মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর অবস্থাও একই। কোনো মানি এক্সচেঞ্জ হাউজে গেলেই তারা জানতে চাইছেন, কত ডলার বিক্রি করবেন? এরপর বিক্রির বদলে কেনার কথা শুনলেই তাদের আফসোসের কথা জানাচ্ছেন। কারণ বিক্রি করার মতো ডলার তাদের কাছে নেই। ডলার না থাকায় অনেক মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ বন্ধও রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল ও পল্টন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
এসব এলাকার বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ ঘুরে দেখা যায়, এদিন ডলার কেনার ক্ষেত্রে ১০৭ এবং বিক্রির ক্ষেত্রে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দর টানিয়ে রাখা হয়েছে। তবে সাইনবোর্ডে দাম থাকলেও তাদের হাতে নগদ ডলার নেই। বিক্রেতারা বলছেন, আমরা ক্রয় ও বিক্রয়ের তালিকা দিয়েছি। কোনো ডলার পেলে ১০৭ টাকায় কিনবো।
পল্টন এলাকায় এ প্রতিবেদক ডলার বিক্রির কথা বললে চারজন ক্রেতা এগিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে দুইজন এক্সচেঞ্জ হাউজে কর্মরত। সবাই চেয়েছিলেন ডলার যেন তার কাছে বিক্রি করা হয়। জাগলু নামে একজন সর্বোচ্চ ১১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার কিনতে চান। তিনি খুচরায় ডলার কেনাবেচা করেন।
ফকিরাপুলের মনডিয়াল মানি এক্সচেঞ্জ হাউজে ডলারের দামের তালিকা টানানো দেখা যায়। তবে তাদের কাছে কোনো ডলার নেই। ক্রেতা সেজে ওই প্রতিষ্ঠানে ডলার কিনতে গেলে হোসেন নামে এক প্রতিনিধি বলেন, নগদ ডলার নেই। তবে আপনারা ডলার কিনতে চাইলে অন্তত এক ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হবে। অন্য কোনো হাউজ থেকে এনে দিতে পারবো, তবে বেশি টাকা লাগতে পারে।
খুচরা ডলার বিক্রেতা আক্তারের সঙ্গে ক্রেতা হিসেবে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। আক্তার বলেন, আজ কয়েকদিন ধরেই ডলারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে ডলার সরবরাহ নেই। কিছু ডলার পেয়েছিলাম অনেক বেশি দামে। সেগুলো ১১২ টাকার বেশি দামে কেনা পড়েছিল, পরে ১১৫ টাকায় বিক্রি করেছি।
ডলার বিক্রেতা আক্তার জানান, গুলশানে মানি এক্সচেঞ্জ হাউজে ও খুচরায় প্রতি ডলার ১১৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তার কথার সত্যতা যাচাইয়ে গুলশানের কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজে ফোন করা হলে তারা জানান ডলার নেই। তবে অফিসে গেলে অন্য কোথাও থেকে ম্যানেজ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। যদিও দামের কথাটি এসময় এড়িয়ে যান তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন জানান, আজ আমরা প্রতি ডলার ১০৭ টাকায় কিনছি এবং ১০৮ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করছি। বিভিন্ন কারণে বিদেশে যাতায়াত কমে যাওয়ায় ডলার লেনদেনের অবস্থা খারাপ। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে খোলাবাজারে ডলার কেনাবেচা নেই বললেই চলে।
অনেক মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের বিরুদ্ধে বেশি দামে ডলার বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের পদক্ষেপ কী জানতে চাইলে হেলাল উদ্দিন জানান, আমরা পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছি। এমনটা চলতে থাকলে আমরা সংগঠনের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিত অভিযোগ করবো। একই সঙ্গে অনিয়মে জড়িত প্রতিষ্ঠান সাংগঠনিকভাবে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাবে না।
এদিকে, বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার চলমান সংকট কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিলেও তার সুফল মিলছে না। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশে ব্যাংকগুলো নিজেরাই ডলার কেনার সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করেছে। এক্ষেত্রে রেমিট্যান্সে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা এবং রপ্তানি বিল পরিশোধে ৯৯ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া রপ্তানি বিল পরিশোধ ও রেমিট্যান্সের যে গড় আসে তার সঙ্গে এক টাকা যোগ করে আমদানি দায় নিষ্পত্তি করবে ব্যাংকগুলো।
আন্তঃব্যাংকেও ডলারের গড় ক্রয়মূল্য বেড়েছে। একদিনের ব্যবধানে ৪ টাকা ২০ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৬ টাকা ৬০ পয়সা। তবে ডলারের গড় ক্রয়মূল্য বাড়লেও বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। অর্থাৎ বুধবারের মতোই আজ বিক্রয়মূল্য রাখা হয়েছে ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা।
এর আগে গত মঙ্গলবার ব্যাংকে ডলারের গড় ক্রয়মূল্য ছিল ১০১ টাকা ৬৭ পয়সা, যা গতকাল বুধবার বেড়ে হয় ১০২ টাকা ৩৭ পয়সা। আর ব্যাংকগুলোর বিক্রয়মূল্য বেড়ে হয় ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা, যা গত মঙ্গলবার ছিল ১০৬ টাকা ১৫ পয়সা। তবে আজ (বৃহস্পতিবার) ডলারের গড় ক্রয়মূল্য ১০২ টাকা ৩৭ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৬ টাকা ৬০ পয়সা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাফেদার নির্ধারিত দরে ব্যাংকগুলো নিজেরা লেনদেন করবে এবং সেটি আন্তঃব্যাংক লেনদেন হিসেবে বিবেচিত হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের মতো প্রতিদিন ডলার বিক্রি করবে না। তবে প্রয়োজন হলে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করবে। কিন্তু আন্তঃব্যাংকের রেট বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিক্রির রেট হবে না।