উদ্ধারের একদিন পর রহিমা রহিমা বেগমকে রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে শুনানির পর তাকে নিজ মুচলেকায় মামলার বাদী মেয়ে আদুরির জিম্মায় মুক্তি দিয়েছেন। পরে তাকে বয়রা এলাকায় ছোট মেয়ে আদুরীর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান বলেন, ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক আল আমিনের কাছে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন রহিমা বেগম। জবানবন্দি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৪ এর বিচারক সারওয়ার আহমেদের আদালতে তাকে হাজির করা হয়। এরপর তারই মুচলেকায় মেয়ের জিম্মায় মুক্তি দেওয়া হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আফরুজ্জামান টুটুল বলেন, ওই নারী আদালতকে তার অপহরণের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, জমিজমা নিয়ে যাদের সঙ্গে বিরোধ ছিল মূলত তারাই তাকে অপহরণ করে। পরে সেখান থেকে তিনি মুকসুদপুর ও ফরিদপুরে আসেন। মামলায় যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে ৪/৫ জন অপহরণের সঙ্গে জড়িত।
খুলনা পিবিআই পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, শনিবার দিনগত রাতে কেএমপি পুলিশ রহিমাকে উদ্ধার করে খুলনায় নিয়ে আসে। রাতে তাকে খুলনার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়। রবিবার সকালে পুলিশ তাকে পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করে। এরপর পিবিআই রহিমার সঙ্গে একা কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি মুখ খোলেননি। দুপুরে সন্তানদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ করানো হয়। এরপর তাদের একত্রে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ অবস্থায় রহিমাও কথা বলেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকালে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
এদিকে রহিমার পরিবারের দাবি, গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন তিনি। একঘণ্টা পার হলেও তিনি বাসায় ফিরে আসেননি। পরে মায়ের খোঁজে সন্তানরা সেখানে গিয়ে তার ব্যবহৃত স্যান্ডেল, গায়ের ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে সন্ধান নেওয়ার পর মাকে পান না তারা। এরপর সন্তানরা সাধারণ ডায়েরির পাশাপাশি কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার তদন্তকালে পুলিশ ও র্যাব ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় জনকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ, জুয়েল ও হেলাল শরীফ।
এ অবস্থায় বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে নথিপত্র ১৭ সেপ্টেম্বর বুঝে নেয় পিবিআই খুলনা। এখন এই মামলা তদন্ত করছেন পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান। ২২ সেপ্টেম্বর রহিমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন, তার মায়ের লাশ তিনি পেয়েছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে দিনভর অবস্থান নেন এবং ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করেন। একইসঙ্গে সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক মহিলার লাশকে নিজের মা বলে শনাক্ত করেন। পরে ডিএনএ প্রোফাইল করার জন্য সম্মত হন।