চলতি বছরে এক দিনে সবচেয়ে বেশি রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে শনিবার। সারা দেশে এ সময় ৬৩৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা এখন ২ হাজার ১৫৮ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৫০টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে ১ হাজার ৬৫৮ জন এবং বিভিন্ন জেলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫০০ জন।
ডেঙ্গু নিরসনে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারপরও বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ডেঙ্গু নিরসনে কাজ করছি। পরিস্থিতি এখনো আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।’
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই কীভাবে এক দিনে এতো রোগী পাওয়া গেল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এমন তো নয় যে লাগামহীনভাবে বেড়েছে। একদিনে বেড়েছে বলে অস্থিরতা বাড়ানো যাবে না। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এসব দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ। আমাদেরকে পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করতে হবে। অক্টোবরের মাঝামাঝিতে আমরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসব।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ইমিরেটাস অধ্যাপক এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবিএম আবদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার কারণ এবার থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়া। যার কারণে পানি জমেছে বেশি।
‘সিটি করপোরেশন বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাজ ঘরের বাইরে। কিন্তু ঘরে আমাদের সচেতন হতে হবে। বাচ্চারা দিনের বেলায় ঘুমালে মশারি দিতে হবে। পাতলা ফুলহাতা পোশাক এবং মশার কামড় নিরোধক ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। আর কোনোভাবেই পানি জমতে দেয়া যাবে না। এতে হয়তো ডেঙ্গু নির্মুল করা সম্ভব নয়, তবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে। আমাদের প্রেডিকশন মডেল অনুযায়ী সেটাই হচ্ছে।
‘আমরা হটস্পট ম্যানেজমেন্ট চালু করার কথা বলেছি। হটস্পট ম্যানেজমেন্ট বলতে যেসব হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছে, সেখান থেকে রোগীর বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের বাড়ির আশপাশে ৫০০ গজের মধ্যে ফগিং করে উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে ফেলা। সেটিও পুরোপুরি হচ্ছে না। এটা শুধু ঢাকায় না, যেসব জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে সবগুলোতেই চালু করতে হবে।’
গত সেপ্টেম্বরে দেশে সর্বমোট ৯ হাজার ৯১১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। যার মধ্যে মারা গেছে ৩৪ জন রোগী।
আর জানুয়ারি থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ১৬ হাজার ৭২৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে ১৪ হাজার ৫১৩ জন রোগী।