Published : Sunday, 2 October, 2022 at 12:00 AM, Update: 02.10.2022 12:31:00 AM
রণবীর ঘোষ কিংকর।
সৃষ্টি-স্থিতি
বিনাশীনি দেবী দুর্গার আজ মহাসপ্তামী। ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর ঘুম
ভাঙানোর বন্দনায় গতকাল শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয়
উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আনন্দময়ী দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা ও বন্দনায় এখন
চারদিক মুখরিত। কুমিল্লার প্রতিটি পূজা মন্ডপে উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত
হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
গতকাল মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে মহিষাসুর বধে
খড়গ-কৃপাণ, চক্র-গদা, তীর-ধনুক আর ত্রিশুল হাতে প্রতিটি মণ্ডপে অধিষ্ঠিত
হলেন দুর্গতি নাশিনী দেবী দুর্গা। আজ রবিবার (২ অক্টোবর) পঞ্জিকার তিথি
অনুযায়ী দেবী বন্ধনার মহাসপ্তামী। ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিন ব্যাপী
দেবী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও সপ্তমী তিথিতে দেবীকে স্নান করিয়ে তার
পায়ে পুষ্পাঞ্জলীর মাধ্যমে দেবীর চরণে পুষ্পার্ঘ অর্পন করবেন সনাতন
ধর্মাবলম্বীরা।
সকাল থেকে চণ্ডিপাঠে মুখরিত ছিল বিভিন্ন পূজা মন্ডপ
এলাকা। আজ রবিবার মহাসপ্তমী। পঞ্চিকার তিথি অনুযায়ী সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের
মধ্যে দুর্গা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও
মহাসপ্তমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। মাতৃ বন্দনায় দেবীর পায়ে পুষ্পার্ঘ
অর্পণ করে সন্ধ্যায় সন্ধ্যা আরতি ও মন্ডপ ঘুরে মায়ের চরণ দর্শণে নামবেন
ভক্তরা।
দেবী পক্ষের পঞ্চমী তিথি শুক্রবার (৩০) রাত থেকে দেবীর বোধন ও
শনিবার (১ অক্টোবর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গতি নাশিনী দেবী দুর্গা
স্ব-পরিবারে স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যলোকে এসেছেন এমন বিশ্বাস নিয়ে
মাতৃবন্ধনা শুরু করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়। শনিবার সন্ধ্যায়
মঙ্গলঘট স্থাপন শেষে মহাষষ্ঠী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
সনাতন শাস্ত্রানুসারে
মা দুর্গা হচ্ছেন আধ্য শক্তি দেবী ভগবতি। তার বহুরূপ। পর্বতরাজ হিমালয়ের
কন্যা বলে তিনি পার্বতী। আবার দুর্গম নামক অসুরকে বধ করে ছিলেন বলে তার
অন্য নাম দুর্গা। আবার তিনিই চন্ডী, মহিষাসুরমর্দিনী।
পূজা শেষে সনাতন
ধর্মাবলম্বীরা ভক্তি শ্রদ্ধার সাথে ভক্তবৃন্দ মা রূপের দেবী দুর্গার নিকট
নিজের, পরিবারের ও দেশ-জাতির মঙ্গল প্রার্থনা করে চন্ডী শ্লোক “রূপং দেহি,
জয়ং দেহি, যশো দেহি, দ্বিষো জহি (অর্থাৎ হে দেবী তুমি আমাকে রূপ দাও, জয়
দাও, যশ দাও এবং শত্রুর কবল থেকে মুক্ত কর)” পাঠ করে দেবীর চরণে
ফুল-বেলপাতায় পূষ্পাঞ্জলী অর্পন করবেন। সপ্তমী পূজা শেষে সন্ধ্যা আরতিতে
ঢাক-ঢোল কর্তালের বাজনায় মুখোরিত হবে প্রতিটি পূজা মন্ডপ। সন্ধ্যা আরতি
থেকে শুরু করে প্রতিটি পূজা মন্ডপে আজ থেকে ঢল নামবে দর্শনার্থীদের।
জেলা
পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি চান্দিনা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা
তপন বক্সী জানান, শাস্ত্র মতে দুর্গা পূজা শুরু হয় বসন্তকালে যার কারণে
মায়ের ওই পূজাকে বাসন্তি পূজা। আর রাম চন্দ্র তার স্ত্রী হরণের পর রাবনকে
বধ করার উদ্দেশ্যে শক্তিধারণের জন্য শরৎ কালের এই তিথিতে পূজা করে
দুর্গাদেবীকে আরাধনা করার পর থেকে শারদীয় দুর্গা পূজা আরম্ভ হয়। ওই
ধারাবাহিকতায়ই আমরা দেশ-জাতি, ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সকলের মঙ্গল কামনা করে
শারদীয় দুর্গা পূজা করে থাকি।