ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামাই পেলেন ৯ মহিষ, শ্বশুর ৮
Published : Thursday, 6 October, 2022 at 12:00 AM
উচ্চ আদালতের নির্দেশে লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে আবদুল অদুদ খান নামের এক ব্যক্তিকে ৯টি মহিষ ও তার শ্বশুর নুর মোহাম্মদকে ৮টি মহিষ বুঝিয়ে দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
বুধবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন মহিষগুলো উভয়পক্ষকে বুঝিয়ে দিয়ে দেন।
মহিষের জিম্মাদার ও রামগতি উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন জসিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ২৩ জুন হাইকোর্টের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড মহিষের মামলাটি সমাধান করে দিয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৭টি মহিষের মধ্যে অদুদকে পাঁচটি বড় ও চারটি ছোট মহিষ দেওয়া হয়েছে। তার শ্বশুর নুর মোহাম্মদকে ছয়টি বড় ও দুটি ছোট মহিষ বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, অদুদ রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ইউনিয়নের সুজন গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সৌদি প্রবাসী ছিলেন। ২০১১ সালে পাঁচটি গরু ও আটটি মহিষ কিনে ওদুদ তার শ্বশুর চরআলগী ইউনিয়নের চর নেয়ামত গ্রামের নুর মোহাম্মদের কাছে পালন করতে দেন। ২০১৯ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ৯ বছরে গরু ও মহিষগুলো বাছুর জন্ম নেয়। এতে বৃদ্ধি পেয়ে সাতটি গরু ও ২০টি মহিষ হয়।
দেশে ফেরার পর গরু ও মহিষগুলো ফেরত চাইলে ওদুদের শ্বশুর দিতে অস্বীকার জানান। পরে ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বাদী হয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (রামগতি) আদালতে মামলা করেন অদুদ।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল ইসলাম মামলাটি তদন্তের জন্য রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। এর অনুলিপি চরবাদামের ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন জসিমকেও দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রামগতি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান তফাদার ১৭টি মহিষ ও পাঁচটি গরু নুর মোহাম্মদের কাছ থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। একই বছরের ৪ মার্চ তিনি গরু উদ্ধারের পর মহিষ ও গরুগুলো পালনের জন্য চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেনের জিম্মায় দেন।
এ নিয়ে ওইদিন তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে প্রতিবেদনও জমা দেন। আদালতের নির্দেশে গত ৮ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান জসিম পাঁচটি গরু অদুদকে ফেরত দেন। কিন্তু মহিষগুলো ফেরত দেননি। প্রায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের মহিষগুলো ফেরত দিতে চেয়ারম্যানকে ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের আইনজীবী মুহাম্মদ রহমত উল্যাহ বিপ্লব লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
এরপর দুবার পুলিশ ওই চেয়ারম্যানকে মহিষগুলো ফেরত দিতে নোটিশ দেয়। কিন্তু তিনি তা কর্ণপাত করেননি। সবশেষ চলতি বছরের ৩১ মার্চ মহিষগুলো ফেরত দিতে আদালতের আদেশে এসআই মজিবুর রহমান ফের নোটিশ দেন। এতেও চেয়ারম্যান মহিষগুলো ফেরত দেননি। পরে নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে আবেদন করেন শ্বশুর নুর মোহাম্মদ। লক্ষ্মীপুরের দায়রা জজ মো. রহিবুল ইসলাম ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ বহাল রাখেন। সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আসেন শ্বশুর।
পরে মামলার বিষয়বস্তু শোনার পর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ সালিশের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উভয় পক্ষকে নির্দেশ দেন। দায়িত্ব দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসকে। গত ২৩ জুন দীর্ঘ চার ঘণ্টা ধরে চলা সালিশ বৈঠকের পরই বিরোধ নিষ্পত্তি হয় জামাই-শ্বশুরের।
সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৭টি মহিষের মধ্যে পাঁচটি বড় ও চারটি ছোট মহিষ পাবেন অদুদ। আর ছয়টি বড় ও দুটি ছোট মহিষ নেবেন শ্বশুর। বিরোধ নিষ্পত্তির এ সিদ্ধান্ত হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে জানানো হবে।
রামগতি থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্বশুরকে ৮টি ও জামাইকে ৯টি মহিষ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরমধ্যে আলোচিত এ ঘটনাটির সমাধান হলো। তাদের মিলেমিশে থাকার জন্য বলা হয়েছে।