সাঈদ হাসান, কুবি ||
কুমিল্লা
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নাটকীয় কমিটি বিলুপ্তিকে কেন্দ্র করে
বিবাদমান দুই গ্রুপের সম্ভাব্য সংঘর্ষ এড়াতে গত ২ অক্টোবর (রবিবার)
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জরুরি মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের
সবগুলো আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এমনকি ১০
অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবরের সকল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। কিন্তু এখন কমিটি
নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে যাওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে আবাসিক হল গুলো খুলে দেয়ার
দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর একাধিক
শিক্ষার্থী জানান, একটা পক্ষের রাজনীতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ
থাকতে পারে না। প্রশাসনের এই হঠাৎ সিদ্ধান্তে অনেক শিক্ষার্থীকে বিপাকে পড়ে
আশেপাশের মেসে উঠতে হয়েছে। অনেককেই তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়িতে চলে যেতে
হয়েছে। আবার অনেকে আর্থিক সমস্যা ও বাড়ি দূরে হওয়ায় যেতে পারেনি। এখন
প্রশাসনের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে হল খুলে দিলেই শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণ
হয়।
এছাড়া অনেকেই পূজার বন্ধে দুয়েকদিনের প্রস্তুতি নিয়ে বাড়িতে গেছেন।
কিন্তু প্রশাসন হঠাৎ হল বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় তারা বাড়ি থেকেও আসতে পারেননি।
দীর্ঘসময় বাড়িতে থাকার মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও হল থেকে নিয়ে যেতে
পারেননি। এদেরও অনেকেই পড়েছেন বেশ বিপাকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপগুলোতে অনেকেই লিখেন, ছাত্রলীগের কমিটি
বিলুপ্ত নিয়ে ধোঁয়াশার বিষয়টি যেহেতু শেষ হয়েছে এখন হলগুলো খুলে দিয়ে
নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষাগুলো নেওয়া হোক। ঠিক সময়ে পরীক্ষা না হলে সেশনজটের
আশঙ্কা করছেন তারা।
কবে নাগাদ হল খুলে দিতে পারে এব্যাপারে প্রক্টর
(ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, শিগগিরই
একটি মিটিং করে আমরা সিদ্ধান্ত নিবো। এদিকে হল খুলে দেয়া ও শিডিউলের
পরীক্ষাগুলো চলমান রাখতে উপাচার্য বরাবর স্বাক্ষরলিপি দেওয়া হয়েছে বলে
জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ।
উপাচার্য
অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, পরিস্থিতি যখন আমরা ভালো দেখবো তখন হল
খুলে দিবো। আমাদের ক্লাস কিন্তু বন্ধ হয় নাই, পরীক্ষা স্থগিত করেছি। হল
খুললে অছাত্র-বহিরাগত কাউকেই হলে ঢুকতে দিবোনা এবং শিক্ষার্থীদের আইডি
কার্ড দেখিয়ে ঢুকতে হবে। আমি একদিনের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখতে চাই
না, শান্তিপূর্ণ অবস্থা অবশ্যই থাকা লাগবে। বন্ধ থাকলে তো শিক্ষার্থীদের
ক্ষতি।
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) মধ্যরাতে কেন্দ্রীয়
ছাত্রলীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা
ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তের ঘোষণা দেয়া হয়। এবং আধা ঘণ্টার ব্যবধানে ফেসবুক
পেইজ থেকে প্রেস রিলিজটি আবার সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু এরমধ্যেই ছাত্রলীগের
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং তার অনুসারীরা
নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে
কমিটি বিলুপ্তের প্রেস রিলিজটি আপলোড করতে থাকেন। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক
লেখক ভট্টচার্য্য এবং তার অনুসারীরা সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন যে কমিটি
বিলুপ্ত হয়নি। যার ফলে সবার মধ্যে কমিটি বিলুপ্তি নিয়ে একটি ধোঁয়াশার
সৃষ্টি হয়।
পরবর্তীতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১ অক্টোবর (শনিবার)
ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ বাইক শোডাউন দেয়। এবং শোডাউন
থেকে ক্যাম্পাস অভ্যন্তরে ফাঁকা গুলি এবং ককটেল বিষ্ফোরণ করা হয় বলে অভিযোগ
উঠে। এর জের ধরে আরেকটি পক্ষ ক্যাম্পাসে অস্ত্র মহড়া দেয়। যার ফলে
পরিস্থিতি থমথমে হয়ে ওঠে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জরুরী মিটিংয়ের
সিদ্ধান্ত মোতাবেক সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আবাসিক
হল গুলো বন্ধ করে দেয়া সহ ৫ দফা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
কিন্তু গত ৩
অক্টোবর (সোমবার) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের লাইভ টক শো’তে কেন্দ্রীয়
ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান জয় কমিটি বিলুপ্ত না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত
করেন। এবং টকশোতে আসার ঠিক ১৫ মিনিট পূর্বে নিজের ফেসবুক ওয়াল থেকেও কমিটি
বিলুপ্তের প্রেস রিলিজটি সরিয়ে নেন। যার ফলে তিন দিন ধরে কমিটি নিয়ে সৃষ্ট
ধোঁয়াশা পুরোপুরিই কেটে যায়।