ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
‘ভোটে না এলে কিছু করার নেই’
Published : Friday, 7 October, 2022 at 12:00 AM
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

প্রধানমন্ত্রী মাঝে বলেছিলেন, বিরোধী দল চাইলে গণভবনে চায়ের আমন্ত্রণে আসতে পারে। সেই প্রসঙ্গটি তুলে ধরে একজন গণমাধ্যমকর্মী জানতে চান, নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দলগুলোকে এবার চায়ের আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে একটু চিন্তা করতেই হবে। অনেকে আসবেও না, আসতেও পারবে না। এটা একটা সমস্যা।’
চলমান করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার সুযোগ নেই বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি কয়েক মাস আগে বিরোধীদেরকে গণভবনে যে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, সেটিও আর নেই বলে ইঙ্গিত দিলেন তিনি।
নির্বাচনে অংশ নেয়া, না নেয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি বলেছেন, সেখানে কিছু চাপিয়ে দেয়া যায় না, কিছু করারও থাকে না। আর ‘খুঁটির জোর’ ও জনসমর্থন না থাকায় বিএনপি বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন সরকারপ্রধান।
গণভবনে বৃহস্পতিবার বিকেলে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বিদেশ সফর করলে বরাবর সাংবাদিকদেরকে ব্রিফ করেন। সেই ব্রিফিংয়ে সফরের বিষয়ে একটি সাধারণ বিবৃতি থাকে। এরপর থাকে প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্বে আর্থ-সামাজিক বা রাজনৈতিক সবশেষ পরিস্থিতির সম্পর্কে সরকার প্রধানের বক্তব্য উঠে আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
অন্যান্য অনেক প্রশ্নের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির অবস্থান নিয়ে, যারা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হলে ভোটে না আসার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
১৯৯৬ থেকে তিনটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হলেও গত দু্টি নির্বাচন হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্বে থাকাকালে।
২০০৯ উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করলে নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের পদ্ধতি ফিরিয়ে আনে জাতীয় সংসদ।
এর প্রতিবাদে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে যায় বিএনপি ও শরিকরা। তবে নির্বাচন ঠেকানো যায়নি। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও বিএনপি ও তার জোট শেষ পর্যন্ত ভোটে আসে এবং ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল করে।
সেই নির্বাচনে আগের রাতে ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে বিএনপি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে। এর অংশ হিসেবে গত ২২ আগস্ট থেকে ধারাবাহিক নানা কর্মসূচি পালন করছে।

চায়ের আমন্ত্রণ কি আছে?:
প্রধানমন্ত্রী মাঝে বলেছিলেন, বিরোধী দল চাইলে গণভবনে চায়ের আমন্ত্রণে আসতে পারে। সেই প্রসঙ্গটি তুলে ধরে একজন গণমাধ্যমকর্মী জানতে চান, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলগুলোকে এবার ‘চায়ের আমন্ত্রণ’ দেয়া হবে কি না।
জবাবে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে একটু চিন্তা করতেই হবে। অনেকে আসবেও না, আসতেও পারবে না। এটা একটা সমস্যা।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করলেও তার অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নাখোশ, তা বোঝা গেল তার কথায়।
তিনি বলেন, ‘গতবার যে সবার সঙ্গে বৈঠক করলাম, আলোচনা করলাম একটা নির্বাচন, নির্বাচনে এসে দেখা গেল ৩০০টিতে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে যখন নিজেরা হেরে গেল, তখন সব দোষ কার, আমাদের।’

‘নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারি না’:
আগের কথার রেশ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যে, আর নির্বাচন হলে রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত কে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, কে করবে না। সেখানে আমরা কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না। রাজনীতি করতে হলে দলগুলো নিজের সিদ্ধান্ত নেবে।’
তবে সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে বলে- এটাই নিজের চাওয়া বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই চাই যে সবদল অংশগ্রহণ করুক। কারণ এতদিন কাজ করার পর নিশ্চয়ই আমরা চাইব যে সবাই আসুক।’
দেশের জনগণের কাছে বিএনপির ভোট চাওয়ার মুখটাও নেই বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ প্রধান। বলেন, ‘তারা আর কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে? আগুন দিয়ে পোড়ানো, মানুষ খুন করা, বোমা মারা, গ্রেনেড মারা-সব জায়গাতে তো আছে। তারা যদি সামনে এসে দাঁড়ায়, ভোট চাইতে আসছেন, আমার এই অবস্থা। কী জবাব দেবে বিএনপি? এজন্যই বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে বেড়ায়। দেশের মানুষের কাছে যায় না।’

আন্দোলনে বাধা নেই:
গত জুলাই থেকে বিএনপির নানা কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে পাঁচ জনের মৃত্যু ও অনেক নেতা-কর্মী আহত হলেও প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, বিএনপির আন্দোলনে সরকার কোনো বাধা দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা তো বাধা দিচ্ছি না। আমরা তো বলছি আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন, যত আন্দোলন করবে তত ভালো। করে না তো, কী করব?’
ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পরবর্তী বছরই তো ইলেকশন। নির্বাচনের প্রস্তুতিও আমরা এখন থেকে নিচ্ছি। আমাদের দল বোধ হয় বাংলাদেশে একটি মাত্র দল আমরা আমাদের গঠনতন্ত্র মেনে চলি। প্রতিটি ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র মোতাবেক আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নিই।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমাকে নিয়ে লেখালেখির এত দরকার নেই। আমি জনগণের সেবা করতে এসেছি। আমার বাবা দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই আমার লক্ষ্য। আমার নিজের তো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। আমার দেশের মানুষের জন্য কতটুকু কী করতে পারলাম, কতটুকু দিতে পারলাম, এটাই হচ্ছে আমার সব থেকে বড় পাওয়া।’

‘ভোট চুরি করে আ.লীগ ক্ষমতায় আসেনি, আসবেও না’:
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্তত আওয়ামী লীগ কখনও ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসবেও না, আসেও নি। আওয়ামী লীগ কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় এসেছে।’
জনগণের জন্য কাজ করে, জনগণের মন জয় করে, জনগণের ভোট নিয়েই আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় এসেছে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনও কোনো মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে বের হয়নি। ইমার্জেন্সি দিয়ে কারও ক্ষমতা দখল করেও কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনও ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসছে, ভোটের মাধ্যমেই এসেছে, নির্বাচনের মাধ্যমেই এসেছে।
‘এদেশে নির্বাচনের যতটুকু উন্নতি, যতটুকু সংস্কার এটা কিন্তু আওয়ামী লীগ ও সবাইকে নিয়ে মহাজোট করেই কিন্তু করে দিয়েছি। এরপর যদি কেউ না আসে, সেখানে আমাদের কী করণীয়? হারার ভয়ে আসব না, বা কিছু বা একেবারে লোকমা তুলে খাইয়ে দিতে হবে, তবেই আসব, এটা তো হয় না।’

‘সেনাশাসনে জন্ম হওয়া বিএনপি জনগণের কাছে যেতে ভয় পায়’:
সামরিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিএনপির জন্ম জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিলিটারি ডিক্টেটররা এভাবে করেছে। যাদের এই অভ্যাস, তারা তো জনগণের কাছে যেতেই ভয় পায়। জনগণের সামনে ভোট চাইতেই ভয় পায়, এটা বাস্তবতা। অগ্নিসন্ত্রাস করে যারা মানুষ হত্যা করেছে, তাদেরকে কী মানুষ ভোট দেবে? কখনও দিতে পারে না। সে পোড়া ঘা তো এখনও শুকায়নি। এখনও তো কষ্ট পাচ্ছে, গ্রেনেড হামলায় যারা আহত।’
খুঁটির জোর আর জনসমর্থন নেই বলেই বিএনপি জনগণের কাছে না গিয়ে বিদেশিদের কাছে দৌড়ে বেড়াচ্ছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি ভুলে গেছে তাদের অতীতের কথা। বিএনপির সৃষ্টি যেভাবে, একটা মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে বিএনপির সৃষ্টি। আর নির্বাচনের যে প্রহসন, সেটাও তাদের সৃষ্টি, তারা তৈরি করেছে। বরং নির্বাচনটাকে আমরা জনগণের কাছে নিয়ে গেছি।’
বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি মাটিতে জোর থাকত, নিজের দেশের মাটিতে যদি তাদের সে রকম সমর্থন থাকত, আর ওই যে বলে না খুঁটিতে যদি জোর থাকত, অর্থাৎ নিজের শেকড়ের জোরটা যদি এখানে থাকত তাহলে তো বিদেশে ধরনা দেয়ার দরকার হতো না। ‘জনসমর্থন থাকলে, জনগণের ওপর আস্থা থাকলে, বিশ্বাস থাকলে জনগণের কাছেই যেত। বিদেশের কাছে দৌড়ে বেড়াত না, এটাই হলো বাস্তবতা।’