ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ভোট বন্ধে সিইসির শাস্তির দাবিতে আ.লীগের বিক্ষোভ
Published : Thursday, 13 October, 2022 at 12:00 AM, Update: 12.10.2022 11:55:19 PM
ভোট বন্ধে সিইসির শাস্তির দাবিতে আ.লীগের বিক্ষোভগাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে গোপন কক্ষে ‘ডাকাতের’ উপস্থিতি দেখে ভোট বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে নির্বাচনি এলাকায়। সিইসি ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানোর ঘণ্টা দেড়েক পর বিকেল ৪টার দিকে সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা-বোনারপাড়া সড়কের চৌমাথা মোড়ে অবস্থান নেয় নেতা-কর্মীরা। সেখানে তারা প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থান নেন। এরপর বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয় সবাই। এ ছাড়া বেশ কিছু স্থানে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়েও প্রতিবাদ করেন নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন সব যাচাই বাছাই না করে অতি নিরপেক্ষতা দেখাতে গিয়ে ভোট বন্ধ করে দিয়েছে। খবর নিউজ বাংলার।
ফুলছড়ি উপজেলাতেও বিক্ষোভ করেন নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম সেলিম পারভেজ বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ভোট বন্ধ করাটা মেনে নেয়া যায় না। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত ছিল।’
তিনি বলেন, সাধারণ ভোটারসহ নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ চলছে। এ নিয়ে পরবর্তীতে আমরা কর্মসূচি দেব।’
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এই আসনের উপনির্বাচনটির দিকে দৃষ্টি ছিল এই কারণে যে, গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রথম কোনো সংসদীয় আসনে ভোটের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশন অনিয়ম হলে ভোট বন্ধ করে দেয়া হবে, এই ঘোষণা আগেই ছিল। বর্তমান কমিশনের অধীনে প্রথম ভোট হয় গত ১৫ জুন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদে সেই ভোটের আগে আগে বেশ কিছু এলাকায় নির্বাচন স্থগিত করা হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বা তাদের সমর্থকদের আচরণে। তবে ভোট চলার দিন নির্বাচন স্থগিত করার ঘটনা এই প্রথম ঘটল।
নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে এই ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এর বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখানো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এই বক্তব্যের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কী ভাবছে, সেই বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সিইসি ছাড়াও নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব, রাশেদা সুলতানা ও মো. আলমগীরের প্রতিক্রিয়া জানতে তাদেরকে কল করা হলেও কেউ তা রিসিভ করেননি।
বুধবার সকাল থেকে গাইবান্ধা-৫ আসনে উপ-নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ আসতে থাকে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোটারের পরিচয় শনাক্তের পর গোপন কক্ষে থাকা ব্যক্তি নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ আসতে থাকে। নির্বাচন কমিশন একাধিকবার এই ব্যক্তিতের ‘ডাকাত’ উল্লেখ করে বলেছে, ডাকাত ঠেকানোই তাদের চ্যালেঞ্জ।
তবে এই ডাকাত ঠেকানো যায়নি। ১৪৫টি কেন্দ্রে স্থাপন করা এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ ঢাকায় বসেই পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন। এরপর একে একে ৫১টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়।
এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী মাহমুদুল হাসান রিপন ছাড়া বাকি চারজন জাতীয় পার্টির এ এইচ এম গোলাম শহীদ রনজু, কূলা প্রতীকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম, আপেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ (আপেল) ও ট্রাক প্রতীকে আরেক নির্দলীয় প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
দুপুরের আগে আগে সিইসি বলেন, ভোটের পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এর ঘণ্টা দুয়েক পরে তিনি ভোট বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানান।
কাজী হাবিবুল আউয়ার বলেন, ‘আমরা পরিশেষে এ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সমগ্র কন্সটিটিউয়েন্সিৃ পুরো নির্বাচনৃ গাইবান্ধা-৫ নির্বাচনি এলাকার ভোট কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। সে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে (রিটার্নিং কর্মকর্তাকে)।
ভোটে জোর খাটানোর যে অভিযোগ, সেটি স্পষ্টতই নৌকার প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপনের বিরুদ্ধে। নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি আসেন সংবাদ সম্মেলনে।
তার দাবি, কোনো বাস্তবসম্মত যৌক্তিক ছাড়াই নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে, যা সাধারণ ভোটারদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এরপর নির্বাচন কমিশন হঠাৎ করেই ভোট বন্ধ করে দেয়।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান দাবি করেছেন, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা রহস্যময়। তার কর্মীরা ভোটে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেনি তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত ভোটারসহ এলাকাবাসীকে হতবাক ও মর্মাহত করেছে। তবে বৃহত্তর স্বার্থে আমরা বিক্ষুব্ধদের শান্ত করেছি।’
তিনি বলেন, 'আমি বা আমার নেতা-কর্মীরা এমন কোনো কাজ করেনি যা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করেছে। পুরো বিষয়টিই আমার কাছে রহস্যময়। এটা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে।
'আমার কাছে পুরো বিষয়টিই রহস্যময়। আমি এর কোনো কুলকিনারা পাচ্ছি না। তবে এটা স্পষ্ট করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।'
কমিশনের সিদ্ধান্তে দারুণ খুশি লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী গোলাম শহীদ রনজু। তিনি এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু ভোটে আজ কী হয়েছে সেটা দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'
এরপর গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে জি এম কাদের বলেন, ‘সকাল থেকেই প্রায় শতভাগ কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্টদের জোর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা। তারা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিয়েছে, আবার ভোট কেন্দ্রের গোপন কক্ষে সন্ত্রাসীরা অবস্থান করে ভোটারের ইচ্ছার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। এ সব কারণে, ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করেছে। এজন্য আমরা জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’