ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
শান্ত ক্যম্পাসে স্থগিত আছে পরীক্ষা, ক্ষোভ শিক্ষার্থীদের
Published : Sunday, 16 October, 2022 at 12:00 AM
সাঈদ হাসান, কুবি ||
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের নাটকীয় কমিটি বিলুপ্তিকে কেন্দ্র করে বন্ধ ক্যাম্পাসে বিবাদমান দুই গ্রুপের অস্ত্রের মহড়ায় ২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জরুরি সভায় ১০ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৮ দিন সকল পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এছাড়া গত মাসে ২ হলে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি পরিস্থিতি চিন্তা করে  ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর ২ দিন বন্ধ রাখে  সকল পরীক্ষা।
তবে এসকল ঘটনার কোন সুষ্ঠু তদন্ত কিংবা ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে। আবার ২ অক্টোবরের ঘটনায় ক্যম্পাসে অস্ত্রসহ ছাত্রলীগের দু'গ্রুপের  অস্ত্র নিয়ে মহড়ার পরে প্রশাসন দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরিক্ষা স্থগিত রাখায় শিক্ষাজীবন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ৮দিনে বিভিন্ন বিভাগের ২৭টি সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত হয়ে আছে। যার মধ্যে স্নাতকের ২৪টি ও স্নাতকোত্তরের ৩টি ফাইনাল পরীক্ষা আটকে আছে। গত মাসেও ২দিনে ৯টি সেমিষ্টার পরীক্ষা স্থগিত ছিল। এছাড়াও এসময়ে ইনকোর্স পরীক্ষাগুলো বন্ধ রয়েছে বলে জানা যায়।
ফলে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে অবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে ছাত্রলীগের এসকল সংঘর্ষ এবং ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অস্ত্রের মহড়ায় সরাসরি ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। গত ২ অক্টোবর তারিখে ''প্রক্টরের উপস্থিতিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রসহ বহিরাগতদের মহড়া'' এবিষয়ে গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশিত হয়।
যদিও এ অভিযোগের বিষয়ে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, মামলা হওয়ার পর তদন্ত হলে বুঝা যাবে কারা বহিরাগত। তারপর আমরা ব্যবস্থা নিব। ইন্দনের বিষয়ে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করবো না। যারা অভিযোগ দিয়েছে তাদেরকে নিয়ে আসেন আমি তাদের সাথে কথা বলবো।
এর আগে ২ হলের মারামারিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়। এতে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ও প্রক্টরিয়াল টিমের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে, প্রক্টর সেখানে উপস্থিত থেকেও উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো তিনি এই সংঘর্ষকে বিভিন্নভাবে উস্কে দিয়েছেন।
প্রশাসন চলমান পরীক্ষাগুলো স্থগিত করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনার্স এর ৪ বছর পার হয়ে গেছে। আমি আছি মাত্র ৭ম সেমিস্টারে। ৭ম সেমিস্টারের পরীক্ষার ডেইট হলেও এখন পরীক্ষা আর হচ্ছে না। এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পরীক্ষা স্থগিত করলো প্রশাসন, কিন্তু সামনে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। এমতাবস্থায় আর আমি কবে পড়াশুনা শেষ করতে পারবো এটা নিয়ে শঙ্কায় আছি।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ক্যাম্পাসে যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে, সেটার দায় কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের? যার শাস্তি হিসেবে পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে? প্রশাসন নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, তাই  এমন ঘটনা ঘটেছে।  নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে যদি বিচার করতো তাহলে এই রকম ঘটনা হত না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের তো কোন দোষ নাই, তবে ভোগান্তি গুলো আমাদের কেন পোহাতে হচ্ছে? বিশ্ববিদ্যালয় কাদের জন্য তবে?
অর্থনীতি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী তানভীরুল ইসলাম বলনে, আমাদের আর ১টা মাত্র পরীক্ষা বাকি ছিলো কিন্তু পরিক্ষা স্থগিত হওয়ায় সেটি এখনও আটকে আছি। এটা খুবই হতাশাজনক একটা ব্যাপার।
লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ তুচ্ছ ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে এভাবে পরীক্ষা বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছে। আইন প্রয়োগ ও শাস্তি কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। গুটিকয়েক শিক্ষার্থীর জন্য আমাদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী অধ্যাপক বলেন, ‘৪ মাসে সেমিষ্টার হওয়াতে শিক্ষার্থীদের এমনিতেই এত পড়াশোনার চাপে থাকতে হয়। সেখানে আবার তারা রাজনীতিও করতেছে। সেটা ঠিক আছে কিন্তু তারা তো আবার মারামারি করে পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট করতেছে। তাদের জন্য শত শত শিক্ষার্থী পিছিয়ে যাচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায়, এমনটা হচ্ছে।’
উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, এসব প্রশাসনিক সিদ্বান্ত। এ বিষয়ে উপাচার্য মহোদয় ভাল বলতে পারবেন। আমি কোন মন্তব্য করতে রাজি নয়।
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনেরর দপ্তরে গেলে তিনি প্রতিবেদকের সাথে কথা বলবেন না জানিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। পরর্বতীতে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি প্রতিবেদকের কল রিসিভ করেননি।