সক্ষমতা বাড়ছে ফায়ার সার্ভিসের
Published : Monday, 17 October, 2022 at 12:00 AM
সুউচ্চ ভবনের আগুন নেভানো এবং উদ্ধার কাজ সহজতর করতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের কার্যক্রমে যুক্ত হলো মইবাহী (টার্ন টেবিল ল্যাডার-টিটিএল) গাড়ি। সেবা সংস্থাটির কার্যক্রমের গতিশীলতা এবং আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতায় জার্মানি থেকে ৬৮ মিটার উচ্চতায় মইবাহী (টার্ন টেবিল ল্যাডার -টিটিএল) এই গাড়িটি এবারই প্রথম বাংলাদেশে আনা হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে আর তিনটি মইবাহী বাড়ি আনা হবে। ফায়ার সার্ভিসের জন্য আরও ৩৫৭টি নতুন অ্যাম্বুলেন্স কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি জনবল ৩১ হাজার করার জন্য অর্গানোগ্রাম পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নতুন যুক্ত হওয়া মইবাহী গাড়িটি ২৪ তলার আগুন নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। ১৮০০ লিটার পানি ধারণ ক্ষমতার এই গাড়িটির রয়েছে ডিজেলচালিত ইঞ্জিন। ২৫ ফুট দূরত্ব থেকে পানি ছুড়ে আগুন নেভাতে সাহায্য করবে এই সুউচ্চ মইবাহী গাড়িটি। এতে ফায়াস সার্ভিসের সক্ষমতা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, কিছু দিনের মধ্যে সংযোজন হবে আরও তিনটি এ ধরনের সুউচ্চ মইবাহী গাড়ি। যদিও বাংলাদেশে এর ব্যবহার হবে প্রথম। চীন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, তুরস্ক ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আগুন নিয়ন্ত্রণে এই গাড়িটি ব্যবহার করে আসছে। মেগিরাস এম৬৮এল ব্র্যান্ডের এই গাড়িতে তেলের ধারণক্ষমতা ৩০০ লিটার। এর ইঞ্জিন ফোর স্ট্রোক। ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ১২ হাজার ৮৮০ সিসি। পুরো গাড়িটির ওজন ৩৪ টন। ফোম ধারণ ক্ষমতা ২০০ লিটার। গাড়িটিতে ৮টি মইয়ের সংযোজন করা হয়েছে, যার উচ্চতা ৬৮ মিটার।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, মইবাহী এই গাড়িটি থেকে ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী ৮ থেকে ৯ মিনিটের মধ্যে পানি শেষ হয়ে যাবে। এই কম সময় তো আর আগুন নেভে না। সে কারণে এই গাড়িটি যখন উপরে উঠে যায় তখন পাইপের সঙ্গে নিচে আরেকটি পাইপের কানেকশন দেওয়া থাকবে। কোনও ওয়াটার সোর্সের সঙ্গে সেই পাইপের সংযোগ থাকবে। সংযোগ ঠিকঠাক হওয়ার পর আগুন লক্ষ্য করে পানি ছুড়তে থাকবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত পানি ছোড়া সম্ভব হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিস আধুনিকায়নের আওতায় কুইক রেসপন্স টিম হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের জন্য আরও ৩৫৭টি নতুন অ্যাম্বুলেন্স কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বর্তমানে ১৯০টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির কারণে ফায়ার সার্ভিসের এসব অ্যাম্বুলেন্স কাজ করছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার অ্যাকাডেমি নির্মাণের কাজও চলমান রয়েছে। মিরপুরে ফায়ার সার্ভিসের জন্য পাঁচতলা নিজস্ব হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের জনবল ছিল ৬ হাজারের সামান্য বেশি। বর্তমানে এই জনবল হয়েছে ১৪ হাজারের বেশি। ফায়ার স্টেশন নির্মাণের চলমান প্রকল্প শেষে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬ হাজার। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের জনবল ৩১ হাজার করার জন্য অর্গানোগ্রাম পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফায়ারম্যানের পদের নাম ফায়ার ফাইটার এবং তাদের বেতন ১৮ থেকে ১৭ গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ রেশন এবং ঝুঁকি ভাতাসহ তাদের পদকের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সেবা সহজে গ্রহণে ১৬১৬৩ নম্বরের হটলাইন চালু করা হয়েছে। দেশের যেকোনও জায়গায় বসে সাধারণ মানুষ এখন ফায়ার সার্ভিসের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ ব্যবহার করেও সব তথ্য সংগ্রহ করতে পারছেন।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা এবং সদস্যদের মধ্যে কাজের গতি বেড়েছে। আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতায় দুটো মইবাহী (টার্ন টেবিল ল্যাডার-টিটিএল) গাড়ি যুক্ত হয়েছে। আগুন নেভাতে এবং উদ্ধার কাজে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।