
মো. হাবিবুর রহমান, মুরাদনগর ||
কুমিল্লার
মুরাদনগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটি পাচঁপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের অভাবে পেয়েছেন একটি নতুন ভবন। নতুন ভবন নির্মাণের
জন্য স্কুল কতৃপক্ষকে না জানিয়ে মাঠের মাটি কেটে নিয়েছে ঠিকাদার! ৬ ফিট
গভীর পর্যন্ত মাটি কেটে নেওয়ায় বর্তমানে খেলার মাঠ পুকুরে পরিণত হয়েছে। ফলে
বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী বিপদের শঙ্কায় খেলাধুলা করতে
মাঠে নামতে দিচ্ছে না শিক্ষক এবং অভিভাবকরা। এতে, যে কোন সময় ঘটতে পারে বড়
ধরনের দুর্ঘটনা। স্কুলে আসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
স্কুল
কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ঠিকাদার কোন রকম যোগাযোগ না করেই করোনা ভাইরাসের সময়
যখন স্কুল বন্ধ ছিলো, তখনই মাঠের মাটি কেটে নিয়ে গেছে। বার-বার মৌখিক ভাবে
ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করা হলেও ভরাট করতে কালক্ষেপন করছেন! অবশেষে এক
প্রকার বাধ্য হয়েই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উপজেলার মাসিক সভায় বিষয়টি
উত্থাপনের পরও এ বিষয়ে কোন প্রদক্ষেপ না নেওয়ায় জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়
বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারের যোগসাজশেই এটি হয়েছে।
স্কুলটির একমাত্র খেলার মাঠটি ৬ ফুট গভীর করে, মাটি কেটে নিয়ে গেল ঠিকাদার
অথচ এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলো না। এই গর্তের ফলে
এখন অভিভাবকরা বাচ্চাদেরকে স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। তারা আরও জানায়,
পাশাপাশি বিদ্যালয়ের আশ-পাশের বাড়ি-ঘরের মানুষেরাও তাদের ছোট ছোট
বাচ্চাদেরকে নিয়ে সব সময় একটা আতঙ্কে থাকতে হয়। এই গর্ত দ্রুত ভরাট না করলে
যে কোন সময়ে এখানে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা, তখন এর দায়ভার নিবে কে?
এ
বিষয়ে ভিটি পাঁচপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক
কামরুন্নাহার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘২০২০ সালে বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবনের
কাজ শুরু হয়। গত ৮ মাস আগে সেই ভবনে মাটি লাগবে এমন অজুহাতে করোনা কালীন
সময়ে বিদ্যালয় বন্ধ থাকাবস্থায় মাঠের মাটি কেটে নিয়ে যায় ঠিকাদার। বিদ্যালয়
খোলার পর বিষয়টি রেজ্যুলেশন আকারে আনা হয়েছে। তখন ঠিকাদার বলেছিলেন,
বিদ্যালয় খোলা মাত্রই তিনি মাটি ভরাট করে দিবেন। কিন্তু বিদ্যালয় খোলার
দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত গর্তটি ভরাট করা হয়নি। এ বিষয়ে আমি
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস
মফিজুল ইসলাম খাঁন এর সাব-ঠিকাদার মিজানুর রহমান মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার
বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এটি এমন কোন গর্ত নয়! যে কারোর কোন ক্ষতি হবে!
প্রয়োজনে মাটি কেটে নিয়েছিলাম, কিছুদিনের মধ্যেই আবার ভরাট করে দিব। গর্তের
ফলে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা হলে এর দায়ভার কে নিবে? জানতে চাইলে, তিনি
জবাবে বলেন, আরে নাহ কোন সমস্যা হবে না!’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা
ফওজিয়া আকতার বলেন, ‘বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বিষয়টি আমাকে জানানোর পর
আমি উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের সাথে একাধিকবার কথা বলেছি, তারা খুব দ্রুত
ভরাট করে দেবেন বলে বলতেন। বাধ্য হয়ে বিষয়টি মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থাপন
করা হলে মাঠটি ভরাট করে দেয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন উপজেলা প্রকৌশলী। যেহেতু
মৌখিক ভাবে সহযোগিতা চেয়েও কোন প্রকার ফলাফল পাইনি, খুব দ্রুত এ বিষয়ে
লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে।’
মুরাদনগর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর
কবির দেনিক কুমিল্লার কাগজকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারের সাথে কথা হয়েছে।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে স্কুল মাঠটি ভরাট করে দিবে ঠিকাদার। ’