জেমিসনের ৫ উইকেট, আজহারের ৭ রানের আক্ষেপ
Published : Monday, 4 January, 2021 at 12:00 AM
টসের
সময় কেন উইলিয়ামসন বললেন, “উইকেট সবুজাভ, তবে এর চেয়েও সবুজ উইকেটে এখানে
খেলেছি আমরা।” পিচ রিপোর্টে অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামের পর্যবেক্ষণ,
“ব্যাটসম্যানরা সাহসী হলে এখানে রান পাবে।” নিউ জিল্যান্ডের বর্তমান ও
সাবেক অধিনায়কের কথার প্রতিফলন পড়ল দিনের খেলায়ও। ব্যাট-বলে লড়াই জমল
তুমুল। তাতে কাইল জেমিসন আরেকবার ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেও আজহার আলি দারুণ
খেলার পর পুড়লেন ৭ রানের আক্ষেপে।
ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম দিনে রোববার নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১ম ইনিংসে ২৯৭ রানে অলআউট পাকিস্তান।
দারুণ
মনোসংযোগ ও দুর্দান্ত শট নির্বাচনের ছাপ রেখে আজহার করেন ৯৩ রান।
বিপর্যয়ের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ানের ৬১ রানের আগ্রাসী
ইনিংস পাকিস্তানকে জোগায় সাহস।
বাড়তি বাউন্স আর সুইং বোলিংয়ের
প্রদর্শনীতে জেমিসনের শিকার ৬৯ রানে ৫ উইকেট। ক্যারিয়ারের প্রথম ৬ টেস্টেই
দীর্ঘদেহী পেসার এই স্বাদ পেয়ে গেলেন ৩ বার।
হ্যাগলি ওভালে টস জিতে
বোলিংয়ে নামা নিউ জিল্যান্ড সাফল্য পায় ম্যাচের তৃতীয় ওভারেই। দুর্দান্ত এক
সুইঙ্গিং ইয়র্কারে শান মাসুদকে এলবিডব্লিউ করেন টিম সাউদি। বাঁহাতি মাসুদ
টানা দুই ইনিংসে ফিরলেন শূন্যতে।
শুরুর ধাক্কা ভালোই সামাল দেন আবিদ আলি
ও আজহার আলি। দ্বিতীয় উইকেটে ৬২ রান যোগ করেন দুজন। কিন্তু জেমিসন আচমকাই
ঝড় বইয়ে দেন পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারে। টানা তিন ওভারে এই পেসার নেন ৩
উইকেট।
বাড়তি বাউন্সে ২৫ রান করা আবিদকে ফিরিয়ে শুরু জেমিসনের বোলিং
তোপ। পরের ওভারে তার শিকার হারিস সোহেল। আরও বড় ধাক্কা পরের ওভারে। আগের
টেস্টে লড়িয়ে সেঞ্চুরি করা ফাওয়াদ আলম ভূপাতিত হন শরীর তাক হয়ে আসা
বাউন্সারে। বল তার গ্লাভসে লেগে সহজ ক্যাচ যায় কিপারের কাছে।
৮৩ রানের
মধ্যে ৪ উইকেট হারানোর পাকিস্তানের খানিকটা স্বস্তি হয়ে আসে বৃষ্টি বিরতি।
এরপর পাল্টা আক্রমণে কিউইদের চাপে পেলে দেন রিজওয়ান। বিরতির পর প্রথম বলেই
ডাউন দা উইকেটে বাউন্ডারি মেরে রিজওয়ানের ছুটে চলা শুরু। পরে টানা তিনটি
বাউন্ডারি মারেন তিনি ট্রেন্ট বোল্টকে।
আরেক প্রান্তে আজহার ততক্ষণে জমে
গেছেন। এই উইকেটের জন্য আদর্শ ব্যাটিং করে যান তিনি। বলের পর বল ছেড়ে দেন,
আবার শট খেলার সুযোগ পেলেই বল পাঠান বাউন্ডারিতে।
৭৩ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন আজহার, ৬০ বলে রিজওয়ান।
৮৮
রানের দারুণ এই জুটি ভাঙেন সেই জেমিসন। ভুল লাইনে খেলে উইকেটে পেছনে ক্যাচ
দেন রিজওয়ান। আগের টেস্টে জোড়া ফিফটির পর পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত
অধিনায়কের রান এবার ১১ চারে ৭১ বলে ৬১।
আগের সিরিজ মিলিয়ে এই নিয়ে টানা ৫ ইনিংসে ফিফটির দেখা পেলেন এই কিপার-ব্যাটসম্যিান।
পরের
জুটিতে ফাহিম আশরাফকে নিয়ে আজহার গড়েন আরেকটি অর্ধশতরানের জুটি (৫৬)। ৪
রানে সহজ ক্যাচ দিয়েও রস টেইলরের হাতে জীবন পাওয়া ফাহিম শট খেলে যান
রিজওয়ানের পথ ধরে।
নিল ওয়্যাগনারের চোটে সুযোগ পাওয়া ম্যাট হেনরি খুব
ভালো বোলিং না করলেও দিনের সবচেয়ে বড় উইকেট নিউ জিল্যান্ডকে এনে দেন তিনিই।
অফ স্টাম্প ঘেষা দারুণ ডেলিভারিতে থামান আজহারকে। ১২ চারে ১৭২ বলে ৯৩ করে
আজহার ধরা পড়েন প্রথম স্লিপে।
ফাহিম ও অভিষিক্ত জাফর গোহার এরপর দলকে
এগিয়ে নেন তিনশর পথে। আগের টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা ৯১ রানের পর ফাহিম এবার
করেন ৪৮। তাকে ফিরিয়েই জেমিসন পূর্ণ করেন ৫ উইকেট।
বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার গোহারের ব্যাট থেকে আসে ৩৪ রান।
দিনজুড়ে বল হাতে নিজের ছায়া হয়ে থাকলেও দ্বিতীয় নতুন বলে শেষ দুই উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে তিনশর নিচে থামান ট্রেন্ট বোল্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান
১ম ইনিংস : ৮৩.৫ ওভারে ২৯৭ (মাসুদ ০, আবিদ ২৫, আজহার ৯৩, হারিস ১, ফাওয়াদ
২, রিজওয়ান ৬১, ফাহিম ৪৮, জাফর ৩৪, আফ্রিদি ৪, আব্বাস ০*, নাসিম ১২; সাউদি
২৩-৭-৬১-২, বোল্ট ২০.৫-৩-৮২-২, জেমিসন ২১-৮-৬৯-৫, হেনরি ১৭-২-৬৮-১, মিচেল
২-১-৬-০)।