তানভীর দিপু:
নতুন
বছর, নতুন বই, কিন্তু চিত্রটা ভিন্ন। উৎসবের আমেজ নেই স্কুলের মাঠে। হইচই
করে ঠেলাঠেলি করে লাইনে দাঁড়িয়ে আগে নতুন বই হাতে নেবার উচ্ছাসও নেই। শত শত
কোমলমতি শিশুর হাতে নতুন চকচকে বই নিয়ে দৌড়ে বাড়ি ফেরার দৃশ্যও নেই। বছরের
শুরুর দিনে বই নিয়ে এমন কাড়াকাড়ি সামলাতে পুরো স্কুলের শিক্ষকদের ঘাম
ঝড়ানো ব্যস্ততা এবার দেখা মেলেনি। তারপরও ২০২১ এর প্রথম দিন থেকেই বই পাবে
শিক্ষার্থীরা। নতুন বইয়ের গন্ধে কিছুটা হলেও কাটবে করোনায় ঘরবন্দী থাকার
গুমোট গন্ধ। গতকাল শুক্রবার থেকেই জেলার বিভিন্ন স্কুলে শ্রেণিভিত্তিক বই
বিতরণ শুরু হয়েছে।
করোনার ভয়ে স্কুল বন্ধ থাকলেও পড়াশুনা যেন থমকে না
যায় তাই বিগত বছরের মত এ বছরের প্রথমদিন থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই
শিক্ষার্থীদের হাতে পৌছানো হচ্ছে নতুন বই। দিন ভাগ করে ভিন্ন ভিন্ন কাশের
শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে বই। সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থীদের স্কুলে ডেকে
মাস্ক পরা অবস্থায় অভিভাবকদের উপস্থিতিতে বই হাতে দিয়ে দ্রুত স্কুল ত্যাগ
করতে বলা হয়। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতেই এই ব্যবস্থা।
সবাই যেন হাতে হাতে বই পায় এই নিশ্চয়তায় ভ্যানে করেও বই বিতরন করা হয়। যা বই বিতরণে অনন্য উদাহরণও সৃষ্টি করেছে।
শিক্ষা
অফিসার (মাধ্যমিক) মোঃ আবদুল মজিদ দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে জানান, ১২ দিনে
আলাদা আলাদা ভাবে ৯৮ লাখ বই মাধ্যমিকে বিতরণ করা হচ্ছে।
আর প্রাথমিক
শিক্ষা অফিসার মোঃ আবদুল মান্নান দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে জানান,
প্রাইমারীতে ৩৫ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৭টি বই বিতরন করা হচ্ছে ৪ হাজার ৪ শ ২১টি
প্রতিষ্ঠানে। বই বিতরনের জন্য সরকার নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা
হবে। কোন ধরনের নিয়মের ব্যতয় করা হবে না।
সকালে কুমিল্লা নবাব
ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী নীলিমা বই
নিতে বাবার সাথেই স্কুলে আসে। মাস্ক পরে স্কুল মাঠের এক কোনায় দাঁড়িয়ে
অপেক্ষায়, যেন বই হাতে পেলেই বাসায় ছুট। নীলিমা জানায়, গত কয়বছর হই হুল্লোড়
করে সবার সাথে বই নিয়েছি। এই বছর তা হচ্ছে না। করোনার ভয়ে সবার সাথে
মিশতেও পারছি না। তারপরও ভালো লাগছে যে- এত ভয়ের মাঝেও নতুন কাস নতুন বই,
নতুন খুশি।
ফুজুন্নেছা স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আনোয়ার হোসাইন
জানান, আলাদা দিনে আলাদা শ্রেণীর বই দেয়া ভালো উদ্যোগ। লোক সমাগম কম হওয়ায়
করোনায় সংক্রমিত হওয়ার আশংকাও কম থাকে।
স্কুলটির প্রধান রোখসানা
ফেরদৌসী মজুমদার জানান, বই উৎসব হচ্ছেনা এতে মন খারাপের কিছু নেই। আমরা
স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাস্থ্য নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিচ্ছি। কোমলমতি
শিক্ষার্থীরা সঠিক সময়ে হাতে বই পাবে এটাই খুশি।
একই দিন কুমিল্লা মহানগর ও জেলার ১৭টি উপজেলার সব শিাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আংশিক বই বিতরণ করা হয়েছে।
সকালে
নগরীর নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে বই বিতরণ কার্যক্রমের
উদ্বোধন করেন প্রধান শিক রোকসানা ফেরদৌস মজুমদার। এ বিদ্যালয়ে নবম, অষ্টম ও
চতুর্থ শ্রেণির বই দেওয়া হয়। কুমিল্লা জিলা স্কুলের প্রধান শিক রাশেদা
আক্তার ষষ্ঠ শ্রেণির বই বিলি করেন।
রাশেদা আক্তারের কণ্ঠেও একই সুর।
তিনি জানান, উৎসবমুখর থাকলে একধরনের আনন্দ হতো। কিন্তু বই শতভাগ
শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দিতে পারা হলো বড় কথা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক
দূরত্বে থেকে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেই নির্ধারিত দিনে বই দেয়া হবে।
শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক যে ই আসুক আমরা বই দিয়ে দিচ্ছি।
ভ্যানে করে বই বিতরণ:
বই
বিতরণে ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মধ্যে শুক্রবার সকালে কুমিল্লা শহরতলির
চাঁনপুর এলাকায় ভ্যানে করে শিার্থীদের বাড়িতে বই নিয়ে হাজির হন কুমিল্লা
হাইস্কুলের একদল শিক। তাঁরা তালিকা ধরে বাড়ি বাড়ি বই দেন। যেসব এলাকায়
ভ্যান নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি, সেসব এলাকায় হাতে করে বই নিয়ে যান শিকেরা।
বেলা
১১টার দিকে বই নেয় বিদ্যালয়টির শিার্থী আবুল হাসান। সে বলে, ‘অন্যবার
নিজেরা বই আনতে যেতাম। এবার স্যারেরা বাড়ি এসে বই দিয়ে গেলেন। এটাও খারাপ
না।’
একই বিদ্যালয়ের শিার্থী ফাতেমাও পেয়েছে বই। সে বলে, ‘বাড়িতে নতুন
বই পেয়ে ভালো লাগল। জীবনে এমনভাবে বই দিতে দেখিনি। স্যারদের কাছে আমরা
কৃতজ্ঞ।’
বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই দেওয়ার বিষয়ে কুমিল্লা হাইস্কুলের প্রধান
শিক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, করোনার কারণে এবার বই-উৎসব সেভাবে করা গেল না।
তাই আমরা শিার্থীদের বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দিচ্ছি।’
স্কুলটির সহকারী
প্রধান শিক্ষক মোঃ আবদুল মান্নান জানান, আমরা কিছু শিক্ষার্থীর ঠিকানা
সংগ্রহ করে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই দিয়ে আসছি। দীর্ঘ করোনাকালে স্কুলের
বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে পেয়ে কিছুটা হলেও খুশি হবে-এই চিন্তা
করেই আমরা যতদ্রুত সম্ভব বই গুলো পৌছানোর চেষ্টা করছি।