*বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন ভূমি ও গৃহহীনরা
*পর্যায়ক্রমে নির্মাণ হবে ৫ হাজার বাড়ি
একে
তো হতদরিদ্র, তার ওপর প্রতিবন্ধী। তার চেয়েও করুণ- একমাত্র শিশুসন্তানকে
তার কোলে ফেলে চলে গেছে স্বামী। এমনই নিঃস্ব অসহায় এক নারী আশা নূরের মাথা
গোঁজার ঠাঁই ছিল না কোথাও। ছিল না কোনো ভিটেমাটিও। বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে,
মায়ের জীর্ণ ঘরে থেকে, অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে প্রাণ ধরে রেখেছেন
দেহে। তার এই দুঃসহ কষ্টের জীবন কখনও সমাজপতি, জনপ্রতিনিধি বা ধনাঢ্যদের
চোখে পড়েনি। অবশেষে চোখে পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের উপহার হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা
দেশের ভূমি ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের যে কর্মসূচি ঘোষণা করেন, তারই অংশ
হিসেবে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের এই
আশা নূর সরকারি সম্পত্তির উপর নির্মিত একটি বাড়ি পাচ্ছেন। মাথা গোঁজার
একটা ঠাঁই পেয়ে আশা নূর এখন স্বপ্ন দেখছেন শিশুপুত্র ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে
ভালোভাবে বেঁচে থাকার।
কুমিল্লার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক
মোহাম্মদ শওকত ওসমান জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী
‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার নির্দেশনায় ভূমি ও গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসনের জন্য ব্যাপক
কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে কুমিল্লা জেলার ১৭ উপজেলায়
ভূমি ও গৃহহীনদের তালিকা করা হয়েছে। তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ত্রাণমন্ত্রণালয় এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত
করে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে কুমিল্লা
জেলার ১৭ উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার ভূমিহীনকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যমাত্রা
নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১৯৩টি পরিবারকে পুনর্বাসনের কাজ প্রায়
শেষ পর্যায়ে। পরবর্তী পর্যায়ে আরও ৫৯৫টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে
পুনর্বাসনের জন্য কাজ অব্যাহত রয়েছে।
শওকত ওসমান আরো জানান,
প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে প্রথম পর্যায়ে প্রতিবন্ধী, স্বামীছাড়া,
ভিক্ষুক ও ষাটোর্ধ প্রবীণ ভূমি ও গৃহহীন নাগরিকরা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। সেই
অনুযায়ী কুমিল্লার মুরাদনগর, চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম, নাঙ্গলকোট, দাউদকান্দি,
আদর্শ সদর, সদর দক্ষিণ, মনোহরগঞ্জ, লালমাই, মেঘনা, হোমনা ও তিতাসে
ভূমিহীনদের পূনর্বাসনের জন্য ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৩টি বাড়ি নির্মাণের কাজ
সম্পন্ন হয়েছে। চলতি জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রকল্পের ১৯৩টি ঘর
ভূমিহীনদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ঘর পাচ্ছেন
শুনে মাথা গোঁজার স্বপ্ন দেখছেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লা
গ্রামের হতদরিদ্র ভূমিহীন মো. ইব্রাহীম। ৩৫ বছর বয়সেই তিনি আক্রান্ত নানা
রোগে। স্ত্রীসহ ছোট ছোট সন্তানদের সাথে বাড়িতে আছেন বৃদ্ধা মা। ভূমিহীন
ইব্রাহীম জানান, পৈত্রিক বাড়িতে ভাইসহ তাদের তিন শতক সম্পত্তি ছিল। বছর
দুয়েক আগে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছেন তিনি। তার চিকিৎসায়
প্রায় ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ছোট ভাই ও অন্যদের কাছ থেকে ধার করে ওই
চিকিৎসার টাকা বহন করেন। সুস্থ হয়ে ওঠার পর স্থানীয়রা বসে তার একমাত্র
বসতভিটা বিক্রি করে ধারের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে ভূমিহীন হয়ে পড়েন।
প্রধানমন্ত্রীর
উপহারের কথা শুনে অত্যন্ত খুশি ভূমিহীন ইব্রাহীম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা আমাকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার নতুন করে স্বপ্ন দেখিয়েছেন।
আমি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরে উঠেই ওনার জন্য দোয়া করবো।’
মুজিববর্ষ
উপলক্ষে ভূমি ও গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনে ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার
উপহার’ শীর্ষক প্রকল্পে লাকসামের গুচ্ছগ্রামে ঘর নির্মাণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন
হয়েছে। লাকসাম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দেবেশ চন্দ্র দাস বলেন,
‘এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে কোনো প্রকার অনিয়ম হয়নি। সরকারের বরাদ্দকৃত
বাজেট জনগণের উপকারে ব্যয় করেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে আমি
নিজে প্রকল্পের সকল কাজ পরিদর্শন করি। কোথাও যেন কোনো ধরনের অনিয়ম না হয়,
সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করেছি।’
কুমিল্লার
স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শওকত ওসমান বলেন, ‘ভূমি ও গৃহহীন
মানুষের পুনর্বাসনে কুমিল্লা জেলায় প্রায় ৫ হাজার ভূমিহীনকে পুনর্বাসনের
লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ১৯৩টি পরিবারকে
পুনর্বাসনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পরবর্তী পর্যায়ে আরও ৫৯৫টি ভূমি ও
গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন,
‘আশা করি, সকলের সম্পৃক্ততায় কুমিল্লা জেলার প্রত্যকটি উপজেলাকে ভূমিহীন ও
গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করতে পারবো। আমরা যে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, সেই
স্বপ্ন যদি আমাদের বাস্তবায়ন করতে হয়, সেই ক্ষেত্রে আমাদের যে দরিদ্র
জনগোষ্ঠী আছে, তাদেরকে পুনর্বাসনের কোনো বিকল্প নেই। পিছিয়ে পড়া মানুষকে
যাতে আমরা মূল ¯্রাোতধারার সাথে সম্পৃক্ত করতে পারি, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ
করছি। শুধু এই নয়, তাদেরকে আরও কিভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত
করা যায় এবং স্বাবলম্বী করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরও গতিশীল করতে পারি,
সেই লক্ষ্যেও আমরা কাজ করছি।