আমাদের রান্নার পর্ব শুরুই হয় ভুলের হাত ধরে৷ সব্জি কাটা থেকে যার
সূত্রপাত৷ এর পর ধাপে ধাপে এত ভুল হয় যে, শেষমেশ খাবার যখন পাতে পৌঁছয়,
তাতে পুষ্টি যতটা থাকার কথা, তা তো থাকেই না, উল্টে হাজির হয় কিছু বিপদ৷
আমরা সচরাচর ভাল করে খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট করে কেটে রান্নার আগে
পর্যন্ত সব্জি ভিজিয়ে রাখি জলে৷ যে সব সব্জির খোসা ছাড়াতে হয় না, তাদেরও
কেটে ভিজিয়ে রাখার চল আছে৷ উদ্দেশ্য, ময়লা ও কীটনাশকের বিষ মুক্ত করা৷
বিষাক্ত রংও এ ভাবে কিছুটা দূর হয়৷ সঙ্গে দূর হয় ভিটামিন বি ও সি–এর প্রায়
৪০ শতাংশ৷
ত্বক বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঘোষের মতে, "বিষাক্ত রং ও কীটনাশকের দৌলতে ত্বকের
রোগ থেকে শুরু করে আরও এমন সব অসুখ হতে পারে, যে ভিটামিনের সঙ্গে সমঝোতা
করে হলেও ধোওয়া–ধুয়িটা ঠিক করে করা দরকার৷ সব্জি কাটার আগে ভাল করে ধুয়ে
জলে ভিজিয়ে রাখা উচিত৷ তাতে কিছুটা ভিটামিন গেলে যাবে৷ তবে সব্জি বড় করে
কাটলে, কাটার পর না ধুয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ম মেনে রান্না করে নিলে ভিটামিনের
অনেকটাই রক্ষা পায়৷ ফাইবার ও পুষ্টির কথা ভাবলে, সব্জির খোসা না ছাড়ানোই
ভাল৷ ডায়াবিটিস, হাই কোলেস্টেরল বা মেদবাহুল্যে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের জন্য
তো বিশেষ করে৷ কিন্তু তা করা যায় না এই সব রং ও কীটনাশকের জন্যই৷ তবে পাতলা
করে খোসা ছাড়াতে পারেন, যাতে দু–দিকই রক্ষা করা যায়৷"
আমাদের ধারণা, গরম কড়াইতে তেল দেওয়ার পর যতক্ষণ না ধোঁয়া ওঠে ফোড়ন বা
মাছ–সব্জি দিতে নেই৷ কারণ, তা হলে রান্নায় কাঁচা তেলের গন্ধ থেকে যায়৷
ধারণাটি ভুল৷ প্রতিটি তেলের নির্দিষ্ট স্মোক পয়েন্ট থাকে, অর্থাৎ যে
তাপমাত্রায় তেল ভেঙে গিয়ে ধোঁয়া ওঠে৷ এই ধোঁয়ার সঙ্গে উড়ে যায় উপকারী
ফ্যাটি অ্যাসিড৷ ভাঙে ভিটামিন৷ তৈরি হতে শুরু করে ফ্রি–র্যাডিক্যালস নামের
ক্ষতিকর উপাদান৷ হাই কোলেস্টেরল, হূদরোগ, স্ট্রোক, অ্যালঝাইমার, ক্যানসার
ইত্যাদি রোগের মূলে যার হাত আছে৷ ধোঁয়ার মাঝে রান্না করলেও শরীরে ঢ়োকে
ফ্রি–র্যাডিক্যালস৷ এই সব রোগের দরজা খুলে যায়৷ হাঁপানি রোগীর সমস্যা
বাড়ে৷ কাজেই কড়াই গরম করে তেল দিন৷ ধোঁয়া বেরনোর আগেই, ফোড়ন–সব্জি–মাছ
দিয়ে, ঢাকা দিয়ে দিন৷ ক্ষতিকর ধোঁয়ার হাত থেকে শরীর বাঁচবে৷ পুষ্টিও থাকবে
অটুট৷