পুরোদমে শুরু হয়েছে খুলনা-মোংলা রেলসেতু
নির্মাণকাজ। বর্তমানে রূপসা নদীতে সেতুর ৭২ ও ৭৪ নম্বর পিলারের (পায়ার)
পাইলিং কাজ চলমান। দুই মাসের মধ্যে সেতুর সর্বশেষ ৭৩ নম্বর পিলারের কাজ
শুরু হবে। এরপর নদীর মধ্যে নির্মিত পিলারের ওপর গার্ডার (দুই পিলারের
মাঝখানে সংযুক্ত স্থাপনা) বসানো হবে। চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে রেলসেতুর
নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা বলছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। জানা যায়, মোংলা
বন্দরের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে ২০১৬ সালের ১৪ এপ্রিল
রূপসা রেলসেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেতুর
নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে নির্মাণকাজে স্থবিরতা
দেখা দেয়। প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম জানান, ৫
দশমিক ১ কিলোমিটার রেলসেতুর মধ্যে রূপসা নদীর খুলনা প্রান্তে স্থলভাগের
অংশের (ভায়াডাক্ট) ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর স্থলভাগে মোংলা প্রান্তে
শুরুর অংশে পাইলক্যাপের (অ্যাবার্টমেন্ট) কিছু কাজ বাকি রয়েছে। দুই
কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ অংশের কাজ শেষ হতে আরও দুই মাস সময় লাগবে। জানা যায়,
সেতুর মোট ১৩৪টি পিলারের মধ্যে স্থলভাগে ১৩০টির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। নদী
অংশে চারটি পিলারের মধ্যে শেষ হয়েছে ৭১ নম্বর পিলারের কাজ। চলমান ৭২ ও ৭৪
নম্বর পিলারের কাজ শেষ হলে ৭৩ নম্বর পিলারের কাজ শুরু হবে। নদী অংশে সেতুতে
৬৯ নম্বর পিলার থেকে ৭৬ নম্বর পিলার পর্যন্ত প্রতিটি ৩২ মিটার দৈর্ঘ্যরে
সাতটি গার্ডার থাকবে। এরই মধ্যে ভারত থেকে একটি গার্ডার আনা হয়েছে। বাকি
ছয়টি গার্ডার আনার প্রক্রিয়া চলমান। প্রকল্প কর্মকর্তাদের দাবি, রেলসেতুর
নির্মাণকাজ শেষ হলে চলতি বছরের মধ্যে মোংলা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে সারা
দেশের রেল যোগাযোগ। অর্থনীতিবিদদের মতে, এ অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার
উন্নয়নের ফলে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন মোংলা বন্দর পুরোপুরি সচল হবে। শিল্পনগরী
খুলনা ফিরে পাবে হারানো ঐতিহ্য। খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড
ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস বলেন, ‘খুলনা-মোংলা
রেলপথ চালু হলে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।’ অর্থনীতিবিদ
অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির জানান, পদ্মা সেতু নির্মাণের পাশাপাশি খুলনা-মোংলা
রেলপথ তৈরি হলে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণসঞ্চার হবে।
খুলনা-মোংলা রেলপথ, পদ্মা সেতু, মোংলা বন্দর, ভৌত অবকাঠামো সব মিলিয়ে এ
অঞ্চলে অর্থনৈতিক ঊর্ধ্বমুখী অবস্থার সৃষ্টি হবে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী
কমিটি (একনেক) খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। এ
রেলসেতুর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৬ কোটি টাকা।