রাজধানীর উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকার বাসিন্দা সাইয়িদুল। সাদা রঙের
একটি গাড়িতে চলাফেরা করেন। উত্তরা ছাড়াও গাজীপুরের টঙ্গী ও নরসিংদীতে রয়েছে
তার আরও দুটি বাসা। রয়েছে তিনটি বউ। প্রথম বউ হালিমা খাতুন থাকেন
কক্সবাজার। দ্বিতীয় বউ তানজিলা আক্তার মোমেনা টঙ্গীতে। আরেক বউ আবিদা
সুলতানা একেক সময় থাকেন একেক জায়গায়।
সাইয়িদুলের পৃথক বাসা ও একাধিক স্ত্রীর মূলে রয়েছে প্রাণঘাতী ইয়াবা
ব্যবসার কৌশল। বাসাগুলোকে ইয়াবা চালানের স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করেন তিনি।
ইয়াবা সংগ্রহ ও মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করেন তার তিন স্ত্রী। শুধু তিন
স্ত্রীই নন, ভয়ংকর এ নেটওয়ার্কে যুক্ত সাইয়িদুলের দ্বিতীয় স্ত্রী মোমেনার
মা হাফিজা খাতুন, খালা মারুফা খাতুন, বোন মর্জিনা খাতুন, মামাতো বোন অদিতির
স্বামী খোরশেদ আলম টুটুল।
রাজধানীর মতিঝিলে এজিবি কলোনি এলাকা থেকে সাইয়িদুলের দ্বিতীয় স্ত্রী
মোমেনাকে ৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বৃহস্পতিবার তিন সহযোগী মো. দুলাল, খোরশেদ আলম টুটুল (মোমেনার মামাতো
বোনের স্বামী) ও আরিফসহ তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ
(ডিবি)। এ বিষয়ে মতিঝিল থানায় মামলা হয়েছে। এর আগে ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর
পল্টন থেকে ৫০০ পিস ইয়াবাসহ মোমেনার বোন মর্জিনা খাতুনকে গ্রেফতারের পর
সাইয়িদুলের এ চক্রের সন্ধান পায় ডিবি। সে ঘটনায়ও পল্টন থানায় একটি মামলা
হয়।
ডিবি সূত্র জানান, এ চক্রের মূল ডিলার কক্সবাজারের উখিয়ার ইসমাইল
হোসেন। মিয়ানমার থেকে সরাসরি তার কাছে ইয়াবা আসে। পলাতক সাইয়িদুলের অর্ডার
অনুযায়ী ইসমাইলের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করেন কক্সবাজারে থাকা স্ত্রী
হালিমা খাতুন। ইসমাইলের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করলেও কোনো টাকা নিজ হাতে
পরিশোধ করেন না হালিমা। চালান নিয়ে আসার পরদিন টাকা পরিশোধ করতে যেতেন
মোমেনার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া আরিফ। কক্সবাজারের বাসায় চালান আসার পরই
সপ্তাহে ২০ হাজার পিস করে পৌঁছে দেওয়া হতো মোমেনা ও আবিদা সুলাতানাকে।
ইয়াবা সব খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে ছড়িয়ে দিতে দুটি জোনে ভাগ করে দেন সাইয়িদুল।
একটি ঢাকা জোন, আরেকটি কুমিল্লা জোন। ঢাকা জোনের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ,
মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী জেলার দায়িত্ব পালন করতেন মোমেনা। তার কাছে
আসা ইয়াবা ১ হাজার পিস করে ভাগ করে মা, খালা, বোন ও ফুফাতো বোনের স্বামীর
সহযোগিতায় পাঠিয়ে দিতেন বিক্রেতা এবং ভাড়া করা এজেন্টদের কাছে। ফেনী ও
কুমিল্লা জেলাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা জোনের দায়িত্ব ছিল
আবিদার ওপর। তিনিও মোমেনার মতো ১ হাজার পিস করে পাঠিয়ে দিতেন বিক্রেতা ও
এজেন্টদের কাছে। ওই ১ হাজার পিসের চালানগুলো আবার ভাগ হয়ে ছড়িয়ে যায় সারা
দেশে।
এ বিষয়ে ডিবির মতিঝিল বিভাগের এসি মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ১২
ডিসেম্বর মর্জিনা খাতুনকে গ্রেফতারের পর এ চক্রের বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
আসামিরা ধূর্ত হওয়ায় কোনোভাবেই তাদের গ্রেফতার করা যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে মতিঝিল থেকে তিন সহযোগীসহ মোমেনাকে গ্রেফতার
করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে সাইয়িদুলকে গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা হলেও
তিনি গা ঢাকা দেন। পরে উত্তরার আশকোনায় অভিযান চালিয়ে মোমেনার মা হাফিজা
খাতুনের বাসার সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে কোনো ইয়াবা পাওয়া না গেলেও আলামত
হিসেবে জিপার ও ফয়েল পেপার পাওয়া গেছে। পুরো চক্রটিকে ধরতে অভিযান অব্যাহত
রয়েছে।