প্রতিষেধকে অগ্রাধিকার করোনা যোদ্ধাদের। ন’মাস ধরে যাঁরা করোনার
বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, প্রথমে তাঁদেরই দেওয়া হবে বলে ঘোষণা হয়েছিল। অতএব
প্রথম তালিকায় জনপ্রতিনিধির নাম থাকার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা
গিয়েছিল, ঘোষণার তোয়াক্কা না করে প্রথম দিনেই রাজ্য জুড়ে বেশ কয়েক জন
জনপ্রতিনিধি প্রতিষেধক নিয়েছেন।
এ বার সেই তালিকায় নাম উঠে এসেছে ব্যারাকপুর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর
চেয়ারম্যান উত্তম দাসের। শনিবার ব্যারাকপুর বিএন বসু হাসপাতালে গিয়ে
প্রতিষেধক নিয়েছেন তিনি। এই নিয়ে যেমন বিরোধীরা কটাক্ষ করেছেন, তেমনই
ক্ষুব্ধ প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের অনেকে। উত্তমবাবুর দাবি, জনপ্রতিনিধি
বলে তাঁদের নাম তালিকায় রয়েছে। তাঁর দাবি, চিঠি দিয়ে তাঁকে প্রতিষেধক নিতে
ডাকা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশ মেনে রোগী
কল্যাণ সমিতির সদস্য হিসেবে তাঁর নাম রাখা হয়েছে। যদিও এতে বিতর্ক থামছে
না।
শনিবার প্রথম দফায় কেবল চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিষেধক
নেওয়ার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। যে কয়েক জন জনপ্রতিনিধি
শনিবার প্রতিষেধক নিয়েছেন উত্তমবাবু তাঁদেরই এক জন। ওই দিন দুপুরে
হাসপাতালে গিয়ে তিনি প্রতিষেধক নেন। তার ভিডিয়ো ফুটেজ রবিবার সামনে আসতেই
উত্তমবাবু প্রতিষেধক নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর,
শনিবার প্রতিষেধক নিয়েছেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিধায়ক শীলভদ্র
দত্তও। এ নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য হিসেবে আমার
নাম রয়েছে। তাই প্রতিষেধক নিয়েছি।
বিধায়কেরা কেন প্রতিষেধক নিলেন, তা নিয়ে বিতর্ক শুরুর পরে এখনও
পর্যন্ত সরকারের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে রবিবার ক্যানিংয়ে গিয়ে
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “শুনছি অনেকে প্রতিষেধক নিতে ভয়
পাচ্ছেন। সেখানে বিধায়কেরা নিয়েছেন, সেটা তো ভাল খবর।” যদিও স্বাস্থ্য
দফতরের তরফ থেকে কিছু বলা হয়নি। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীকে ফোন
করা হলে, তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে।
বিএন বসু হাসপাতালের সুপার সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, “এতে বিতর্কের
কিছু নেই। উত্তমবাবু রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য। এই হাসপাতাল থেকে যে ৫৪০
জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তাতে সেই হিসেবে ওঁর নাম রয়েছে। সেখানে বিধায়ক
এবং স্থানীয় পুর প্রতিনিধির নামও রয়েছে। অ্যাপে ওঁর নাম এসেছে। তাই তাঁকে
চিঠি দিয়ে প্রতিষেধক নিতে ডাকা হয়েছে।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক
তাপস রায়ও জানাচ্ছেন, রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্যদের নাম তালিকায় থাকতে পারে।
জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।”
আর উত্তমবাবুর বক্তব্য, “প্রতিষেধক কেউ ব্যক্তিগত ভাবে তৈরি করেননি।
জনপ্রতিনিধিকে সর্বত্র যেতে হয়। তাই তাঁদের প্রতিষেধক নেওয়ায় বিতর্কের কিছু
নেই। সমালোচনা করাই বিরোধীদের কাজ।”