করোনা
মহামারি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তার প্রভাব
পড়েছে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে। তৈরি পোশাকসহ অনেক পণ্যেরই চাহিদা কমে
গেছে। ফলে কমেছে রপ্তানি আয়; কিন্তু ব্যতিক্রম হস্তশিল্প। বাংলাদেশের
হস্তশিল্পের প্রধান গন্তব্য হচ্ছে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো। ধারণা
করা হচ্ছে, করোনা মহামারিতে মানুষ বেশি সময় ঘরে থাকায় গৃহসজ্জার বিভিন্ন
উপকরণের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর তাই বাংলাদেশ থেকে হস্তশিল্পের রপ্তানিও
বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়,
দেশের হস্ত ও কুটির শিল্প থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে
(জুলাই-ডিসেম্বরে) আয় হয়েছে এক কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এই আয় আগের
বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৮.৭০ শতাংশ বেশি। আর ল্যমাত্রার চেয়ে তা ২৩.৩৬ শতাংশ
বেশি। উদ্যোক্তাদের দাবি, সরকারি সহায়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি আমলাতান্ত্রিক
জটিলতা দূর করা গেলে আগামী দুই বছরের মধ্যে এই শিল্পের রপ্তানি আয় বছরে
হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,
হস্তশিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার ল্েয অনেক কথা বলা হলেও বাস্তবে হস্তশিল্পের
পৃষ্ঠপোষকতা অনেক কম। ঐতিহ্যগতভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের
পণ্য তৈরি হয়। কোথাও বাঁশ-বেত, কোথাও নকশিকাঁথা, কোথাও টেরাকোটা, আবার
কোথাও বা শতরঞ্চি। হস্তশিল্পে নারীদেরই প্রাধান্য রয়েছে। আবার বেশির ভাগ
উদ্যোক্তাই অতি স্বল্প পুঁঁজিতে ব্যবসা করেন। তাঁদের পে মেলা, প্রদর্শনীর
আয়োজন করা কিংবা বড় আকারে বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া প্রায় অসম্ভব। প্রায়ই
তাঁদের নির্ভর করতে হয় মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর। এতে তাঁরা আর্থিকভাবে খুব
একটা লাভবান হতে পারেন না। বড় শহরগুলোতে হস্তশিল্পের স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদি
প্রদর্শনীর আয়োজন করা গেলে হস্তশিল্পের স্থানীয় বাজার যেমন বৃদ্ধি পেত,
রপ্তানি বাণিজ্যেও তা অনেক বেশি সহায়ক হতো। ুদ্র উদ্যোক্তাদের পে ডিজাইন বা
নকশা নিয়ে গবেষণা করা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশ ুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা
কিছু কাজ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। উদ্যোক্তারা মনে করেন, সরকারি
উদ্যোগে পণ্যের মানোন্নয়নে গবেষণা এবং প্রশিণের আয়োজন বৃদ্ধি করা গেলে তা
দেশে হস্ত ও কুটির শিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত করবে। উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে
ঋণ প্রদান এবং হস্তশিল্পের রপ্তানিতে প্রণোদনা আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মনে
করেন তাঁরা।
আমরা মনে করি, সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিষয়টি জরুরি
ভিত্তিতে বিবেচনা করবেন। শুধু হস্তশিল্পের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বাড়ানোই নয়,
আমাদের মনে রাখতে হবে, এই শিল্পের সঙ্গে লাখ লাখ নারীর কর্মসংস্থান জড়িত।
এই খাতের উন্নয়ন নারীর মতায়নকেও এগিয়ে নেবে।