চার কারণে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ধীর গতিতে এগোচ্ছে। কারণগুলো হচ্ছে, বৈদেশিক বাণিজ্যে স্থবিরতা, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামের অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ।
এতে বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি সঞ্চার হচ্ছে না। ফলে কাঙ্ক্ষিত হারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি না হওয়ার শঙ্কা আছে।
তবে আশার কথা হচ্ছে করোনা মহামারির প্রভাব মোকাবিলা করে দেশের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তবে মহামারি পরবর্তী অর্থনীতিতে মারাত্মক ঝুঁকির আশঙ্কা এখনও রয়ে গেছে।
মঙ্গলবার রাতে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বার্ষিক রিপোর্ট ২০১৯-২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব মন্তব্য করা হয়েছে। প্রতিবেদনে করোনার প্রভাব মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতি কীভাবে এগোচ্ছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা, দেশের ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতিসহ অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়, করোনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। করোনার প্রথম ধাক্কা সামাল দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই এসেছে আবার দ্বিতীয় ঢেউ। এতেও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার প্রভাব মোকাবিলা করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো জাদুকরি ভূমিকা পালন করেছে। এতে দেশের উৎপাদন খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মাঠ পর্যায়ে টাকার প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। এতে দেশের ভেতরে চাহিদা বজায় থাকার কারণে অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
এতে আরও বলা হয়, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নির্ভর করছে মূলত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়নের ওপর। এছাড়া সরকারিভাবে দেওয়া নীতি সহায়তাগুলো প্রবৃদ্ধির পথে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে বলে প্রতিবেদনে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
এতে বলা হয়, করোনার প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় গত অর্থবছরের শেষ দিকে রফতানি আয় কমে গিয়েছিল। পরে বাড়তে শুরু করেছে। একই অবস্থা আমদানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও। করোনার মধ্যে রেমিটেন্স আয়ে ঊর্ধ্বগতির ধারা বজায় রয়েছে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভোক্তার চাহিদা ধরে রাখতে সহায়তা করেছে। কৃষি ও গ্রামীণ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ঋণের প্রবাহ কমলেও চলতি অর্থবছরের অক্টোবর থেকে তা বাড়তে শুরু করেছে। এই ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হলে গ্রামীণ অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আমদানি কমায় এবং রেমিটেন্স বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার আয় বেড়েছে। এর প্রভাবে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে এ হার অর্থবছর শেষে আরও বেড়ে যেতে পারে। চলতি অর্থবছরে এ হার ৫ থেকে ৫ দশমিক ৯ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে। করোনার প্রভাবে আগামী অর্থবছরেও মূল্যস্ফীতিতে চাপ থাকবে। ফলে আগামী অর্থবছরেও এ হার ৫ থেকে ৫ দশমিক ৯ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে। তবে বর্তমানে যেভাবে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে তাতে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ নেই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য মূল্য বেশ কম। এতে বৈদেশিক উৎস থেকে দেশে মূল্যস্ফীতি আমদানি হওয়ার সুযোগ নেই।