যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স,
জার্মানিসহ অনেক উন্নত দেশ এখনো করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সেই তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি
অনেকটাই ভালো। শুধু আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যার দিক থেকেই নয়, অর্থনৈতিক
বিপর্যয় মোকাবেলায়ও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ব্লুমবার্গের মতে, করোনা মহামারি
মোকাবেলায় সফল দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ২০তম অবস্থানে। সরকারের
সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণেই বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে করোনা
পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যাচ্ছে বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
একাদশ জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনের প্রথম দিনে দেওয়া ভাষণে তিনি আশা
প্রকাশ করেন, সরকার শিগগিরই সবাইকে করোনাভাইরাসের টিকার আওতায় নিয়ে আসতে
পারবে। এদিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ টিকা আজই বাংলাদেশে
আসবে বলে জানা গেছে। এই টিকা ভারত বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিচ্ছে। আর তিন
কোটি ডোজ টিকার জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির
অধীনে ৫০ লাখ ডোজ টিকার প্রথম চালানটি আগামী ২৬ জানুয়ারির মধ্যে ঢাকায়
পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিশু ও গর্ভবতী নারীদের বাদ দিলে
বাংলাদেশে টিকা দিতে হবে প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে। এ জন্য টিকার প্রয়োজন হবে
২৮ কোটির মতো। বাংলাদেশ নানা সূত্র থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আশা করা হচ্ছে, এ বছরের মধ্যেই বেশির ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা
যাবে। কিন্তু এরই মধ্যে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি
তৈরি হতে শুরু করেছে। ভারতে টিকা প্রদান শুরু হয়েছে ১৬ জানুয়ারি। এরই মধ্যে
টিকা নেওয়ার পর দুজনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, এই দুজনের
মৃত্যু টিকার কারণে হয়নি। নরওয়ে, নেদারল্যান্ডসসহ আরো কিছু দেশে টিকা
নেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গবেষকরা মৃত্যুর কারণ টিকার সঙ্গে সম্পর্কিত
কি না, তা খুঁজে দেখছেন। আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফাইজার ও মডার্নার টিকা
একসঙ্গে নেওয়ায় কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা
মনে করেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে টিকা প্রদান বন্ধ করার যুক্তিসংগত
কোনো কারণ নেই। তাঁদের মতে, টিকা না নিলে বরং আমাদের অনেক বেশি মূল্য
চুকাতে হবে। বাংলাদেশে টিকা প্রদানের আগেই হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখা
হয়েছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যবস্থাপনার জন্য। টিকা দেবেন যে
স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদেরও প্রয়োজনীয় প্রশিণ দেওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ে সবার
জন্য টিকা সংগ্রহ এবং তা প্রয়োগের ওপর আমাদের আরো বেশি নজর দিতে হবে।
বিশ্বে টিকা বিতরণে অসাম্য হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য
সংস্থাও এই অসাম্য দূর করার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আমরা
আশা করি, সব দেশের সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সুষ্ঠুভাবে টিকা বিতরণের উদ্যোগ
নেওয়া হবে।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ এ পর্যন্ত যে সাফল্য
দেখিয়েছে, তা সত্যি প্রশংসনীয়। আমরা আশা করি, সাফল্যের এই ধারা অব্যাহত
থাকবে।