বোরো লাগানো নিয়ে কুমিল্লার গ্রামে এখন চলছে উৎসবের আমেজ। ব্যস্ত সময়
কাটছে কৃষক-কৃষাণিদের। কেউ বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলছেন। কেউ পরিষ্কার
করেছেন। কেউ জমিতে ধানের চারা পৌঁছে দিচ্ছেন। এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে
কুমিল্লার ধান চাষের এলাকাগুলোতে।
কৃষি অফিসের সূত্র মতে, এবার কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় এক লক্ষ ৬০ হাজার
হেক্টরের কিছু বেশি জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তার
মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ হবে এক লক্ষ ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে।
হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হবে ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে। স্থানীয় জাতের ধান
চাষ হবে ৩০ হেক্টর জমিতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুয়াশা ঢাকা ভোর। দৃষ্টি আটকে যায় কয়েক হাত সামনের
কুয়াশায়। বাড়ি সংলগ্ন ভিটায় (ছোট আকারের উঁচু জমি) ধানের চারা তুলছেন
কৃষাণি ও পরিবারের শিশু-কিশোররা। পুরুষরা ঝুড়িতে ভরে মাথায় তুলে ধানের চারা
নিয়ে যাচ্ছেন মাঠে। মাঠে শ্রমিকরা সার ছিটাচ্ছেন। কেউ চাষ দেয়া জমির ঘাস
পরিষ্কার করছেন। ঘাষ পরিষ্কার শেষে সারিতে লাগানো হচ্ছে ধানের চারা। হালকা
হিমেল বাতাসে দুলছে সদ্য লাগানো ধানের চারা। দোল খাওয়া ধানের চারায় কৃষক
দেখছেন আগামীর রঙিন স্বপ্ন। চারা বড় হবে, ফসলে ভরে উঠবে তার গোলা।
লাকসামের মঞ্জুমা বেগম নামের একজন কৃষাণি জানান, আমাদের মাঠে এই ফসল
দিয়ে পরিবারের সারা বছরের খাবারের যোগান দিতে হয়। তাই বোরো মৌসুম এলে সময়
মতো রান্না, খাবারের কথা ভুলে যেতে হয়। শুকনো খাবার চিড়া-মুড়ি খেয়ে ভোরে
কাজে নামতে হয়। নারীরা বেশিরভাগ সময়ে ধানের চারা তোলেন। পরিবারের পুরুষরা
শ্রমিকদের সাহায্য করতে মাঠে চলে যান। কাজ শেষে নারীরা সকালের রান্না
দুপুরে করেন।
লাকসামের মনপাল গ্রামের কৃষক আলী আকবর বলেন, বীজ, সার কিছুর দাম বেশি।
শ্রমিকের মজুরি বেশি। সার ও বীজের দাম সহনীয় হলে ধান চাষ করে ভালো লাভ
পাওয়া যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক(ভারপ্রাপ্ত) শহীদুল হক
বলেন, এখন বোরো লাগানোতে ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষক-কৃষাণিদের। কোনো সমস্যা না
হলে হাইব্রিড প্রতি হেক্টরে ৪.১ মেট্রিক টন, উচ্চ ফলনশীল ৩.৯ মেট্রিক টন ও
স্থানীয় জাতের ধান প্রতি হেক্টরে ২ মেট্রিক টন উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।