‘অষ্টম শ্রেণি থেকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছি। সত্তরের নির্বাচনে
পাবলিসিটি করে তিন পুলের মাথা পুরান দেশ বাংলা হোটেলে দুইটা নানরুটি আর এক
বাটি ডাল খেতাম, চার আনা-ত্রিশ পয়সা দিয়ে। এরপর ৭৩'র নির্বাচনসহ আমার জীবনে
প্রতিটি নির্বাচনে, স্থানীয় হোক-জাতীয় হোক, কোনো দিন ঘরে বসে থাকি নাই।
এবার প্রথম আমার জীবনের কঠিন সময়। কারণ এবারের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আমি
অংশ নিতে পারছিনা।’
ধরে আসা গলায়, অশ্রুসজল চোখে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে বসে
কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম সিটি
করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের অশেষ দোয়ায়, আল্লাহর মেহেরবানিতে গতকাল আমি করোনা
নেগেটিভ হয়েছি। আল্লাহ যখন এই জীবনে আমাকে আবার ফিরে আসার সুযোগ দিয়েছেন,
তখন প্রথমেই আমি আপনাদের সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি আজ আপনাদের
মাধ্যমে চট্টগ্রামবাসীকে কিছু কথা বলতে চাই।'
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সম্মুখে এসে
হাজির। আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে চট্টগ্রামই হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার
শ্রেষ্ঠতম যোগাযোগকেন্দ্র। এটা উপলব্ধি করতে পেরেই আমাদের মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল করছেন। একইসাথে
মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। সেখানে মাতারবাড়ীকে কেন্দ্র করে আলাদা
একটি জগৎ গড়ে উঠছে। অন্যদিকে মিরসরাইয়ের ইকোনোমিক জোনে সারা পৃথিবীর
বিনিয়োগকারীরা ছুটে আসছে।’
নগর আওয়ামী লীগের এই সহ-সভাপতি বলেন, ‘এই চট্টগ্রাম একটি গুরুত্বপূর্ণ
সময়ের অপেক্ষায় আছে। এই অপেক্ষায় আজ আপনাদের সামনে নির্বাচন আসছে,
বুঝে-শুনে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শেখ হাসিনা যাকে প্রার্থী দিয়েছেন,
আমাদের তাকেই চিন্তায় আনতে হবে। সেটা এ জন্যই যে, চট্টগ্রামের স্বার্থে। এই
নির্বাচনে জিতলে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারবে না। বিএনপিরও যারা
সচেতন আছে, চট্টগ্রামের স্বার্থে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার প্রার্থীকে
জয়যুক্ত করে ফেলাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।’
এ সময় তিনি সাংবিধানিক পদে থেকেও নির্বাচন নিয়ে কথা বলার জন্য প্রকাশ্যে
সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, আমি আজকে আমার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে এসেছি।
পতাকা উড়িয়েও আসি নাই। শুধু আপনাদের মাধ্যমে এই মেসেজেটা দেয়ার জন্য আসছি।
এটা বলাতে যদি আমার কোনো দোষ হয়ে থাকে, আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি, মাফ
করে দেবেন। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় আপনাদের মাধ্যমে এই বার্তাটা দিতে আসছি।’
গত বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু করোনা মহামারির কারণে নির্ধারিত তারিখের এক সপ্তাহ আগে ভোট স্থগিত
করা হয়। সেই নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করতে না পারায় গত বছরের ৫
আগষ্ট চট্টগ্রাম সিটিতে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় খোরশেদ আলম সুজনকে।
খোরশেদ আলম সুজন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে যোগদান করেন।
তিনি ছাত্রজীবনে হাজী মুহাম্মদ মহসীন সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের সাধারণ
সম্পাদক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে
সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগে
যোগদান করেন।