শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পর প্রথম ১৫ কার্যদিবস টানা দাম বাড়া রবি
আজিয়াটার শেয়ার গত সপ্তাহে দাম কমার শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
এমনকি সপ্তাহে একাধিক কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের ক্রেতা সংকটও দেখা
দেয়।
এদিকে রবি আজিয়াটার দরপতনের সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ
হারানোর শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে ‘জেড’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান অলটেক্স
ইন্ডাস্ট্রিজ। বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে আগ্রহী না হওয়ায়
সপ্তাহজুড়েই দাম কমেছে।
নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং আইপিও খরচের জন্য
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) শেয়ার ছেড়ে ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪০
টাকা সংগ্রহ করা রবি’র শেয়ার গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু
হয়।
লেনদেনের প্রথমদিন থেকেই কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে মহাদাপট
দেখাতে থাকে। প্রথম ১৫ কার্যদিবস টানা দাম বাড়ার পাশাপাশি ১৪ কার্যদিবসেই
দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে।
কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)
থেকে বিনিয়োগকারীদের সতর্কও করা হয়। এ বিষয়ে ডিএসই থেকে বলা হয়, রবি’র
শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে ৪ জানুয়ারি কোম্পানিটিকে নোটিশ করা হয়।
জবাবে কোম্পানিটি জানিয়েছে- সম্প্রতি শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পিছনে
কোনো অপ্রকাশত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে গত ৫ জানুয়ারি ডিএসই থেকে এই তথ্য প্রকাশ করা
হয়। তবে এরপরও ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত লেনদেন হওয়া প্রতিটি কার্যদিবসে
কোম্পানিটির শেয়ার দিনের দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে। এর মাধ্যমে
দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে কোনো কোম্পানি লেনদেন শুরুর প্রথম ১৩ কার্যদিবস
দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে।
অবশ্য ১২ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড
এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে তালিকাভুক্ত
কোম্পানিগুলোর শেয়ার দামের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন তদন্তের নির্দেশ দিলে
রবি’র দাম বাড়ার প্রবণতায় কিছুটা ছেদ পড়ে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্তের নির্দেশে ১৩ জানুয়ারি লেনদেন শুরু হতেই রবির
শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। বিনিয়োগকারীদের মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে
এক পর্যায়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম আগের দিনের তুলনায় কমে যায়। তবে লেনদেনের
শেষের দিকে বাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে তদন্তের নির্দেশ স্থগিত করা হচ্ছে।
এতে কোম্পানিটির শেয়ার আবার বাড়ে। ফলে পতন কাটিয়ে ৪০ পয়সা দাম বেড়ে দিনের
লেনদেন শেষ করে রবি।
বাজারে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জন সন্ধ্যার আগেই সত্য হয়। ১৩ জানুয়ারি বিকেলেই
বিএসইসি দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে তদন্ত স্থগিতের নির্দেশ দেয়। এতে ১৪ জানুয়ারি
আবার হু হু করে বাড়তে থাকে রবির শেয়ার দাম। দেখতে দেখতে কোম্পানিটির শেয়ার
দিনের দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে।
তবে গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস ১৭ জানুয়ারি প্রথম দরপতনের কবলে পড়ে
রবি। ওইদিন লেনদেন শেষ দিকে বিনিয়োগকারীরা দফায় দফায় দাম কমিয়ে রবি’র
শেয়ারের বিক্রির চেষ্টা করলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছিল না। একই চিত্র দেখা দেয়
১৮ জানুয়ারি। অবশ্য ২০ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ার দাম আবার বাড়ে।
এরপরও গত এক সপ্তাহে রবি আজিয়াটার শেয়ার দাম কমেছে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৮ টাকা ৪০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ
কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৬১ টাকা ৭০
পয়সা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭০ টাকা ১০ পয়সা। এর মাধ্যমে
ডিএসইতে দাম কমার শীর্ষ তালিকায় নবম স্থানটি দখল করেছে রবি।
এদিকে দফায় দফায় শেয়ারের দাম কমায় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ কোম্পানিটিরে
শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে গেল সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন
হয়েছে ৯১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন
হয়েছে ১৮৮ কোটি ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এদিকে গত সপ্তাহে ডিএসইতে দাম কমার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে অলটেক্স
ইন্ডাস্ট্রিজ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ১৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
এর পরেই রয়েছে লাফার্জহোলসিম। সপ্তাহজুড়ে এই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম কমেছে
১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ দাম কামার মাধ্যমে পরের স্থানে
রয়েছে সাভার রিফ্যাক্টরিজ।
এছাড়া গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায়
থাকা- আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ, অ্যাপোল ইস্পাতের ১৩
দশমিক ৪৮ শতাংশ, জুট স্পিনার্সের ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ, মিথুন নিটিংয়ের ১২
দশমিক ১২ শতাংশ, সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইলের ১২ শতংশ এবং ডেল্টা স্পিনার্সের
১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ দাম কমেছে।