রোববার পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের ঊর্ধবতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান
বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন এই তথ্য প্রকাশ
করেন।
পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে
তিনি বলেন, গত বছর চায়ের জাতীয় উৎপাদন হয়েছে ৮৬ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন কেজি, যার
মধ্যে উত্তরাঞ্চলের এই পাঁচ জেলার সমতলের চা বাগান থেকে এসেছে ১১ দশমিক ৯২
শতাংশ।কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও গত বছর চা উৎপাদনে রেকর্ড হয়েছে জানিয়ে
তিনি বলেন, “এর ফলে উত্তরবঙ্গ এখন চা উৎপাদনে দেশের তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় চা
অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চল এখন তৃতীয়; আর বরাবরের মতো সিলেট
অঞ্চল দেশের প্রথম চা উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছে।”মামুন
জানান, জাতীয়ভাবে মোট চা-এর প্রায় ৮২ শতাংশ সিলেট অঞ্চলে, প্রায় ১২ শতাংশ
উত্তরের পঞ্চগড় অঞ্চলে এবং প্রায় ৬ শতাংশ চট্টগ্রাম অঞ্চলে উৎপাদিত হয়। উত্তরের এই পাঁচ জেলা হলো পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও নীলফামারী।শামীম
আল মামুন জানান, ২০২০ সালে পঞ্চগড়সহ উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় ১০টি নিবন্ধিত
ও ১৭টি অনিবন্ধিত চা বাগান এবং সাত হাজার ৩১০টি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানে
(নিবন্ধিত এক হাজার ৫১০টি) মোট ১০ হাজার ১৭০ দশমিক ৫৭ একর জমিতে চা চাষ
হয়েছে; এর বিপরীতে সবুজ চা পাতা উত্তোলন করা হয়েছে ৫ কোটি ১২ লাখ ৮৩ হাজার
৩৮৬ কেজি। আর এই পাতা থেকে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে অবস্থিত ১৮টি কারখানায় এক
কোটি কেজির বেশি চা উৎপাদিত হয়েছে।এটি বিগত বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ১১ লাখ কেজি বেশি বলে জানান মামুন।শামীম
আল মামুন আরও জানান, পঞ্চগড়ে ক্ষুদ্রায়তন নিবন্ধিত বাগান ৯৯৮টি,
ক্ষুদ্রায়তন অনিবন্ধিত বাগান পাঁচ হাজার ৫০০টি, নিবন্ধিত চা বাগান নয়টি ও
অনিবন্ধিত চা বাগান ১৬টি। ৬৪২ একর জমির এসব বাগানে মোট আট হাজার চার কোটি
৬০ লাখ ৫১ হাজার ১৭৬ কেজি সবুজ চা পাতা তোলা হয়েছে। এসব চা পাতা থেকে ৯৮
লাখ ৯৭ হাজার ৭০ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।“ঠাকুরগাঁওয়ে ক্ষুদ্রায়তন
নিবন্ধিত ৩৫৭টি, ক্ষুদ্রায়তন অনিবন্ধিত ৩০০টি, নিবন্ধিত চা বাগান একটি ও
অনিবন্ধিত চা বাগান একটি। এক হাজার ২৯৩ একর জমির এসব বাগানে মোট ৪৫ লাখ ২৫
হাজার ৫০০ কেজি সবুজ চা পাতা ও তা থেকে চার লাখ ১৩ হাজার ৩৪০ কেজি চা
উৎপাদিত হয়েছে।” এছাড়া লালমনিরহাট, নীলফামারী ও দিনাজপুর জেলায় ২৩৫
দশমিক ৫৭ একর জমিতে সাত লাখ ছয় হাজার ৭১০ কেজি সবুজ চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে
বলে তিনি জানান।মামুন সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতেও
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের ব্যবস্থাপনায়
উত্তরবঙ্গের চা বাগানের সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল।‘স্বাস্থ্যবিধি
মেনে’ চা বাগান পরিচর্যা ও পাতা তোলার কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার কারণে
২০২০ সালে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে, বলেন মামুন।চা
আবাদ বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহের ফলে
সমতলের চা বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান থেকে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ চা
উৎপাদন সম্ভব হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।সংবাদ সম্মেলনে পঞ্চগড়
আঞ্চলিক চা বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরের
খামার তত্ত্বাবধায় ছায়েদুল হক, চা কারখানারা মালিক জাহেদুল হক, বাংলাদেশ
স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আমিরুল হক খোকন ও ক্ষুদ্র চা
চাষি মতিয়ার রহমান, আনিসুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য দেন।বক্তারা চা পাতার ন্যায্য মূল্য, পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা ও সময়মত সার সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান।