এক বছর পর আবার ব্রেন টিউমারটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মোশাররফ রুবেলের।
সেই ২০১৯ সালের মার্চে প্রথম মাথায় টিউমার ধরা পড়ে জাতীয় দলের এ সাবেক
ক্রিকেটারের।
সিঙ্গাপুরে ৬ মাসের বেশি সময়ের চিকিৎসা শেষে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে
মোটামুটি সুস্থ হন দেশের হয়ে ৫টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা এ বাঁহাতি
স্পিনার।
২০২০ সালটা মোটামুটি ভালো কাটে তার। জীবনযাপন, চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া সবই
স্বাভাবিক হয়ে আসে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আবার ব্রেন টিউমারের অস্তিত্ব
ধরা পড়েছে।
নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ তথ্য দিয়েছেন মোশাররফ রুবেল নিজেই। আজ
(মঙ্গলবার) দুপুরে জাগো নিউজের সাথে আলাপে নতুন করে ব্রেন টিউমার ধরা পড়া
এবং নিজের শরীরের সর্বশেষ অবস্থা জানিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক এই স্পিনার।
মোশাররফ জানান, গত জুনের পর রেগুলার চেকআপ করাতে গিয়ে ধরা পড়ে ব্রেন
টিউমার আবার বেড়েছে। যেখানে তার মূল চিকিৎসা হয়েছে, সেই সিঙ্গাপুরের মাউন্ট
এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসকের সাথে ভিডিও কনসালটেন্সির মাধ্যমে তার
পরামর্শে সেই ব্রেন টিউমারের বৃদ্ধি আটকাতে গত বছরের শেষ দিকে কেমোথেরাপি
দেয়া হয় মোশাররফকে।
তবে সেটা ইনজেকশনের মাধ্যমে ছিল না। ওই কেমোটা মুখে খেতে হয়েছে।
বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য ছিল প্রায় ১০ লাখ টাকা। কিন্তু মুখে খাবারের
দুই কেমোতে কাজ হয়নি। এমআরআই করে দেখা গেছে ব্রেন টিউমারের বৃদ্ধি অব্যাহত
আছে।
তাই অগত্যা আবার মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে
ভিডিও কনসালটেন্সির মাধ্যমে কথা বলা। তিনি এবার আর মুখে খাবার নয়, নতুন করে
৪টি কেমো নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
মোশাররফ জানান, ওই কেমোগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ঔষধ কোম্পানি
‘ফাইজার’ আর সুইজারল্যান্ডের নামী ঔষধ নির্মাণ ও বাজারজাত সংস্থা
‘রোচ’-এর। প্রতি ডোজে ওই দুই কোম্পানির একটি করে ইনজকেশন পুশ করার কথা
বলেছেন মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ।
সেই অনুযায়ী গতকাল (সোমবার) স্থানীয় ডেল্টা হাসপাতালে প্রথম কেমো পুশ
করা হয়েছে। আজ দুপুরে তা জানিয়ে মোশাররফ রুবেল বলেন, ‘ডাক্তার আমাকে ফাইজার
ও রোচ কোম্পানির যৌথ কেমো নিতে বলেছেন। মোট ৪টি কেমো দিতে হবে। যার প্রথম
ডোজ দেয়া হয়েছে। বাকি তিন ডোজ দুই সপ্তাহ পর পর নিতে হবে। পরের কেমোর তারিখ
৭ ফেব্রুয়ারি। এভাবে ৪টি কেমো নেয়ার পর আবার এমআরআই করে দেখতে হবে ব্রেন
টিউমারের বৃদ্ধি রোধ হয়েছে কিনা।’
সবার কাছে দোয়া চেয়ে মোশাররফ রুবেল বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের
রহমত, দয়া আর সবার দোয়া কামনা করছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে কেমো
দেয়ার পর ব্রেন টিউমারের বৃদ্ধিটা বন্ধ হয়ে যায়।’
কারও কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য চাননি। তবে মোশাররফ রুবেলের দেয়া তথ্য
থেকেই জানা গেছে, তার এই ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। এর আগে
২০১৯ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে থাকা, মাউন্ট এলিজাবেথ
হাসপাতালের ফি, ৬-৭টি কেমো ঔষধ ও আনুষাঙ্গিক খরচ মিলে প্রায় ১ কোটি টাকার
মত ব্যয় হয়েছে।
এরপর গত বছরের শেষ দিকে ১০ লাখ টাকা মূল্যের কেমো খেয়েও কোনো কাজ হয়নি।
এখন যে ফাইজার ও রোচ কোম্পানির কেমো দেয়া হয়েছে, সেগুলোও যথেষ্ট দামি।
ফাইজারের একটি কেমোর মূল্য ৫ হাজার মার্কিন ডলার। আর রোচ কোম্পানির একটি
কেমোর দাম আড়াই হাজার ডলার করে। দুই কোম্পানির ৪টি করে কেমোর মূল্য
দাঁড়াবে ২০ হাজার + ১০ হাজার = ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। মানে বাংলাদেশি
মুদ্রায় প্রায় ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তারপর আবার ভিডিও কনসালটেন্সির
মাধ্যমে চিকিৎসকের সাথে কথা বলে এমআরআই করাতে হবে। সবমিলিয়ে অনেক খরচ।
আগেরবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সহযোগিতা পেয়েছেন রুবেল।
এবার এখন পর্যন্ত ক্রিকেট বোর্ড, ক্রীড়া সংগঠক ও পৃষ্ঠপোষক কারো কাছ থেকে
আর্থিক সহযোগিতার আবেদন করেননি জাতীয় দলের এ সাবেক ক্রিকেটার। কিন্তু কঠিন
সত্য হলো, তার একার পক্ষে এত বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান দেয়াও কঠিন।
সহৃদয় স্বচ্ছল ক্রীড়া সংগঠক ও ব্যক্তিবর্গ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে
হয়তো মোশাররফ রুবেলের এ ব্যয়বহুল চিকিৎসাটা ভালোভাবে সুসম্পন্ন হতো। তাতে
তার দুশ্চিন্তা অনেকখানি কমে যেতো।