ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
দেবীদ্বারে মুক্তিযোদ্ধা সনদের ৫২৩ জনের যাচাই-বাছাই
বার বার যাচাই-বাছাইয়ে ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা  
Published : Sunday, 31 January, 2021 at 12:00 AM, Update: 31.01.2021 2:02:19 AM
বার বার যাচাই-বাছাইয়ে ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা  এ,বি,এম আতিকুর রহমান বাশার ঃ দেবীদ্বার উপজেলার বেসামরিক গেজেটভূক্ত ৫২৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার (যারা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন) ওই তালিকার যাচাই- বাছাই শুরু হয়েছে উপজেলা পরিষদ হল রোমে শনিবার সকাল ১০টা (৩০ জানুয়ারী) থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
দিনভর ৫২৩ জনের মধ্যে মাত্র ১০৬ জনের যাচাই বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। বাকীদের ধারাবাহিকভাবে করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান। তিনি জানান, দেবীদ্বারে মুক্তিযোদ্ধা বেশী হওয়ায় এক দিনে যাচাই বাছাই করা সম্ভব হচ্ছেনা। তাই রোববার সকাল ১০টা থেকে দেবীদ্বার পৌরসভা, শালঘর, ইউছুফপুর, রসুলপুর, সুবিল, ফতেহাবাদ (১টি পৌরসভা ও ৫ ইউনিয়ন সহ) ৬ এলাকার যাচাই বাছাই করা হবে। আজ রাতেই বাকী ১০ ইউনিয়নের যাচাই- বাছাই এর তারিখ- সময় নির্ধারন করে ইউনিয়ন কমান্ডারদের মাধ্যমে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের জানিয়ে দেয়া হবে।
এখানে উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অর্থাৎ ১ হাজার ৪ শ’ এর উপর ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার যাচাই- বাছাই হচ্ছেনা।  জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) কর্তৃক প্রকাশিত তালিকায় থাকা ৫২৩ জন যাদের নাম লালবার্তা এবং ভারতীয় তালিকায় নেই এমন মুক্তিযোদ্ধার বিষয়টি যাচাই বাছাই হবে। তারা সবাই ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। অথচ জামুকা থেকে পাঠানো তালিকার অধিকাংশই ভারতীয়, লাল বই, সবুজ বইয়ে তালিকাভূক্ত।
মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. বসিরুল আলম ভূঁইয়া জানান, প্রথম ধাপে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর জামুকা কর্তৃক ৭৬৭ জন মুক্তিযোদ্ধার যাচাই- বাছাই করার জন্য তালিকা প্রেরন করলেও ওই তালিকা স্থগিত করে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারী ২৫৩ জন বাদ দিয়ে ৫২৩ মুক্তিযোদ্ধার যাচাই- বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়।
তিনি আরো বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য ভারতীয়, লাল বই, সবুজ বইয়ে তালিকাভূক্ত সনাক্তকারী ৩জন করে থাকবেন, এছাড়াও প্রতি ইউনিয়নের কমান্ডার, ডেপুটি কমান্ডার সহ মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি অনেক হবে। যদিও আমি উক্ত যাচাই- বাছাই কমিটির আহবায়ক, আমার নামও উক্ত ৫২৩ জনের তালিকা ১১নম্বরে আছে। উক্ত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই- বাছাই কমিটিতে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. বসিরুল আলম ভূঁইয়া আহবায়ক, স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি হিসেবে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সাসামসুল আলম (শেখ আলম) সদস্য, জেলা প্রশাসকের মনোনীত প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম (নান্নুমিয়া) সদস্য এবং দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসানকে সদস্য সচিব করে ৪ সদসেস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভের সাথে বলেন, দেশ স্বাধীনের পর ৮/১০ বার যাচাই বাছাই হয়েছে। এরই মধ্যে ১৯৭২ সালে ২৫ পয়সা(চার আনায়) ফরম কিনে ফিলাপ করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা ভূক্ত হয়েছি। ১৯৮৭ ইং সনে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা গ্যাজেটভূক্ত করা হয়। তখন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। রাষ্ট্রপতির এক অর্ডিনেন্সে তখন একটি কমিটির মাধ্যমে ভারতীয় তালিকার ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা মুক্তিবার্তায় গ্যাজেট ভূক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৯ ইং সনে ভারতীয় তালিকা এবং গ্যাজেটের ভিত্তিতে লাল বইয়ের তালিকা ভূক্ত করা হয়। ২০০১ সালে পুনঃরায় যাচাই –বাছাই করা হয়। ২০০২ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) প্রতিষ্ঠা হয়, প্রতিষ্ঠার পর কয়েক বছর সময় লাগে কার্যক্রম পরিচালনা করতে। অথচ ২০০৪ সালের ১৮ নভেম্বর গেজেটে প্রকাশিত তালিকা নিয়ে জামুকা দাবী করে ওই তালিকায় তাদের অনুমতি নেই। অথচ তখন পর্যন্ত জামুকার কোন কার্যক্রমই ছিলনা। পরবর্তীতে ২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান আহাদ চৌধূরীর সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে ভারতীয় তালিকা এবং লাল বইয়ের তালিকার সমন্বয়ে আরো এক দফা সবুজ বই’ তালিকা করা হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি আমরা মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যেন অপরাধ করেছি।  স্বাধীনতার পর বিগত ৫০বছরে যাচাই বাছাইয়ে হাজিরা দিতে দিতে কান্ত হয়ে পড়েছি। আমি ভারতীয় তালিকা, লাল বই, সবুজ বই সহ সকল তালিকায় থেকেই গেজেটভূক্ত মুক্তিযোদ্ধা। তার পরও জামুকা তার ক্ষমতার বাহাদুরি দেখাচ্ছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম চৌধুরী আমরা বিভিন্ন সময়ে যাচাই- বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হয়েছি। এখন বার্ধক্যের ভারে জীবন সায়ান্নে, নানা রোগে আক্রান্ত জর্জরিত, চলতে ফিরতে কষ্ট হচ্ছে। এরই মধ্যে আবারো যাচাই বাছাই চলছে, আসতেই হবে তাই আসলাম। ছেলে-মেয়েরা বলছে, মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হয়ে যাক, আর যেতে হবেনা। এখানে সকাল থেকে বসে আছি, বিকেল ৫টায়ও জানতে পারলামনা, আমাদের যাচাই- বাছাই কবে হবে কি না বা কখন হবে ? করোনা কালের কোন নিয়ম- বিধি আমাদের নেই, গদা- গদি করেই শত শত মুক্তিযোদ্ধার উপস্থিতি এখানে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের ভাগ করে নির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে দিলে ওই তারিখেই আসতে পারতাম। জামুকা’র পরে অব্যবস্থাপনায় স্থানীয় প্রশাসনও কম দায়ি নয়।
দেবীদ্বার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুস সামাদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় এবং জামুকা থাকা স্বত্বেও আমরা ৫০ বছর ধরে যাচাই- বাছাইয়ের নামে বার বার উপস্থিত হওয়া আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। এরচেয়ে রাষ্ট্রের জঘন্য অপরাধী বা কয়েদেীরা ততবার কোর্টে হাজিরা দিতে হয়না। তার আগেই তাদের পক্ষে- বিপক্ষে এ রায় চলে আসে আর আমরা এখনো হাজিরা দিতে হচ্ছে। এটার দায়ভারতো রাষ্ট্রের, মন্ত্রনালয় সহ সংশ্লিষ্টদের।
তিনি আরো বলেন, জামুকার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই- বাছাই কমিটির আহবায়ক (বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. বসিরুল আলম) যাকে করা হয়েছে অথচ তিনিও যাচাই- বাছাইয়ের অন্তভূক্ত ৫২৩ জনের তালিকার ১১ নম্বরে আছেন। তিনি কি করে যাচাই- বাছাই কমিটির আহবায়ক হন ? প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার যাচাই- বাছাইয়ে ভারতীয় তালিকা, লাল বই, সবুজ বই সহ যে কোন তালিকার ২টি তালিকার অন্তর্ভূক্ত ৩ জনের সনাক্ত লাগবে।