ভ্যাকসিন গ্রহণে আগ্রহ কম কুমিল্লার ফ্রন্ট লাইনারদের
Published : Monday, 1 February, 2021 at 12:00 AM
রণবীর
ঘোষ কিংকর।। অবশেষে কুমিল্লায় পৌঁছেছে বহুল প্রত্যাশীত করোনা ভ্যাকসিন।
রবিবার (৩১ জানুয়ারী) সকালে ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন জেলা সিভিল
সার্জন কার্যালয়ে পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা.
নিয়াতুজ্জামান।
ফ্রন্টলাইনার (করোনার প্রথম সারির যোদ্ধা) যারা আছেন
তাদেরইকেই অধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রথম সারি ও দ্বিতীয় সারি নিশ্চিত করে আগামী
সপ্তাহ থেকে প্রদান করা হতে পারে করোনার টিকা। তবে ভ্যাকসিন গ্রহীতারা
অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারবেন না বলে জানান তিনি।
এদিকে করোনার টিকা গ্রহণ নিয়ে রয়েছে টিকা গ্রহীতাদের আগ্রহ-অনীহা।
ফ্রন্টলাইনারদের কেউ টিকা গ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও অনেকেই আবার অনীহা
প্রকাশ করছেন। তবে এই টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ উল্লেখ করে সকলকে টিকা গ্রহণের
জন্য পরামর্শ দেন কুমিল্লার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ।
জেলা সিভিল সার্জন
কার্যালয় সূত্রে জানা যায়- রবিবার সকালে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের
বিশেষ একটি ভ্যানে যোগে ২৮ হাজার ৮০০ ভায়ালে কুমিল্লায় পৌঁছেছে ২ লক্ষ
৮৮হাজার ডোজ ভ্যাকসিন। প্রতিটি ভায়ালে রয়েছে ১০ ডোজ ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিনগুলো
আসার পর অত্যন্ত সুরক্ষার সাথে রাখা হয়েছে ইপিআই স্টোরে। এদিকে, টিকা
প্রদানের জন্য রবিবার (৩১ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে টিকাদানে নিয়োজিত
কর্মীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচী। চলবে চলতি সপ্তাহ ব্যাপী।
জেলা সিভিল
সার্জন ডা. নিয়াতুজ্জামান জানান- ইপিআই কর্মসূচীর মতো করেই করোনার টিকা
প্রদান কর্মসূচী পরিচালিত হবে। এজন্য আজ থেকে (৩১ জানুয়ারি) জেলায় টিকাদানে
নিয়োজিদের প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু হয়েছে। প্রতিটি উপজেলা থেকে ৫জন করে,
সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পর্যায়ের বেশ কয়েকজনকে ওই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
যারা উপজেলায় গিয়ে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করবে। প্রথম ধাপে সামনের সারির
যোদ্ধাদের টিকা প্রদানের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিএমএইচ ও
জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৃথক বুথ গঠন করা হবে।
প্রত্যেক বুথে ২জন নার্স, ২জন সাকমো ও ৪জন প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ার থাকবে।
৪
জন ভলান্টিয়ার স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করবেন। প্রথম ভলান্টিয়ার
স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাইনে দাঁড় করানো, দ্বিতীয় ভলান্টিয়ারের কাজ হবে
রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করে তালিকা করা, তৃতীয় ভলান্টিয়ারের কাজ টিকা
গ্রহীতার তালিকা নিশ্চিত করা এবং চতুর্থ ভলান্টিয়ার টিকা গ্রহণকারীর ৩০
মিনিট অপেক্ষমান কক্ষে অবস্থান করে টিকা গ্রহীতাদের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা
বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
তবে কবে কিভাবে ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে এমন
প্রশ্নে তিনি জানান- জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ভ্যাকসিন কমিটির সভাপতি এবং
স্থানীয় সংসদ সদস্য উপদেষ্টা। তাদেরকে নিয়ে আমাদের ভ্যাকসিন কমিটির সভা
করা হবে। ওই সভার সিদ্ধান্তে জানা যাবে কবে থেকে টিকাদান কর্মসূচী শুরু করা
হবে। তবে আগামী সপ্তাহে শুরু হতে পারে টিকাদান কর্মসূচী।
তিনি আরও
জানান- আমরা প্রথম সারির ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন
নম্বরসহ চাহিদাপত্র নিয়েছি। সেই চাহিদাপত্র পর্যালোচনা করে আনুপাতিক হারে
জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ করা হবে।
এদিকে, করোনা ভ্যাকসিন
গ্রহণ নিয়ে ডাক্তার, নার্স, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,
সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছে নানা আলোচনা। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভ্যাকসিন
প্রদানের ক্ষেত্রে ফ্রন্ট লাইনারদের অধিক গুরুত্ব দিলেও তাদের কেউ গ্রহণ
করতে চান আবার কেউবা অনীহা প্রকাশ করছেন।
গত শনিবার ও রবিবার কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার ফ্রন্টলাইনারদের সাথে আলোচনা করলে এ তথ্য জানা যায়।
সরকারি
নির্দেশনায় বাধ্য হয়ে বিভিন্ন দপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা
পাঠালেও অনেক কর্মকর্তা ওই টিকা গ্রহণে সংকোচ বোধ করছেন। আর জেলার বিভিন্ন
উপজেলার সাংবাদিকদের মধ্যে অধিকাংশ সাংবাদিকদের তালিকা এখনও অন্তুর্ভূক্ত
হয়নি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান- ফেইসবুক ও
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখছি টিকা গ্রহণ করার পর বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিয়েছে।
তাই টিকা দিতে সাহস পাইনা। অধিকাংশ সংবাদকর্মীদেরও রয়েছে একই মনোভাব।
এ
ব্যাপারে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তণ পরিচালক ডা. মুজিবুর
রহমান জানান- ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ওই টিকা বিশ্বখ্যাত
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকারে আবিস্কৃত। এ টিকা শতভাগ পরীক্ষিত ও নিরাপদ। এ
টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম।
এই টিকার দাম কম হওয়ার মূল কারণ
হচ্ছে- অক্সফোর্ডে আবিস্কৃত ফর্মুলা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। অপরদিকে
ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট ভ্যাকসিন উৎপাদনের ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। যে কারণে এ
ভ্যাক্সিনের দাম তুলনা মূলক কম। আমি নিজেও ওই ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য
প্রথমদিনই রেজিস্ট্রেশন করেছি। তাই সকলকে নির্ভয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য
পরামর্শ দিচ্ছি।