ভারতের
সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে তিন কোটি ডোজ টিকা
কেনা হয়েছে, তার মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ টিকার প্রথম চালান এসেছে গত ২৫ জানুয়ারি।
বাকি টিকাগুলোও ধারাবাহিকভাবে আসতে থাকবে। এ ছাড়া ভারত উপহার হিসেবে
দিয়েছে আরো ২০ লাখ ডোজ টিকা। ফলে ৭০ লাখ টিকা এখন আমাদের হাতে আছে। এর
মধ্যে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি। বাকি ১০ লাখ
হাতে রাখা হবে দ্বিতীয় ডোজের সুবিধার জন্য। এরই মধ্যে ৬১ জেলায় টিকা
পৌঁছেও গেছে। সরকার দুই সপ্তাহে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার ল্যমাত্রা
নির্ধারণ করেছে। কিন্তু টিকার জন্য নাম নিবন্ধন যে ধীরগতিতে চলছে, তাতে এই
ল্যমাত্রা অর্জন হবে কি? প্রকাশিত খবর অনুযায়ী রবিবার বিকেল পর্যন্ত চার
দিনে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ১৭ হাজার মানুষ। নিবন্ধনের এই গতিতে হতাশা
প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা প্রচার-প্রচারণা বাড়ানোর
পাশাপাশি নিবন্ধনের গতি দ্রুততর করার ওপর জোর দিয়েছেন।
করোনা মহামারি
সারা পৃথিবীতে যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে বিজ্ঞানীরা এখনো সন্দিহান এটি কত
দিনে, কিভাবে ও কী পরিমাণে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। তাঁরা দ্রুততম সময়ে সমগ্র
জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, কোনো জনগোষ্ঠী
বা কিছু মানুষকে টিকার বাইরে রেখে এই ভাইরাসের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
তাতে কয়েক হাজার কোটি টিকার প্রয়োজন হতে পারে। বাংলাদেশে ১৮ বছরের কম বয়সী
ও গর্ভবতীদের বাদ দিলে প্রায় ১০ কোটি মানুষকে ২০ কোটি ডোজ টিকা দিতে হবে।
সে কাজটি ছয় মাসের মধ্যে করা গেলে সবচেয়ে ভালো হতো। কারণ কোনো মানুষের
শরীরে টিকার কার্যকারিতা ছয় মাসের মতো থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায়
ছয় মাসে তা করা প্রায় অসম্ভব। আর এখন যে হারে নিবন্ধন হচ্ছে, তাতে ছয় মাসে
এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ আছে। বিশেষজ্ঞরা
নিবন্ধনপ্রক্রিয়া আরো সহজ করতে বলেছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, আগাম নিবন্ধনের
প্রয়োজনই নেই। যে কেউ তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কেন্দ্রে চলে আসবেন এবং
টিকা নিয়ে চলে যাবেন।
টিকা সম্পর্কে মানুষের ধারণা খুব স্পষ্ট নয়। ভুল
ধারণাও রয়েছে অনেকের মধ্যে। অনেকে বুঝে-না বুঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। আবার
এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতিকেও টেনে আনছেন। এ অবস্থায় টিকা নেবে কী নেবে না
তা নিয়ে মানুষের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে। এই দ্বিধা কাটাতে টিকার
কার্যকারিতা, প্রয়োজন, টিকা না নেওয়ার বিপদ ইত্যাদি বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত
তথ্য তুলে ধরতে হবে। কারণ টিকা কার্যক্রম সফল করার জন্য মানুষের স্বেচ্ছায়
এগিয়ে আসাটা জরুরি। আমাদের মনে রাখতে হবে, যত বেশি মানুষ টিকার আওতায় আসবে,
টিকা কার্যক্রম তত বেশি সফল হবে। আর তা না হলে এই মহামারি দূর করাও প্রায়
অসম্ভব হয়ে উঠবে।