হত্যার সাড়ে ৬ বছর পর গ্রেফতার
Published : Thursday, 11 February, 2021 at 12:00 AM
প্রায় সাড়ে ছয় বছর আগে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী টোলপ্লাজা গোলচত্বরের কাছে নির্জন জায়গায় ডাকাতদের হামলার শিকার হয়ে মারা গিয়েছিলেন ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম লাভলু। গুরুতর জখম হয়েছিলেন তার খালাতো ভাই মোস্তাকিন মনোয়ার ইশতিয়াক। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আ. রাজ্জাক বাবলু বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা করেন।
তবে দীর্ঘদিনেও এ ঘটনার মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ ও সিআইডি।
অবশেষে মামলাটির তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত ৮ জানুয়ারি এ ঘটনার মূলহোতাদের গ্রেফতারের পর হত্যাকা-ের রহস্যও উদঘাটিত হয়েছে বলে বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জানিয়েছে পিবিআই।
এ ঘটনায় গ্রেফতার দুজন হলেন- মো. পলাশ মিয়া ও তসলিম খাঁ। এর আগে এ হত্যা মামলায় আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
ঘটনার দিন (২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ব্যবসায়িক কাজ শেষে খালাতো ভাই মোস্তকিন মনোয়ার ইশতিয়াককে সঙ্গে নিয়ে পাকশী চায়না কটেজ থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন লাভলু। পথিমধ্যে পাকশী টোলপ্লাজা গোলচত্বরের কাছে রাস্তায় রশি বেঁধে তাদের পথরোধ করে ডাকাতরা। তাদেরকে মারধর করে, কুপিয়ে, হাত-পা বেঁধে রেল লাইনের ধারে ফেলে রেখে মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা নিয়ে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।
ধারালো অস্ত্রের জখমে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে পরদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান লাভলু। পরদিন একই জায়গায় রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কর্মচারী আব্দুর রশিদ ও হাসানুর রেজাও একইভাবে তাদের কবলে পড়েন।
লাভলু হত্যা মামলাটি প্রথমে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ তদন্ত করে। তদন্ত অফিসার নিহত লাভলুর ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ইয়াছিনকে গ্রেফতার করেন। সে সম্পর্কে অভিযুক্ত পলাশ মিয়ার শ্যালক। এদিকে, ইয়াসিনকে গ্রেফতারের পর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন পলাশ।
এরপর মামলার তদন্তভার যায় সিআইডির হাতে। তারা তদন্ত শেষে আসামি পলাশকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। কিন্তু সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে না-রাজি দাখিল করেন মামলার বাদী আ. রাজ্জাক বাবলু। এরপর আদালত মামলার তদন্তভার পিবিআইকে দেন।
পিবিআই পাবনার পুলিশ সুপার ফজলে এলাহী পুলিশ পরিদর্শক আসাদ উজ্জামানকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন।
পিবিআই কর্মকর্তা ফজলে এলাহী জানান, দায়িত্ব পাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই এ ঘটনায় জড়িত পলাশকে শনাক্ত করা হয়। তাকে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় একাধিক অভিযানও চালানো হয়। গত ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আসাদ উজ্জামানের নেতৃত্বে পিবিআইয়ের একটি টিম রাজশাহী চারঘাট উপজেলার কালাবীপাড়া এলাকা থেকে পলাশ মিয়াকে গ্রেফতার করে।
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ঘটনার আরেক অভিযুক্ত তসলিম খাঁকে ওইদিন রাতেই নাটোরের লালপুর উপজেলার চানপুর বাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতার দুজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে পাঠানো হলে ডাকাতির কবল থেকে বেঁচে যাওয়া একজন ভুক্তভোগী পলাশকে শনাক্ত করেন। এরপর তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। জিজ্ঞাসাবাদে পলাশ ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেয় এবং জড়িত অন্যান্যদের বিষয়ে তথ্য দেয়। একই সঙ্গে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা ফজলে এলাহী আরও জানান, তদন্তের স্বার্থে অন্য আসামিদের নাম এখনই প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।