তানভীর দিপু ।।
করোনাযুদ্ধে
ফ্রন্টলাইনারদের করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণের আগ্রহ কুমিল্লার
শহরাঞ্চলে যেমন বাড়ছে, তেমন সমান তালে বাড়ছে গ্রামেও। শহরের মতো গ্রামেও
করোনা ভ্যাকসিনেশন বুথে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। গত ৫ দিনে
কুমিল্লায় ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ১৯ হাজার ৭৩৫ জন। এর মধ্যে
পুরুষের সংখ্যা ১৩ হাজার ৩০৬ জন এবং নারীর সংখ্যা ৬ হাজার ৪২৯ জন।
এর মধ্যে ১৪ হাজার ৫০৫ জন ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন উপজেলা পর্যায়ে। কুমিল্লায় ভ্যাকসিনের জন্য মোট নিবন্ধন করেছেন ৪২ হাজার ৪৯৪ জন।
কুমিল্লা
জেলা প্রশাসক ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো. আবুল ফজল মীর বলেন,
‘উপজেলা পর্যায়েও ভ্যাকসিন নিতে মানুষ আসছে- এটা খুবই ভালো। আমরা কোথাও
থেকে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাইনি।’
এদিকে ভ্যাকসিনেশনের পঞ্চম
দিনে গোটা জেলায় নতুন করে করোনার টিকা নিলেন ৭ হাজার ৫৭৩ জন। এর মধ্যে
পুরুষ ৫ হাজার ৪৮ জন এবং নারী গ্রহীতার সংখ্যা ২ হাজার ৫২৫। সিভিল সার্জন
কার্যালয় থেকে পাওয়া গত ৫ দিনের তথ্য পর্যালোচনা করে জানা গেছে, কুমিল্লা
নগরী এবং উপজেলা পর্যায়ে নিবন্ধন ও ভ্যাকসিন গ্রহণের হার প্রায় সমানুপাতিক
হারেই বাড়ছে।
কুমিল্লা সিটিতে এ পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন
৪ হাজার ৪৯৪ জন। এছাড়া আদর্শ সদরে ১ হাজার ৯৮৩ জন, সদর দক্ষিণে ১ হাজার
৩২৫, লাকসামে ১ হাজার ১৪৬, বরুড়ায় ৭০৮, চান্দিনায় ৬৯২, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৪০৬,
মুরাদনগরে ৫৩০, মেঘনায় ৫৭৮, তিতাসে ৬৫০, দাউদকান্দিতে ১ হাজার ৬৩৪,
বুড়িচংয়ে ৪৪৫, নাঙ্গলকোটে ৭০৮, মনোহরগঞ্জে ৮০৭, হোমনায় ৪২৬, দেবিদ্বারে ১
হাজার ৩৫, চৌদ্দগ্রামে ১ হাজার ৪৩ ও লালমাইয়ে ৩৮৯ জন করোনা ভ্যাকসিনের
প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন।
জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর আরো বলেন,
‘আমরা ভেবেছিলাম যে শুধু শহরেই মানুষ ভ্যাকসিন নেবে। কিন্তু গ্রামেও মানুষ
ভ্যাকসিনের ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছে; ভ্যাকসিন নিয়ে যে প্রচারণা সেটি গ্রামেও
পৌঁছে গেছেÑ এটা খুবই আশাব্যঞ্জক বিষয়। আর এখনো পর্যন্ত কুমিল্লায়
ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি।’
শুরু থেকেই
কুমিল্লায় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, সাংবাদিক,
চিকিৎসক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার ফ্রন্টলাইনাররা নিবন্ধনের মাধ্যমে
ভ্যাকসিন গ্রহণ করছেন। এছাড়া সাধারণ মানুষ অনেকেই অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের
মাধ্যমে ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। দিন দিন ভ্যকাসিনে আগ্রহ বাড়তে থাকায় খুলতে
হচ্ছে নতুন নতুন বুথ। এ পর্যন্ত কুমিল্লায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে,
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, সিএমএইচ-এ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে স্থাপিত ভ্যাকসিনেশন কেন্দ্রের মাধ্যমে এই টিকা প্রদান
কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
দেবিদ্বার উপজেলার ইকবাল
হোসেন রুবেল বলেন, ‘আমি করোনা পজেটিভ হয়েছিলাম। করোনামুক্ত হবার পরও আমার
মধ্যে প্রবল আকাক্সক্ষা ও অপেক্ষা ছিলÑ কবে ভ্যাকসিন আসবে। আমি ভ্যাকসিন
নিয়ে এখন অনেকটাই হালকা বোধ করছি। করোনা নিয়ে যে একটা ভয় ছিল মনে, সেটাও
কেটে গেছে।’
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সমন্বয়ক ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী বলেন,
‘দিন দিন সাধারণ মানুষের ভয় কেটে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষের মধ্যেও এর ভালো
সাড়া পড়েছে। আমরা মাইকিং করছি, স্কুল-কলেজের শিক্ষক এবং ইউনিয়নের ওয়ার্ড
পর্যায়ে করোনা কমিটির সদস্যদের গ্রামে গ্রামে মানুষকে করোনা ভ্যাকসিন
গ্রহণে উদ্ধুদ্ধ করার জন্য বলা হয়েছে।