ইনিংসের
ছয় নম্বর বল শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের দিকে শ্যাডো ব্যাটিং করতে
করতে হাঁটছেন সৌম্য সরকার। সেই মুহূর্তে টিভি ক্যামেরা ধরা হয় ডাগআউটে বসা
প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর দিকে। তার মুখে তখন নির্লিপ্ত হাসি! ওই
মুহুর্তে তিনি কী ‘এক্সপ্রেশন’ দেবেন হয়তো নিজেই বুঝে উঠতে পারেননি। তাই
ব্যর্থ হাসিতেই যেনো প্রকাশ করছেন নিজের অনুভূতি।
বিব্রতকর, হতাশজনক,
দুর্বিষহ এবং কী লজ্জারও! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপে ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন
ব্যাখ্যাতীত। ঘরের মাঠ, চেনা পরিবেশ আর নিজেদের চাওয়া মতো উইকেট। সবকিছুই
ছিল নিজেদের, শুধু মাঠের খেলাটা ছাড়া। শরীরি ভাষায় ছিল না কোনো উত্তাপ,
যেনো রাজ্যের কান্তি ভর করেছে। খাপছাড়া একঘেয়ে বোলিং-ফিল্ডিংয়ের পর
ব্যাটিংয়েও একই হাল।
দুই দিন মিলিয়ে ৫৯০ মিনিট ফিল্ডিং করে ব্যাটিং
করতে নেমে ১১ মিনিট না পেরোতেই হারিয়ে ফেলে ২ উইকেট। চেনা মাঠ, চেনা পরিবেশ
সবকিছুই যেনো মিথ্যে বনে গেলো নিমিষেই। যে উইকেট সফরকারীদের জন্য ছিল
ব্যাটিং স্বর্গ, সেখানে স্বাগতিকদের জন্য মুহুর্তেই যেনো বনে গেলো
মৃত্যুকুপ! পেসার আলজারি জোসেফ যে উইকেটে বইয়েছেন রানের বন্যা সে উইকেটেই
ইনিংসের শুরুতে সৌম্য ফিরেছেন শূণ্য রানে, শান্ত ৪ করে। শেষ বিকেলে
মুশফিক-মিথুন দেয়াল হয়ে না দাঁড়াতো প্রশ্ন উঠতো নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে।
৪০৯
রানের জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন শেষ করে ৪ উইকেটে ১০৫
রানে। ফলোঅন এড়াতে হলে করতে হবে ২১০ রান, এখনো বাকি ১০৫। মুশফিক ২৭ ও
মিথুন ৬ রানে অপরাজিত আছেন। দুজনের পঞ্চম উইকেটের জুটি থেকে আসে ৩৪ রান।
শেষ বিকেলে ৮৯ মিনিট, ১২২ বল খেলে কোনোমতে দিন শেষ করেছেন তারা। দিন শেষে
এই ‘৮৯’ মিনিটই একমাত্র প্রাপ্তি হয়ে থাকবে ডমিঙ্গোর শিষ্যদের কাছে।
বাংলাদেশের সামনে ল্য এখন একটাই ফলোঅন এড়ানো।
ইনিংসের ষষ্ঠ বলে সৌম্যর
সাজঘরের ফেরার ৭ মিনিট পরই আলজারি জোসেফের অনেক বাইরের বল মারতে গিয়ে
বোনারের হাতে শান্ত ধরা দেন গালিতে। দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পর তামিম
ইকবাল-মুমিনুল হক ভাঙন রোধের চেষ্টা শুরু করেন । তৃতীয় উইকেটে দুজনের জুটি
যখন একটু আলো দেখাচ্ছিল তখনই বাংলাদেশ শিবেরে আবার জোড়াপতন। কর্নওয়ালের
লাফিয়ে ওঠা বল মুমিনুলের ব্যাট ছুঁয়ে জমা হয় উইকেটরক ডা সিলভার গ্লাভসে।
মুমিনুলের ২১ রানের আউটে ভেঙে যায় ৫৮ রানের জুটি। এবার ক্রিজে আসেন
মুশফিকুর রহিম। ওপেনার তামিম দিচ্ছিলেন ভালো কিছুর আভাস। সেটা অবশ্য আভাস
হয়ে থেকে যায়।
মুমিনুল আউট হওয়ার পরের ওভারেই মোসলের হাতে ধরা পড়েন
ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করতে থাকা তামিম। আউট হয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি থেকে
মাত্র ৬ রান দূরে থেকে। ৪ উইকেটের দুইটি গেছে গ্র্যাবিয়েলের পকেটে। একটি
করে সাফল্য জোসেফ ও কর্নওয়ালের।
এর আগে দিনের শুরুটা ছিল আরও বিবর্ণ।
প্রথম সেশনে তাইজুল-মিরাজদের স্পিনে ছিল না কোনো বিষ। নাঈম হাসান পুরো দিন
জুড়েই ছিলেন অকার্যকর। এক পেসার রাহীও পাননি কোনো উইকেটের দেখা। কথিত পেসার
সৌম্যকে বোলিংয়েই আনেননি অধিনায়ক মুমিনুল। প্রথম সেশনে একমাত্র সাফল্য
এনক্রুমা বোনারের উইকেট।
দিন শুরুর ৫২ মিনিটে মিরাজের বলে লেগ স্লিপে
মিথুনের দারুণ ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন। ভাঙে জশুয়া ডা সিলভার সঙ্গে গড়া ৮৮
রানের জুটি। বাংলাদেশ সফর এই ব্যাটসম্যানের জন্য আপে হয়ে থাকবে। চট্টগ্রাম
টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছেন। এবার ঢাকা
টেস্টের প্রথম ইনিংসে সাজঘরে ফেরেন ৯০ রানে। ৫ উইকেটে ২২৩ রান শুরু করা
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম সেশনে এক উইকেট হারিয়ে যোগ করে ১০২ রান।
বোনার আউট
হলেও রান বাড়াতে সমস্যা হয়নি ক্যারিবিয়ানদের। ক্রিজে থাকা আগের দিনের
অপরাজিত ব্যাটসম্যান জশুয়া ডা সিলভা পেসার আলজারি জোসেফকে নিয়ে গড়ে তোলেন
রানের দুর্গ। দুজনের জুটিতে ১৩৮ মিনিট কোনো উইকেটের দেখা পায়নি বাংলাদেশ।
৯২ রানে সিলভাকে বোল্ড করে তাইজুল ভাঙেন ১১৮ রানের জুটি। পরের ওভারের শেষ
বলেই ভয়ংকর রুপ নেওয়া জোসেফকে ফিরেয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন রাহী। এই দুজন আউট
হওয়ার পরে অতিথিদের ব্যাটিংয়ে যোগ হয় মাত্র ১৩ রান।
৩৮৪ থেকে ৪০৯ রানে
যেতে মাত্র ২৫ রান যোগ করে শেষ ৪ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় সেশন
শেষ হওয়ার ১৮ মিনিট আগে গুটিয়ে যায় ব্র্যাথওয়েটের দল। এই সেশনে তারা আরও
৮৪ রান যোগ করে। ৫ উইকেটে ২২৩ রানে দিন শুরুর পর সবকটি হারিয়ে ৪০৯ রানে
থামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় দিন দুই সেশনে তারা যোগ করে ১৮৬ রান।
বাংলাদেশের
হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট করে নেন রাহী ও তাইজুল। ১টি করে উইকেট নেন
মিরাজ-সৌম্য। উইকেটের দেখা পাননি নাঈম হাসান। তবে বাংলাদেশের বোলিংয়ে ছিল
না কোনো বৈচিত্র। বোলার নির্বাচনেও অধিনায়ক মুমিনুল দেখাতে পারেননি দতা।
সৌম্য সরকারকে বোলিংয়ে এনেছেন ৪১ ওভার পর। এভাবেই ফিল্ডিংয়ে ভুলে যাওয়ার
মতো সময় পার করে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
তবে উইকেটে রাহীর সাফল্য
আরেকজন পেসারের আপে জানান দেয়। অথচ তিনি ছিলেন না চট্টগ্রাম টেস্টে। সুযোগ
পেয়েই বুঝিয়ে দিলেন তার গায়ে কেনো লেগেছে টেস্ট বোলারের তকমা। দ্বিতীয়
পেসারের আপে এবার টিম ম্যানেজমেন্ট বুঝবেন কী?