ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
শাসনগাছা ফাইওভার
প্রবেশমুখে জটলা নিচে নরকযন্ত্রণা
Published : Friday, 19 February, 2021 at 12:00 AM, Update: 19.02.2021 2:06:15 AM
 প্রবেশমুখে জটলা নিচে নরকযন্ত্রণামাসুদ আলম ||
কুমিল্লার শাসনগাছা ফাইওভার ছিল নগরবাসীর জন্য এক স্বস্তির নিঃশ^াস। নগরীর অন্যতম প্রবেশদ্বার শাসনগাছা ফাইওভার নির্মাণের ফলে এই এলাকার চিরচেনা যানজট আর জনদুর্ভোগের চিত্র পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু স্বস্তির এই ফাইওভারের প্রবেশমুখে গণপরিবহনের পার্কিং এবং সিএনজি অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড  সৃষ্টি করছে দুঃসহ জনভোগান্তির।
নগরবাসীর অভিযোগ, ফাইওভারের পশ্চিম পাশের প্রবেশমুখের একপাশে গণপরিহনের পার্কিং এবং অন্যপাশে সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড বসিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল কৃত্রিম জনভোগান্তির সৃষ্টি করেছে। এতে ফাইওভারে উঠতে ও নামতে যানজটে পড়তে হচ্ছে সব যানবাহনকে। প্রায় সময়ই ফাইওভারের মাঝখান থেকে শুরু হয় দীর্ঘ যানজট। যার কারণে শাসনগাছা ফাইওভারের সেই কাক্সিক্ষত সুফল পাচ্ছেন না মহানগরবাসী। তারা এই সমস্যা লাঘবের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
কিছু দিন আগে কুমিল্লার দুর্গাপুরে রয়েল কোচ বাসের এক সার্ভিসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কুমিল্লা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও শাসনগাছার স্থানীয় বাসিন্দা আহমেদ নিয়াজ পাবেল বলেছিলেন, শাসনগাছায় ফাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য; ভোগান্তি সৃষ্টির জন্য নয়। ফাইওভারের প্রবেশমুখে অবৈধভাবে সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড বসানোয় প্রতিদিন নগরবাসীকে দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়তে হচ্ছে। স্ট্যান্ড স্থাপন করে কৃত্রিম যানজট স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি জোর দাবি জানান।
ওই বক্তব্যের সময় কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত উপস্থিত ছিলেন ওই বাস সার্ভিস উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে।  
শাসনগাছায় যানজট নিরসনে ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৩১.২৯ মিটার দীর্ঘ ফাইওভারটি নির্মাণ করা হলেও নিচে রয়ে গেছে ভাঙা সড়ক, ফুটপাত দখল, কাদাপানি আর যানজটের সঙ্গে সেই পুরোনো নরকযন্ত্রণা। সরেজমিনে শাসনগাছা ফাইওভারের নিচে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস আটকে আছে ফাইওভারের সরু গলিতে। শাসনগাছা বাস স্ট্যান্ডজুড়ে  লোমেলো দাঁড়িয়ে আছে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার। এক চুল নড়াচড়া করতে পারছে না গাড়িগুলো। ট্রাফিক পুলিশকে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন বাসচালক বলেন, ‘পৌনে দুই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চলে আসছি। কিন্তু আধঘণ্টা লাগছে ফাইওভারের পশ্চিমপাশ থেকে শাসনগাছা কাউন্টারে বাসটারে নিয়ে যেতে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট সময় লাগে ফাইওভারের নিচের জায়গা পার হতে। এত গাড়ি এই সরু রাস্তা দিয়ে কেমনে পার হয়? তার ওপর রাস্তা ভাঙা। বাস একবার এদিক কাত হয় তো আরেকবার ওদিকে কাত হয়। কী যে যন্ত্রণায় আছি!’
পাপিয়া পরিবহনের বাসযাত্রী ব্যাংকার খলিলুর রহমান প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টায় এখানে আসেন। বাসে উঠে যানজট পার হয়ে শাসনগাছা থেকে বের হতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে। এরপর চান্দিনায় তার কর্মস্থলে পৌঁছান। শুধু শাসনগাছা ফাইওভারের নিচের যানজটের জন্য তিনি সঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারেন না।
ফাইওভারের দুই পাশে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। সরু পথ দিয়ে যাত্রীবাহী বাস একদিক দিয়ে প্রবেশ করলে অন্যদিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ সময় আটকে থাকে যাত্রী বহনকারী যানবাহন। ফুটপাতজুড়ে হকারদের দখল। বিশেষ করে বাদশা মিয়া বাজার মোড়ে পুরোটাই হকারদের দখলে। ণে ণে যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়াও ওই মোড়টিতে রয়েছে একটি সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। হকার আর সিএনজি অটোরিকশার দখলে বাদশা মিয়া বাজারের মোড় অংশটি। যানজট লাগলে ওই সড়ক দিয়ে পথচারীদের হাঁটাচলা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
আবু হানিফ নামের একজন সিএনজি অটোরিকশাচালক বললেন, ‘বাদশা মিয়া বাজার মোড়ে প্রতিদিন আমরা টাকা দিই। তাই এখান থেকে যাত্রী তুলে পারাপার করি।’
কে নেয় এই টাকাÑ এমন প্রশ্নে আবু হানিফ বলেন, তাদের নাম বলতে পারবো না। টাকা দিই, টোকেন দেয়।’
ফাইওভারের নিচে যানজট নিরসনে কাজ করা এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, পুরো ফাইওভারের নিচে রাস্তায় ফুটপাত দখল করে আছে হকাররা। এমন সমস্যায় কিভাবে যানজট নিরসন করা যায়?
কুমিল্লার বাস মালিক সমিতির মহাসচিব মো. তাজুল ইসলাম বলেন, শাসনগাছা ফাইওভারের নিচে কুমিল্লা, ঢাকাসহ আন্তঃজেলা সকল বাস সার্ভিসের টার্মিনাল ও স্ট্যান্ড। ফাইওভারের পশ্চিম দিকের দুইপাশের প্রবেশপথগুলো খুবই সরু। এছাড়া খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে সড়কে। এই ফাইওভারের নিচে বুড়িচং সড়ক, ধর্মপুর সড়কসহ চারদিকের প্রতিটি সড়কে ফুটপাত এবং রাস্তা দখল করে অবৈধ দোকানপাট নির্মাণ করে আছে। এইসব কারণে এই ফাইওভারের নিচে শৃঙ্খলা আসছে না। এখন আবার দেখছি, টার্মিনালের প্রবেশপথ এবং ফাইওভারের মুখে সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড বসানো হয়েছে। এর কারণে ফাইওভারের পশ্চিম পাশের মুখের যানজট আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি হচ্ছে, বাস টার্মিনালের অভ্যন্তরে গর্ত ভরাট, অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ এবং গর্ত ও খানাখন্দে ভরা সড়ক মেরামত করা হোক। এছাড়া প্রশাসনকে বলবো, যানজট নিরসনে সড়কের উপরে যাতে দাাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী উঠা-নামা করাতে না পাওে, সেইজন্য কমিউনিটি পুলিশ নিয়োগ দেয়া হোক। তাদের মাসিক বেতন জেলা বাস মালিক সমিতি দেবে।’
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মো. আহাদ উল্লাহ বলেন, সড়ক সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে শাসনগাছা এলাকায় যানজট কমাতে হলে বাস স্ট্যান্ডটিকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। এর বিকল্প নেই।