
বিশেষ
প্রতিবেদক: জুয়েল রানা ও রাসেল রানা। অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তান হয়ে জন্ম
নেওয়ায় মাধ্যমিকের গন্ডি অতিক্রম করেই চাকুরীর উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়েন দুই
সহোদর।
এক বোনকে বিবাহ দেওয়ার সুবাদে নবম শ্রেণীতে পড়–য়া অপর ছোট বোনকে
নিয়ে বাড়িতে বসবাস করছেন বৃদ্ধ মা ও বাবা। বাহিরে ঘুরে চাকুরী করে অকান্ত
পরিশ্রম করে মাস শেষে বাড়ি এসে যেখানে বৃদ্ধ মা-বাবার মুখের হাসি দেখে সারা
মাসের পরিশ্রম ঘুচবেন সেখানে বাড়ি এসে প্রতিনিয়ত দেখতে হয় মা-বাবা ও
একমাত্র বোনের চোখে মুখে কান্না!
জুয়েল রানা ও রাসেল রানা কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ভানী ইউনিয়নের সূর্র্র্য্যপুর গ্রামের আমির হোসেন এর ছেলে।
একের
পর এক প্রতিপক্ষের হামলা-মামলায় দিশেহারা হয়ে পরেছে পরিবারটি। প্রতিপক্ষের
লোকজন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরোয়া না করে দুই সহোদরের পরিবারের
লোকজনের উপর হামলা করে আহত করার পরও একের পর এক মামলা করে চলছে বলে অভিযোগ
উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে ও মামলার এজাহারে জানা যায়- দুই সহোদরের পিতা
ষাট বছর বয়সী আমির হোসেন নিজের পুকুরে পানি সেচ করার অবস্থায় ১৩ ফেব্রুয়ারী
রাত ৮টার সময় প্রতিপক্ষ আবু মুসা ও আবু ইউসুফ লোকজন নিয়ে এসে বৃদ্ধ আমির
হোসেন এর উপর অতর্কিত হামলা করে। এসময় দুই সহোদরের মা ও বোন এগিয়ে আসলে
তাদেরকেও উপর্যুপরি আঘাত করে। এসময় স্থানীয় লোকজন এসে তাদেরকে উদ্ধার করে
চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে ভর্তি করান। এসময় ঘটনায় জুয়েল রানা বাদী হয়ে হামলাকারীদের আসামী
করে গত ১৬ ফেব্রুয়ারী দেবীদ্বার থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার একদিন
পর ১৮ ফেব্রুয়ারী প্রতিপক্ষের লোকজন বাদী হয়ে আহতদের ও চাকুরীতে কর্মরত
থাকা দুই সহোদরকে আসামী করে পাল্টা মামলা দায়ের করেন।
জুয়েল রানা
জানান- আমার দুই ভাই। অর্থাভাবে চাকুরীর সন্ধানে বাড়ি থেকে বের হয়ে
কর্মজীবন বেছে নেই। পরিবারে বৃদ্ধ মা-বাবা ও নবম শ্রেণীতে পড়–য়া বোন বসবাস
করে। আর প্রতিপক্ষরা পাঁচ ভাই। সকলেই বাড়িতে থাকেন। প্রতিপক্ষরা আমাদের
কাছে জায়গা পাইবে মর্মে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আমার পিতা বলেছেন- বিজ্ঞ
আদালতের বিচারে যদি তোমরা আমার কাছে জমি পাওনা থাক তাহলে অবশ্য আমরা দিতে
বাধ্য। কিন্তু তাতেও ক্ষান্ত হননি তারা। শুরু করেন আমার পরিবারের উপর একের
পর এক হামলা ও মামলা। তাদের ভয়ে আমি আমার পরিবারকে রক্ষা করতে বিজ্ঞ আদালতে
১০৭ ধারায় মামলা করি। ওই মামলায় প্রতিপক্ষের লোকজন বিজ্ঞ আদালতে আর কোন
হামলা-মামলা করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে আসে। পরবর্তীতে গত ৯ সেপ্টেম্বর
তুচ্ছ ঘটনায় তারা আমার মাতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বেধরক মারধর করে। ওই ঘটনায়
পিবিআই তদন্ত করে সত্যতা পেয়ে বিজ্ঞ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেন। ওই মামলা
থেকে আসামীরা জামিনে এসে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আমার পরিবারের উপর হামলা
করে। ওই হামলার ঘটনায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারী আমরা থানায় মামলা দায়ের করার পর ১৮
ফেব্রুয়ারী তারা আমরা কর্মস্থলে থাকা দুই ভাই, হাসপাতালে ভর্তি থাকা আমার
পিতাকে আসামীকে করে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। ইতিপূর্বে তারা আরও এমন
মিথ্যা মামলা করে আমাদের হয়রানি করে আসছে।
জুয়েল রানা হতাশা হয়ে বলেন-
তারাই হামলা করে, আবার তারাই মিথ্যা মামলা করে চলছে। এখন আমরা চাকুরী করবো,
নাকি বাড়িতে থেকে মা-বাবাকে পাহারা দিব? তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে
আমি প্রশাসনের দৃষ্ট আকর্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে আবুমুসার মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
ভানী
ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. নবীরুল ইসলাম নবী জানান- জুয়েল
রানা ও রাসেল রানা এলাকার খুবই শান্তিপ্রিয় ছেলে। তারা চাকুরী করার সুবাদে
এক ভাই ঢাকা, আরেক ভাই কুমিল্লাতে থাকে। তাদের উপর যে ঘটনা গুলো হচ্ছে তা
খুবই দুঃখ জনক। জায়গা সম্পত্তির বিষয়ে আবু মুসা, ইউনুছ মিয়ারা যে অভিযোগ
করেছেন আমরা চেয়েছিলাম এলাকায় বসে তা মিমাংসা করে দেই। তাতে জুয়েল রানারা
রাজিও ছিল। কিন্তু রাজি হয়নি প্রতিপক্ষরা। তারা বাড়িতেও থাকে না, তারপরও
তাদেরকে মামলায় জড়িয়ে দিচ্ছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারী জুয়েল রানার পরিবারের
হামলার ঘটনা হৃদয় বিদারক।
ভানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো.
নূরুজ্জামান মুকুল ভূইয়া জানান- স্থানীয় ভাবে খোঁজ নিয়ে যতটুকু জেনেছি,
আমির হোসেন এর পরিবারের উপর অন্যায় ভাবে হামলা-মামলা করা হচ্ছে। গত ১৩
ফেব্রুয়ারীর ঘটনায় আমির হোসেন মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন
রয়েছে।